কিউইদের তিনে তিন, টাইগারদের টানা দ্বিতীয় হার

|

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মুশফিকুর রহিমের ফিফটি ও সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জোড়া চল্লিশোর্ধ রানের ওপর ভর করে ২৪৫ রানের পুঁজি পায় টাইগাররা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে ওপেনার রাচিন রবীন্দ্রকে হারালেও অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারেল মিচেলের জোড়া ফিফটিতে ৪৩ বল বাকি থাকতেই সহজ জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। ফলে টানা ৩ ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে এলো কিউইরা। অন্যদিকে, টানা দ্বিতীয় হারে সেমির পথটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ালো সাকিবের দলের।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দেয়া ২৪৬ রানের টার্গেটে শুরুতেই রাচিন রবীন্দ্রর উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। নিজের দ্বিতীয় ও ইনিংসের তৃতীয় ওভারে রাচিন রবীন্দ্রকে মুশফিকুর রহিমের কাছে তালুবন্দি করেন মুস্তাফিজ। ১৩ বলে ৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন রবীন্দ্র। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামস।

উইলিয়ামসনকে সঙ্গী করে শুরু ধাক্কা সামাল দেন ডেভন কনওয়ে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৮০ রান। ইনিংসের ২১তম ওভারে সাকিবের করা প্রথম বলে কনওয়ে রিভার্স সুইপের চেষ্টা করলে বল গিয়ে লাগে পায়ে। সাকিবের আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নেন কনওয়ে। তাতে অবশ্য বাঁচতে পারেননি এলবিডব্লিউ থেকে। ফিফটি থেকে মাত্র ৫ রান দূরে থাকতে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় কিউই ওপেনারকে।

কনওয়ের ফিরে গেলেও নিউজিল্যান্ডের রানের গতি কমাতে পারেনি টাইগাররা। ড্যারেল মিচেলকে সঙ্গে নিয়ে দলকে টানতে থাকেন এ বছর প্রথমবারের মতো ওয়ানডে খেলতে নামা উইলিয়ামসন। তাকে শেষ অবধি আউটই করতে পারেনি বাংলাদেশ, রিটায়ার্ড হার্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কিউই অধিনায়ক। একবার শান্তর করা থ্রো তার আঙুলে লাগে, পরে ব্যথার কাছে নত স্বীকার করে উঠে যেতে হয় তাকে। ১০৭ বল খেলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ১০৭ বলে ৭৮ রান করে তিনি ফেরেন সাজঘরে। এরপর গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে বাকিটা পথ পাড়ি দেন ড্যারিল মিচেল। ৬৭ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মিচেল।

এর আগে, টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক মেরে প্যাভিলিয়নে ফেরেন লিটন কুমার দাস। বোল্টের বলে হুইপ শট খেলে ফাইন লেগে ম্যাট হেনরির হাতে ক্যাচ আউট হন এই ওপেনার। লিটন ফিরলেও পাওয়ারপ্লেতে দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন তানজিদ হাসান তামিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। অবশ্য দুইবার ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেছেন তামিম। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তরুণ এ বাঁহাতি ওপেনার। লকি ফার্গুসনের ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে থাকা ডেভন কনওয়ের হাতে ধরা পড়েন ১৭ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ১৬ রান করা তামিম।

অন্যদিকে, ভরসা জোগাচ্ছিল ফর্মের তুঙ্গে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনিও। ইনিংসের ১২তম ওভারে লকি ফর্গুসনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। ডানহাতি এই পেসারের শর্ট লেন্থ ডেলিভারিতে ডিপ স্কয়ারের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে হেনরির হাতে ক্যাচ দেন ৩০ রান করা মিরাজ। পরের ওভারেই আউট হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যক্তিগত ৭ রানের বেশি করতে পারেননি এই ব্যাটার। গ্লেন ফিলিপসের বলে কনওয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি।

এরপর দলের হাল ধরেন সাকিব-মুশফিক। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান করেন মুশফিক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম ফিফটি তুলে নেন ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’। সাকিবকে নিয়ে গড়েন ১০৮ বলে ৯৬ রানের জুটি। ৫১ বলে ৪০ রান করা সাকিবকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙ্গেন লকি ফার্গুসন। ডানহাতি এই পেসারের আগের বলে ছক্কা মারা সাকিব পরের বলে বাউন্সার পুল করতে চেয়েছিলেন। তবে টপ এজ হয়ে উইকেটরক্ষক টম লাথামের হাতে ধরা পড়েন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি মুশফিকও।  হেনরির নিচু হয়ে আসা বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে করেন ৭৫ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৬৬ রান।

মুশফিক ফেরার পর আউট হন তাওহিদ হৃদয়ও। বোল্টের নাকল বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট এক্সট্রা কভারে থাকা স্যান্টনারের হাতে ক্যাচ দেন ১৩ রান করা এই ব্যাটার। অষ্টম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন আহমেদ মিলে দলের রান বাড়াতে সাহায্য করেন। বিশেষ করে তাসকিন। ১৭ রান করে নিজের উইকেট পতনের আগে, দারুণ দু’টি ছয় খেলেন এই পেসার। মাহমুদউল্লাহ’র সাথে ৩৪ রানের জুটি গড়েন তাসকিন। মোস্তাফিজুর রহমান এসে দলের রানে খুব বেশি সাহায্য করতে পারেননি। সাজঘরে ফেরেন মাত্র ৪ রান করে। শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ পরপর দুই ওভারে দুইটি ছয়ের মার খেলেন। শেষ পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ৪১ রান করে। অন্যপাশে শরিফুল অপরাজিত ছিলেন ৩ বলে ২ রান করে। তাতেই ২৪৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন লকি ফার্গুসন। দু’টি করে উইকেট শিকার করেন ট্রেন্ট বোল্ট ও ম্যাট হেনরি। একটি করে উইকেট পান মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply