টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলে বাংলাদেশকে হারালো ইংল্যান্ড

|

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপের নিজেদের দ্বিতীয় ও শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে আগে ব্যাট করে মেহেদি হাসান মিরাজের ৭৪ রানের ইনিংসের উপর ভর করে ৩৭ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮৮ রান করে বাংলাদেশ। বৃষ্টি আইনে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯৭ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাটিং করে ইংলিশরা। মাত্র ২৪ দশমিক ১ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাটলারের দল।

সোমবার (২ অক্টোবর) ভারতের গুয়াহাটি বারসাপারা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দেয়া ১৯৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই টাইগারদের সাফল্য এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টারের বলে স্লিপে তানজিদ হাসান তামিমের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ইংলিশ ওপেনার ডেভিড মালান। মাত্র ৯ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

মালান ফিরে গেলেও বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধোনা করছিলেন জনি বেয়ারস্টো। অবশ্য তাকে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি মোস্তাফিজ। নিজের তৃতীয় ওভারে এসে প্রথম বলেই তাকে বোল্ড করেন কাটার মাস্টার। ফুলার লেন্থে করা বলে বেয়ারস্টোর লেগ স্টাম্প ভেঙে দিয়েছেন মোস্তাফিজ। ফলে শেষ হয় বেয়ারস্টোর ২১ বলে ৩৪ রানের ঝড়ো ইনিংস। তার বিদায়ে ৪.১ ওভারে ৫১ রানে ২ ওপেনারের উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

এরপর ক্রিজে আসা হ্যারি ব্রুককে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি হাসান মাহমুদ। গুড ল্যান্থের ডেলিভারিতে ব্রুকের অফ স্টাম্প গুঁড়িয়ে দেন এই টাইগার পেসার। ১৫ বলে ১৭ রানে সাজঘরে ফেরেন ইংলিশ এই ব্যাটার।

ক্রিজে নেমেই ঝড়ো ব্যাটিং শুরু করেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। তার ঝড় থামিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। অফ স্টাম্পের বাইরে করা শর্ট ডেলিভারিতে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন বাটলার। সীমানার কাছে অনায়াসে তাকে তালুবন্দি করেন তাওহিদ হৃদয়। ফলে ৩০ রান করেই ফিরতে হয় বাটলারকে। এরপর লিয়াম লিভিংস্টোনকে থিতু হতে দেননি তাসকিন আহমেদ। তার লেন্থ বলে মিড অফে নাজমুল হোসেন শান্তর ডাইভিং ক্যাচে আউট হন লিভিংস্টোন। তার ব্যাট থেকে আসে ১১ বলে ৭ রান।

এরপর দলের হাল ধরেন দুই ইংলিশ অভিজ্ঞ ব্যাটার জো রুট ও মঈন আলী। রুট সতর্কতার সাথে ব্যাট চালালেও অন্যপ্রান্তে রীতিমতো ঝড় তুলেন মঈন। মাত্র ৩৭ বলে অর্ধশতক তুলে নেন এই ইংলিশ অলরাউন্ডার। ফিফটির পর মঈনকে সাজঘরে ফেরান নাসুম। এরপর বাকি কাজটুকু সারেন রুট। শেষ পর্যন্ত ৭৭ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় ইংলিশরা।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট পান মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়াও ১টি করে উইকেট তুলে নেন তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।

এর আগে, টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারায় টাইগাররা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম ছয় বলে পাঁচ রান করে রিচ টপলির বলে সাজঘরে ফেরেন লিটন।

পঞ্চম ওভারের শেষ বলে টপলির দ্বিতীয় শিকার হন এই ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া শান্ত। ১০ বলে ২ রানে থার্ড ম্যান প্রান্তে দাঁড়ানো অ্যাটকিনসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপর তামিম-মিরাজ জুটি দলকে টেনে তোলেন। তবে ব্যক্তিগত অর্ধশতকের মাত্র ৫ রান দূরে থেকে মার্ক উডের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। ৪৪ বলে ৪৫ রানের ইনিংসটি ৭ চার ও এক ছক্কায় সাজান তামিম। বিদায়ের আগে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়েন ৫২ রানের জুটি।

তবে এই ম্যাচে রান পাননি অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। আদিল রশিদের বলে বোল্ড হওয়ার আগে করেন ১৫ বলে মাত্র ৮ রান। ভালো শুরুর আভাস দিয়েও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২১ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৮ রানে আদিল রশিদের বলে লিভিংস্টোনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ১৩৮ রানে পাঁচ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর বৃষ্টির কারণে লম্বা সময়ের জন্য বন্ধ থাকে খেলা। বৃষ্টি থামলে প্রায় তিন ঘণ্টা পর শুরু হয় ম্যাচটি। প্রথম দফায় ১০ ওভার কেটে নিয়েছিলেন আম্পায়াররা। দ্বিতীয় দফায় কাঁটা যায় আরও ৩ ওভার। ফলে ম্যাচ গড়ায় ৩৭ ওভারে। ম্যাচ শুরুর পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি তাওহিদ হৃদয়। স্যাম কারানের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে বল সোজা চলে যায় শর্ট কাভারে থাকা জো রুটের হাতে। 

একপ্রান্ত আগলে রাখা মিরাজের দারুণ ইনিংস থামান ডেভিড উইলি। মিরাজ পা বাড়িয়ে বড় শটের লক্ষ্যে ছিলেন। তবে উইলির বল ব্যাটে-বলে করতে পারেননি তিনি। পরের বলে নাসুম আহমেদকেও বোল্ড করেন উইলি। শর্ট অফ লেন্থ ডেলিভারিতে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন এই ব্যাটার। পরের ওভারে শেখ মেহেদীকে ইয়র্কার ডেলিভারিতে বোল্ড করেন রিচ টপলি।

ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার রিস টপলি।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply