আরেকটি ‘নাকবা’র হুমকি দিচ্ছে ইসরায়েল, ভূখণ্ড ছাড়তে নারাজ গাজাবাসী

|

১৯৪৮ সালে যুদ্ধের সময় ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি গৃহহীন হয়েছিল। ইতিহাসে এটি 'নাকবা' বলে পরিচিত।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে এখন শুধু আহাজারিই করতে পারেন গাঁজার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু দাক্কা। ৭০ বছরের জীবনে এমন ইসরায়েলি বর্বরতা বারবার সহ্য করেছেন এই বৃদ্ধ। তবুও ছেড়ে যাবেন না নিজ ভূমি। তিনি বলেন, সন্তানসহ আমার পরিবারের সদস্যরা ধ্বংস্তুপের নিচে রয়েছে। জানি না, তাদের পরিণতি কী। ইসরায়েলিদের এই জুলুম গত ৭০ বছর ধরে দেখে আসছি। ওরা চায়, আমরা চলে যাই। কিন্তু আমি এই ভূমি ছাড়ব না। যতদিন বাঁচব, গাজাতেই থাকব।

গাজায় বসবাস প্রায় ২৩ লাখ মানুষের। এরমধ্যে উত্তরাঞ্চলে রয়েছে ১১ লাখের মতো বাসিন্দা। ইসরায়েলের মুহুর্মুহু বিমান হামলা গোলাবর্ষণে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে গাজা, প্রতিমুহুর্তে প্রাণ যাচ্ছে বাসিন্দাদের। তারপরও ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে নারাজ বাসিন্দারা। আরেক গাজাবাসী বলেন, ওদের উদ্দেশ্যই হলো আমাদেরকে এখানকে সরিয়ে দিয়ে বসতি গড়া। আমি ‘নাকবা’ দেখেছি। চাই না, আবারও তার পুনরাবৃত্তি হোক। যত জুলুম নির্যাতনই হোক না কেন, আমরা গাজা ছাড়বো না।

হামাস নেতাদেরও হুঁশিয়ারি, শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত গাজা ছাড়বেন না তারা। হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া বলেন, গাজাবাসী কোনোভাবেই তাদের নিজেদের ভূমি ছেড়ে পশ্চিম তীর কিংবা মিশরে যাবে না। এখানেই থাকবে তারা। ইসরায়েলিদের লক্ষ্যই হলো গাজা দখল করা। আমরা সেটা কোনোভাবেই হতে দেবো না।

কিন্তু কেন নিশ্চিত মৃত্য জেনেও গাজা ছাড়তে চান না সেখানকার বাসিন্দারা? ঐতিহাসিকভাবেই ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখলে নেয়ার পুরোনো ইসরায়েলি কৌশল এটি। সামরিক চাপ সৃষ্টি করে প্রথমে সরিয়ে দেয়া হয় বাসিন্দাদের। এরপর সেখানে ঘাঁটি গাড়ে ইসরায়েলি বাহিনী, তারপর গড়ে তোলা হয় ইহুদি বসতি। এই শঙ্কাতেই নিজ ভূমি ছাড়তে চান না গাজাবাসী। ইসরায়েলি মন্ত্রীর বক্তব্যেও স্পষ্ট, এবারও একই পরিকল্পনা তেল আবিবের।

ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য গিদন সায়ার বলেন, গাজার পরিধি অবশ্যই ছোট হয়ে আসবে। প্রথমত আমরা ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য গাজার বিভিন্ন অংশ দখল করবো। দ্বিতীয়ত এই হামলার জন্য আরবদের মুল্য পরিশোধ করতে হবে। ফিলিস্তিনিদের জীবনের বিনিময়ে হোক কিংবা গাজার ভূখণ্ড, ইসরায়েলে হামলার মূল্য পরিশোধ করতেই হবে তাদের।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ব্যাপক হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ইসরায়েল। অস্ত্রের মুখে শেকড়ছাড়া করে লাখ লাখ মানুষকে। এরপর থেকেই দিনটি ‘নাকবা’ দিবস হিসেবে পরিচিত। সেই ঘটনারই আবারও পুনরাবৃত্তি চায় ইসরায়েল, এমনটাই আশঙ্কা গাজার বাসিন্দাদের।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply