ফেসবুকে বিজয়ের আবেগঘন পোস্ট

|

ছবি: সংগৃহীত

এশিয়া কাপ মিশনে বাংলাদেশের যাত্রাটা প্রায় শেষ। ফাইনালের স্বপ্ন এখন প্রায় ধূলিস্মাৎ হয়ে গেছে ব্যাটারদের হতশ্রী পারফরমেন্সে। বেঞ্চে বসেই দলের ব্যর্থতা দেখতে হয়েছে এনামুল হক বিজয়কে, পাননি ব্যাট হাতে ম্যাচ খেলার সুযোগ। টানা সুযোগ পেলেও আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি নাইম শেখ। তাতেই বিজয়কে দলে নিতে ক্রিকেট ভক্তরা জোর আওয়াজ তুলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের অফিসিয়াল ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন এনামুল হক বিজয়। তার ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

আশা করছি এই কথাগুলো আপনারা সুন্দরভাবে নিবেন, আসসালামু আলাইকুম। আমরা সবাই জানি ক্রিকেট আমাদের একটা আবেগের জায়গা। পুরো জাতি আমরা একসাথে একত্র হয়ে এটার জয় উদযাপন করি, হারলেও একইভাবে আমরা এটা কষ্ট ফিল করি। 

কিন্তু আমরা যখন কোনো কিছু সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখব অবশ্যই আমাদের খেয়াল রাখা উচিত আমরা আলোচনা করছি সাথে সমালোচনাও করছি,  কিন্তু এই আলোচনা সমালোচনা কোন মানুষকে আঘাত করছে কিনা? সে মানুষটির পরিবার পরিজন বন্ধু-বান্ধব এমনকি নিজেও সেটার সাফার হচ্ছেন কিনা? 

তার মানসিক অবস্থা কি দাঁড়াচ্ছে তা আমি কাউকে খুশি করতে যেয়ে আরেকজনকে কষ্ট দিয়ে কোন কথা বলছি সেটা আসলেও ঠিক হচ্ছে কিনা? আমাদের অবশ্যই অবশ্যই এই জিনিসগুলো মাথায় রাখা উচিত। আমি জানি আপনি সম্মানী মানুষ হয়ে আরেকজনকে অসম্মান করবেন না, অসম্মান করলে বিনিময়ে অবশ্যই সম্মান পাওয়া যায় না। যেটা কখনই ভালো হয়ে আসে না। 

ক্রিকেট শুধু আমাদের একটা আনন্দের জায়গা আসলে তা নয়, ক্রিকেটারদের কাছে ক্রিকেট শুধু আনন্দের জায়গা নয় সেটা তার রুটি রুজি। তাই সেখানে সর্বত্র দেওয়ার চেষ্টা করে ক্রিকেটাররা। অবশ্যই আপনারা আলোচনা করবেন সাথে সমালোচনাও। 

আমরা ক্রিকেট খেলি হয়তো অনেকে বিজনেস করে, চাকরি করে, কেউ গান গেয়ে, কেউ নাটক করে, বিভিন্নভাবে নিজের জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করি আমাদের বেস্টটা দেওয়ার। কখনো সফল হয় আবার কখনো হয় না। এর মানে এই না যে আমি আমার চেষ্টা বন্ধ করব। আমরা ক্রিকেটার হিসেবে চেষ্টা করতে পারি।

অনেক সময় সফল হচ্ছি অনেক সময় ব্যর্থ কিন্তু আপনাদের সহযোগিতার মাধ্যমে আপনাদের ভালো সাপোর্টের মাধ্যমে যে কোন প্লেয়ার যে কোনোভাবে অনেক মেন্টালি স্ট্রং হতে পারে আবার আপনাদের বাজে শব্দচয়নের জন্য ডাউন হয়ে যেতে পারে। অন্তত আমি আমার চারপাশে বা আমার আশপাশে এরকম মানুষদের চায় না, যে মানুষগুলো আমার কলিগ, আমার সাথে যারা খেলছেন, আমার সাথে যারা আছেন তাদের নামে তাদের যে কোন ধরনের নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট ফেলুক এবং আমি যাদের সাথে চলছি তাদের কোন নেগেটিভ জিনিস আমার কাছে আসুক এবং আমরা এখন যখন টিম হিসেবে খেলি তখন আমরা ফ্যামিলিও।

আমাদের সবার জীবনেই ভালো এবং খারাপের মিশ্রণ থাকে যেটা আমরা সব সময় দেখি। ডিপ্রেশন সবার মধ্যেই বিরাজমান- কেউ আমায় বলতে পারব না আমি খুবই শান্তিতে আছি, ভালো আছি, দারুণ আছি। তো আমরা আমাদের ডিপ্রেশনটাকে অন্য মানুষের দিকে ছুড়ে না দেই। আমরা আমাদের জায়গা থেকে আমাদের বেস্ট হওয়ার চেষ্টা করি। তাহলে অটোমেটিকালি আমরা জাতি হিসেবে অনেকদূর আগাতে পারব বলে আমার মনে হয়। 

আমি আমার ফ্রেন্ড আমি আমার ফ্যামিলি আমি আমার পরিবারকে যথেষ্টভাবে সাপোর্ট করি এবং করতে চাই। ফেসবুকের মাধ্যমে আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি এতটুকু জানাতে পারি আপনারা যখনই কোন কিছু লিখবেন, যখনই কোন কিছু বলবেন, আপনাদের শতভাগ স্বাধীনতা আছে। কিন্তু এতটুকু দেখা উচিত আপনি যাদের উদ্দেশ্যে বলছেন তার পরিবারও এটা দেখছে, সেও দেখবে, তার বন্ধু মহল দেখবে, সবাই দেখবে। এতে আপনি তাকে সম্মান করছেন নাকি অসম্মান করছেন নাকি আলোচনা নাকি সমালোচনা আপনিও এটা অবশ্যই মাথায় রেখে আপনার কথাগুলো পেশ করবেন৷ আমাদের ছেলে, আমাদের দেশের মানুষ,  আমরা সবাই এক।

