ফারহানা ন্যান্সি:
গেট দিয়ে ঢুকতেই মনে হবে চোখে শান্তির পরশ দিচ্ছে সবুজ জড়ানো ক্যাম্পাস। একটু এগিয়ে বাম পাশে তাকালেই দেখা যাবে ক্যামেরা হাতে মুচকি হাসছেন এক ভদ্রলোক, যিনি আপনাকে সিনেমার নেশায় জড়াতে মুখিয়ে আছেন।
বলছিলাম, কলকাতার সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের কথা। যেখানে নানান দেশ, সংস্কৃতি, ভাষার একদল তরুণ-তরুণী সিনেমাকে ভালোবেসে এলোমেলো ভাবনার আবাস গড়েছে। প্রশাসনিক ভবনের দিকে আগালে চারপাশ থেকে উঁকি দিবে, সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন চরিত্ররা। চরিত্রের রঙগুলো যে কারো মস্তিষ্কে নাড়া দেবে নিঃসন্দেহে। ক্যাম্পাসজুড়ে দেয়ালগুলো যেনো আপনার সাথে কথা বলে উঠছে, অধিকার নিয়ে গল্প করতে চাইছে। সেখানে আধিপত্য নিয়ে আছে দুর্গা, চুনীবালা, চারুলতা কিংবা অপু অথবা নায়কের চরিত্র।
সেখানকার সিনেমাপ্রেমী শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীলতা খুঁজে পাওয়া যাবে দেয়ালে দেয়ালে; যেখানে নারীর দৃপ্ত উচ্চারণ, আবছা আলোয় সমাজের শেকল ভাঙার শব্দ, সম্পর্কের বন্ধন কিংবা টানাপোড়েন, ভালবাসার নানা রঙের প্রকারভেদ অথবা প্রতিবাদের উচ্চ সুর। এখান থেকে শিক্ষার্থীদের হাত ধরে ইনস্টিটিউট প্রযোজিত চলচ্চিত্র প্রায় হাজারের বেশি। পুরস্কারের পাল্লায় যোগ হয়েছে ১৯টি জাতীয় পুরস্কার। আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রয়েছে দখল।
সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউটে শুধু সিনেমা সৃষ্টির আদ্যোপান্ত শেখানো হয় না, সত্যজিৎ রায়ের বা ঋত্বিক ঘটকদের উত্তরসূরি তৈরিতে দেয়া হয় বৃত্তি। এমনকি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে শিক্ষাজীবনে সিনেমা বানাতে সরকারি আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। সাউন্ড রেকর্ডিং অ্যান্ড ডিজাইন, ডিরেকশন অ্যান্ড স্ক্রিন প্লে রাইটিং, অ্যানিমেশন সিনেমা, সিনেমাটোগ্রাফি, প্রোডিউসিং ফর ফিল্ম অ্যান্ড টিভি এবং এডিটিং— মূলত এই ছয়টি বিভাগে ৫০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন এখন।
যারা সিনেমায় বেঁচে থাকার গল্প বলতে চান কিংবা স্বপ্নের ঝুলিতে রয়েছে একটি সিনেমা বানানো, তাদেরকে তো হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো টানেন সিনেমার বরপুত্র সত্যজিৎ রায়। তাই তো সত্যজিৎ রায়ের সারথি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ থেকেও সেখানে পাড়ি জমায় শিক্ষার্থীরা।
এবার আসা যাক, সাংবাদিক হয়ে কেনো আমি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হয়েছিলাম, সে বিষয়ে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যম কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ভারত সরকার আয়োজন করে মাসব্যাপী ট্রেনিং। এই আইটেক ট্রেনিংয়ে বাংলাদেশের ১৬ জন নারী সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পেশাগত মানোন্নয়ের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ হয় সিনেমা পাগল তরুণ-তরুণীদের সাথে তাদের মতাদর্শ ভাগ করে নেয়ার। সুযোগ হয় ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের সান্নিধ্যের। নিঃসন্দেহে বলা যায়, অপেক্ষায় থাকা সত্যজিৎ রায় ফিল্ম ইনস্টিটিউট, নবীন সিনেমাবাজদের আলোর ঝলকানিতে ইতিহাসের দলিলে সময়ের প্রতিবিম্ব হয়ে থাকবে।
লেখক: সিনিয়র রিপোর্টার ও নিউজ প্রেজেন্টার, যমুনা টেলিভিশন।
Leave a reply