মিথ্যা মামলায় পুলিশ হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তার মৃত্যুর ১৩ দিন পরে মুখ খুলেছেন মামলা করা সেই নারী। জানিয়েছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার প্ররোচনায় মিথ্যা মামলা করার খবর। মারা যাওয়া কর্মকর্তার নাম এস এম শহীদুল্লাহ (৬৭)। তিনি দুদকের সাবেক উপপরিচালক ছিলেন।
অপরাধবোধে ভুগছেন জানিয়ে মিথ্যা মামলা দায়েরকারী রনি আকতার তানিয়া বলেন, জসিম, লিটনরা আমাকে সবকিছু শিখাইয়া দিছে। এরপরে আমার জবানবন্দি ও সব জিনিস নেয়ার পরে দুইটা বেড, এক কেজি পাতিল ও একটা জগ কিনে দিছে। এখন এগুলো নিয়ে আমি চলতেছি। যখন শুনলাম শহীদুল্লাহ মারা গেছে তখন আমার নিজেরই খারাপ লাগতেছে। উনি আসলে কোনো দোষ করে নাই।
এছাড়া মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদনও জানিয়েছেন তানিয়া। এ বিষয়ে আগামী ৩০ অক্টোবর আদেশের দিন ধার্য করেছে চট্টগ্রামের আদালত।
পরিবারের অভিযোগ, চান্দগাঁওয়ের একটি এলাকায় নতুন বাড়ি নির্মাণের সময় জসিম নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে চাঁদা না দেয়ায় তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি এবং গ্রেফতার করা হয়েছিল। হৃদরোগের সমস্যা ছিল শহীদুল্লাহর। পুলিশ ইচ্ছাকৃতভাবে ওষুধ না দিয়ে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে দাবি তার পরিবারের।
এদিকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে ৪ পুলিশ সদস্যসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করেছেন মারা যাওয়া দুদক কর্মকর্তার স্ত্রী। মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মারা যাওয়া দুদক কর্মকর্তার স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার বলেন, একটা মিথ্যা মামলার জন্য আমার হাজবেন্ডকে দুনিয়া থেকে চলে যেতে হলো? আমার তো আর কিছু বলার নাই। যারা এই কাজের সাথে জড়িত, আমি শুধু তাদের বিচার চাই।
বাদীপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মিথ্যা মামলা দাঁড় করিয়ে, একটা ভুয়া ওয়ারেন্ট জারি করিয়ে, ওনাকে হেনস্তা করে, চরমভাবে নির্যাতন করে, কোনো চিকিৎসা না দিয়ে ওসির রুমে ওনাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুর রশীদ বলেন, তদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এই মামলার সঠিক তথ্য আমদের কারও বলার সুযোগ নাই। রিপোর্ট আসার পরে আমরা বলতে পারবো আসলে কী হয়েছিল। পুলিশের হেফাজতে নির্যাতনে মারা গেছে নাকি অসুস্থ হয়ে মারা গেছে সেটা জানা যাবে।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর একটি মারামারির মামলায় নগরের চান্দগাঁওয়ের বাসা থেকে শহীদুল্লাহকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে সাদাপোশাকে থাকা দুই এএসআই ইউসুফ আলী ও সোহেল রানা। থানায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে এ ঘটনায় নগরের চান্দগাঁও থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ আলী ও এ টি এম সোহেল রানাকে গত ৫ অক্টোবর প্রত্যাহার করে দামপাড়া পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
/এমএইচ
Leave a reply