আশা করি আমার কথাগুলো আপনারা বুঝতে পারবেন। আমি আসলে কি জন্য কেনইবা বলছি আজকে আমি জানি। হয়তো আমার নামে অনেক বাহবা শুনছি সেই মানুষের মুখ থেকে যখন আমি কিছুদিন পর খারাপ কিছু শুনব আমি আসলে এটা নিতে পারব কিনা? এখন আমি যখন আমার জায়গার অবস্থা আমার অবস্থানটা জাস্ট চিন্তা করছি, যে অবস্থানটা তো আমারও আসতে পারে, তখন আমি আসলে চিন্তাই করতে পারি যে, কথাগুলো অবশ্যই আমাকে বলা উচিত। আমি যদি এখন এটাকে সাপোর্ট করি অবশ্যই এর ফল আমাকে নিজেকে পেতে হবে।

আমি চাইনা আমার ফেসবুকে যারা আছেন তারা এ ধরনের কোন কমেন্টস করেন। ভালো কিছু না বলা যাক বাট চুপ থাকাটাই অনেক সময় সবার জন্য মঙ্গল। আমি আমার চারপাশের মানুষজনগুলো কিভাবে দেখতে চাই, এভাবেই ভাবতে চাই, বাকিটা অবশ্যই আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। আপনারা আপনাদের মতো করে চিন্তা করুন যে আমার কথাগুলো যদি মনে হয় সঠিক আপনারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷ যদি মনে হয় আমি ঠিক বলছি না, আপনাদের সিদ্ধান্ত অবশ্য আপনার অটুট থাকুন।

কিন্তু আপনি আমার বন্ধু হোন তাহলে আমি এরকম নেগেটিভ মেন্টালিটির মানুষদের জায়গা দিতে চাই না, যারা অন্যদেরকে অসম্মান করে কথা বলে, আজেবাজে কথা বলে। আমি যাদের সাথে আছি যাদের সাথে চলছি যাদের সাথে থাকব তারা যেন পজিটিভ মেন্টালিটির হয়। আমি আমার পাশে এরকম মানুষকে রাখতে চাই না, যে আমার বন্ধু যার সাথে আমি খেলছি যার সাথে আমি খেলব, তাদের নামে কোনো নেগেটিভ বিষয়ে আমার কাছে আসুক।

আমি তাদের সাথে ফ্যামিলি হয়ে খেলছি, ফ্যামিলি হয়ে খেলতে চাই আর ফ্যামিলির কোনো কিছু ফ্যামিলির মাধ্যমেই ফ্যামিলির সবার সাথে ডিসকাস করে ঠিক করতে হয়। অন্যকে অসম্মান করে আপনি সম্মানিত হতে পারবেন না। আমার মনে হয় যদি আপনি সম্মান না দিতে চান চুপ থাকাটাই ভালো কিন্তু অসম্মান করাটা অবশ্যই কাম্য না।

আমরা যাদের অসম্মান করছি ঘুরেফিরে এটা আমাদের উপরেও পড়তে পারে, হয়তো আমরা এমন কোন সেক্টরে আছি, যেখানে আমরা অসম্মানিত হতে পারি। যে কোনো সময় কর্ম নাকি ফেরত আসে, এটাও কিন্তু সত্য। তা আমরাও যে কথাগুলো বলছি, যা করছি, আজকে আপনার কাছে মনে হচ্ছে আপনি যাকে হাসির পাত্র বানালেন কিছুদিন পরে যে আপনি কোন জায়গাতে আপনি হাসির পাত্র হবেন না বা আপনার সম্মানহানি হবে না- সেটার গ্যারান্টি তো আপনিও দিতে পারবেন না। 

তাই আমি চাই আপনার মাধ্যমে কেউ হাসির পাত্র না হোক, আপনার মাধ্যমে কেউ অপমানিত না হোক, আপনার মাধ্যমে কেউ যেন মানসিকভাবে কষ্টে না থাকুক, তার পরিবার এবং তার ফ্রেন্ড সবাই যেন তাকে সেফ মনে করে। এটা আমাদের নিজেদেরই দায়িত্ব। আমরা যেন এটা ফিল করাতে পারি আমরা জাতি হিসেবে আসলে এক। 

কাউকেই আলাদা করা সম্ভব না, আমরা সবাই এক। আমার এই কথার মাধ্যমে কাউকে যদি কষ্ট দিয়ে থাকি আমি অবশ্যই দুঃখ প্রকাশ করছি এবং মাফ চাচ্ছি। আমি আশা করি আমার মনের কথাটা আপনাদের বুঝাতে পেরেছি। আল্লাহ আপনাদের সবার ভালো করুক।

এশিয়া কাপের আগমুহূর্তে জ্বরের কারণে ছিটকে যান লিটন দাস। তার পরিবর্তে হুট করে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ টাইগার্সের দলে থাকা বিজয়কে এশিয়া কাপ স্কোয়াডে ডেকে নেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গেছে ওপেনিং জুটি। কিন্তু সে অর্থে সফলতা মেলেনি। তবুও সুযোগ হাতে ধরা দেয়নি বিজয়ের।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply