৬০ বছর আগে ঐতিহাসিক ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ ভাষণের মধ্য দিয়ে বৈষম্য বিরোধী এক যুক্তরাষ্ট্রের আশাবাদ জানিয়েছিলেন মার্টিন লুথার কিং। আলোড়ন তৈরিকারী সেই বক্তব্যের জেরেই প্রণয়ন করা হয়েছিলো মানবাধিকার ও ভোটাধিকার আইন। তবে ছয় দশক পরও প্রতিষ্ঠা হয়নি বৈষম্যমুক্ত সমাজ। এখনও প্রতিনিয়ত বর্ণবৈষম্যের শিকার হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশটির বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। কেবল জাতিগত বিদ্বেষের কারণে অহরহ ঘটছে বন্দুক সহিংসতার ঘটনা।
১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট। বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সারাদেশ থেকে ওয়াশিংটনের পথে ফ্রিডম মার্চে অংশ নেয় লাখো মানুষ। কৃষ্ণাঙ্গদের সম অধিকার আদায়ের দাবিতে লিংকন মেমোরিয়ালের সামনে জড়ো হন তারা। কৃষ্ণাঙ্গদের সম অধিকার আদায়ের দাবিতে আড়াই লাখ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন ওই সমাবেশে। সেখানেই ইতিহাস সৃষ্টি করা ভাষণ দেন মানবাধিকার কর্মী ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। তিনি এমন এক আমেরিকার স্বপ্নের কথা বলেন, যেখানে সবাই হবে সমান।
দিনটি স্মরণে প্রতিবছর নানা অনুষ্ঠান থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। মার্টিন লুথার কিংয়ের বিখ্যাত ভাষণের ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ওয়াশিংটনে হয় বিশাল আয়োজন। বর্ণ, গোত্র, জাতি, লিঙ্গভেদে বৈষম্যের বিরোধিতা জানান হাজারো মানুষ। উপস্থিত ছিলেন লুথার কিংয়ের ছেলে ও ছেলের স্ত্রী, নাতনি।
মার্টিন লুথার কিংয়ের ছেলের স্ত্রী আন্দ্রেয়া ওয়াটারস কিং বলেন, জাতি আর গণতন্ত্রের আত্মাকে মুক্ত করতে এসেছি আমরা। তাদের কাছ থেকে, যারা আমাদের সামনে এগোনোর চেয়ে পিছিয়ে দিতে চায়। যারা আমাদের জন্য লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে, তাদের সাথে আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না।
মানবাধিকারকর্মী এএল শার্পটন বলেন, ৬০ বছর আগে এক স্বপ্নের কথা বলেছিলেন মার্টিন লুথার কিং। এখনও আমরা স্বপ্ন দেখি। তবে সমস্যা হলো, এখনও পরিকল্পনাকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে আমাদের।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ছেলে মার্টিন লুথার কিং থ্রি বলেন, দেশ যেদিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আমি। এটা কি উপলব্ধি করছি যে, আমরা জনগনই পারি পরিবর্তন আনতে? ইতিহাসকে সঠিক পথে নিতে? পুরো দেশে যেন ঘৃণা আর শত্রুতা ছড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে?
১৯৬৪ সালে নোবেল পদকে ভূষিত হন মার্টিন লুথার কিং। ১৯৬৮ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। জীবন দিলেও যে স্বপ্ন মার্টিন লুথার কিং দেখেছিলেন, তা পূরণ হয়নি এখনও। ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ ভাষণের ৬০তম বার্ষিকীতে ওয়াশিংটনের বিশাল আয়োজনের দিনও বর্ণবৈষম্যের শিকার হয়ে তিন কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হয় ফ্লোরিডায়।
/এএম
Leave a reply