মাহফুজ মিশু:
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ সর্বনিম্ন হবে বলে দাবি করছে সরকার। প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ আট টাকা হতে পারে বলে ধারণা। তবে সেজন্য কেন্দ্র পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে রাশিয়ানদের ওপর নির্ভরতা কমানোর তাগিদ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের খরচ এক লাখ তের হাজার কোটি টাকারও বেশি। সব ঠিক থাকলে আসছে বছর উৎপাদনে আসবে এক হাজার ২শ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট। দ্বিতীয়টি আসার কথা পরের বছর।
পূর্ণ উৎপাদনে আসলে এখান থেকে মিলবে ২ হাজার ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। প্রথম ইউনিটের জন্য লাগবে ৭৫ টন ইউরেনিয়াম রড। তা দিয়ে টানা ১৮ মাস চলবে উৎপাদন। তারপর আবার ২৫ টন ইউরেনিয়াম দিতে হবে পরের দেড় বছরের জন্য। গবেষণা বলছে, ১২০০ মেগওয়াট ক্ষমতার চুল্লিতে দেড় বছরে ইউরেনিয়াম লাগে ১ হাজার কোটি টাকার। একই ক্ষমতার কেন্দ্র চালাতে কয়লায় খরচ ৭ হাজার ৩শ কোটি আর ডিজেলে ৬ হাজার ৩শ কোটি টাকা।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের অনুরুপ অন্যান্য যে মেগাপ্রকল্পগুলো আছে, যেগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছে, তাদের পার ইউনিট ট্যারিফ থেকে এটার ট্যারিফ কম হবে।
প্রচলিত অন্যান্য কেন্দ্রের তুলনায় রূপপুরের খরচ বেশি, এমন সমালোচনা করছেন অনেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বলছি যে, প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ ৫ টাকা থেকে ৮ টাকা হতে পারে। তার মানে, এগুলো সমস্ত ঝুঁকি কভার করেই কিন্তু করা হয়েছে। তাহলে তো এটা সাশ্রয়ী হওয়ার কথা।
বিশাল এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশই রাশিয়ান ঋণ। পূর্ণ বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর তিন বছর পর থেকে রাশিয়ার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। দুশ্চিন্তা আছে ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে। তবে এটি নিয়ে চিন্তিত নন প্রকল্প পরিচালক। বলছেন, বিদ্যুৎ বিক্রি করেই শোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে, প্রতিটি ইউনিটে তিন বছর অপারেশনের লাইভে নিয়ে আসছি। তার মানে, আমরা ৩ বছর পর্যন্ত সরকারের ওপর আলাদা করে কোনো রকম বারডেন দিচ্ছি না। ৩ বছর পরিচালিত হলে নিশ্চয়ই আমাদের ট্যারিফ আসবে।
অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, এটা এক ধরনের চাপ। যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চলে, তাহলে কিন্তু এটি বোঝা হওয়ার কথা নয়। আর যদি পূর্ণ ক্ষমতায় নিরবচ্ছিন্নভাবে না চলে, বেশিরভাগ বিদেশি নির্ভর হয়, তাহলে কিন্তু কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
পাশাপাশি, এই প্রকল্প থেকে স্থানীয় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হবে না বলেও দাবি সংশ্লিষ্টদের।
/এএম
Leave a reply