বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়ে রূপকথার জন্ম দিয়েছে আফগানিস্তান। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইংলিশদের হারালো মুজিব-রশিদরা। আগে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও মিডল অর্ডার ব্যাটার ইকরাম আলী খিলের জোড়া ফিফটিতে ২৮৪ রানের লড়াকু পুঁজি পায় আফগানরা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র মুজিব, রশিদ, নবির স্পিন বিষে মাত্র ৪০ দশমিক ৩ ওভারে ২১৫ রানে গুটিয়ে যায় ইংলিশরা।
রোববার (১৫ অক্টোবর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের দেয়া ২৮৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ইংল্যান্ড শিবিরে আঘাত হানেন ফজলহক ফারুকি। এই বাঁহাতি পেসারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো। দলীয় ৩৩ রানে সাজঘরে ফেরেন অভিজ্ঞ ব্যাটার জো রুট। ইংল্যান্ডের সাবেক এই অধিনায়ক মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হন ১১ রান করা এই ব্যাটার।
দুই উইকেট পতনের পর হ্যারি ব্রুককে সঙ্গে নিয়ে দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন অন্য ওপেনার দাউয়িদ মালান। মোহাম্মদ নবির বলে ইব্রাহীম জাদরানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মালান। ৩৯ বলে চার বাউন্ডারিতে ৩২ রান করে ফেরেন এ বাঁহাতি ওপেনার। ক্রিজে এসে ইনিংস বড় করতে পারেননি অধিনায়ক বাটলারও। ব্যক্তিগত ৯ ও দলীয় ৯১ রানে নাভিন-উল-হকের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
এরপর ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিয়াম লিভিংস্টোনও। ব্যক্তিগত ১০ রান করে রশিদ খানের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফেরেন এই ইংলিশ ব্যাটার। স্যাম কারানকে সাজঘরের পথ দেখান নবি। বাঁহাতি এই ব্যাটার করেন ১০ রান। ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে ৪৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ব্রুক। নবির করা বলে লং অনে পাঠিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২য় ফিফটি তুলে নেন ব্রুক।
তরুণ এই ব্যাটার থাকায় খানিকটা স্বপ্ন বেঁচে ছিল ইংল্যান্ডের। তবে ৬৬ রান করা ব্রুককে ফিরিয়ে ইংলিশদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন মুজিব। ডানহাতি এই স্পিনারের ক্যারম বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা ইকরাম আলী খিলকে ক্যাচ দেন। শেষদিকে আদিল রশিদের ২০ এবং মার্ক উডের ১৮ রান কেবল হারের ব্যবধান কমিয়েছে ইংল্যান্ড। আফগানিস্তানের হয়ে মুজিব ও রশিদ তিনটি করে উইকেট নেন। এছাড়া ২টি উইকেট পান নবি এবং ১টি করে উইকেট নেন নাভিন ও ফজল হক ফারুকি।
এর আগে, টসে হেরে দিল্লির ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ইংলিশ বোলারদের তুলোধুনো করে দুই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান। উদ্বোধনী জুটিতে তারা গড়েন ১১৪ রান। জাদরান ৪৮ বলে ২৮ রান করে আদিল রশিদের বলে জো রুটের হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন। এরপর গুরবাজকে সঙ্গ দিতে আসেন রহমত শাহ। তবে ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রহমত। আউট হন ৩ রান করে। তাকেও ফেরান আদিল রশিদ।
অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন গুরবাজ। ৫৭ বলে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে ৮০ রান করে ফেরেন এ আফগান ওপেনার। এরপর আজমতউল্লাহ ওমরজাই ১৯ ও মোহাম্মদ নবি ৯ রান করে ফিরলে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন রশিদ খান ও ইকরাম আলী খিল। এই দু’জনে সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ৪৩ রান। রশিদ ২২ বলে ২২ করে আউট হলে ফের চাপে পড়ে আফগানরা।
শেষ দিকে আফগানদের হাল ধরেন তরুণ ব্যাটার ইকরাম। ৬৬ বলে ৩ চার ২ ছক্কায় ৫৮ রান করেন এ বাঁহাতি ব্যাটার। এছাড়া ১৬ বলে ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন মুজিব উর রহমান। শেষ পর্যন্ত ৪৯.৫ ওভারে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রানে থামে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ২৮৮। কাছাকাছি এসেও সেটা টপকাতে পারেনি তারা।
ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন আদিল রশিদ। ২টি উইকেট পান মার্ক উড। এছাড়াও একটি করে উইকেট নেন রিচ টপলি, জো রুট ও লিয়াম লিভিংস্টোন।
/আরআইএম
Leave a reply