নির্বাচন নিয়ে সংকট সমাধানে সংলাপ যথেষ্ট নয়: বিশ্লেষকদের মত

|

রাসেল আহমেদ:

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান থাকলেও বড় দলগুলোর সংলাপে সংকট সমাধানের সম্ভাবনা দেখছেন না বিশিষ্টজনেরা। এর আগেও এমন উদ্যোগে সফলতা আসেনি বলে মন্তব্য তাদের। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দূরত্ব ঘোঁচাতে তেমন কোনো চেষ্টাও হয়নি বলে মনে করেন তারা। বিশিষ্টজনদের মতে, দলগুলোর ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিই বর্তমান সংকটের বড় কারণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, সংলাপ শুরু হবে খোলা মনে, কোনো শর্ত থাকবে না। যখন নিজেদের মধ্যে আস্থা আসবে, তখন দুই পক্ষ তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করবে, কথা হবে। আমার মনে হয় যে তেমন পরিস্থিতি দেখছি না।

এই অবস্থা এমন যে বরাবরই সংলাপের চেষ্টা করতে হয় বিদেশিদের। ২০১৪ সালে ভোটের আগে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতিসংঘের প্রতিনিধি ফার্নান্দেজ তারাঙ্কো। এবারও সেরকম আহবান জানিয়েছে; ভোট নিয়ে সবচেয়ে বেশি সরব যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।

যদিও বাংলাদেশে গণতন্ত্র বাস্তবায়নের লড়াই হয়েছে বহুবার। বিশিষ্টজনদের মন্তব্য, দুর্ভাগ্যজনক সত্য ৯০, ৯৫, ২০০৬ কিংবা ১৪, ১৮ সালের কখনোই ক্ষমতাসীনরা চেয়ার ছাড়তে রাজি হননি। বরং রাজপথের সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে বারবার। এবারও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরস্পর বিরোধী এক দাবিতে অনড় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। ফলে ছাড় দেয়াকে রাজনৈতিক পরাজয়ের দৃষ্টিতে দেখছে দুই দলই।

অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, যদি এক পক্ষ আরেক পক্ষকে শত্রু মনে করে, তাহলে বুঝা যাচ্ছে তাদের মধ্যে যোগাযোগের ন্যূনতম জায়গা নেই। তারা যদি মনে করেন, সরকারে গেলে আমার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, বিরোধী দলে গুরুত্বপূর্ণ না, তাহলে আমি মনে করি আসলে তারা রাজনীতি করছেন না।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বিরোধী দল নির্বাচনে আসবে কি না এর ওপর নির্ভর করছে সংলাপের বিষয়টি। যদি আসে তাহলে সংলাপ হলেও হতে পারে। যদি না আসে, তাহলে সংলাপ হবে না।

এদিকে, আগামী সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, রাজপথে বিএনপি-আওয়ামী লীগের কথার লড়াই বাড়ছে তত। ঘাত-প্রতিঘাতে আহত করার চেষ্টাও থেমে নেই। আর তাতে মুখে বাক্যের পরিবর্তে হাতে অস্ত্র এবং সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে সাধারণের মনে।

বিশ্লেষকদের মতে, আলোচনার টেবিলে দফারফা না হলে একপাক্ষিক সমাধান মানতে হবে। তবে সেখানে নতুন সংকট তৈরির আশঙ্কা থাকবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কেবল ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতি দায়ী।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বললেন, আমাদের বড় বড় দলের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে আস্থা নেই। কেউ এ বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিদেশিরা আসা-যাওয়ার মধ্যে যতটুকু করছে, তাতে আস্থা বাড়াতে কিছু করছে না। বরং তারা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাতে বিভাজন বাড়ছে। বিভাজন বাড়িয়ে তাদের লাভটা কী? সেখানে নিশ্চয় তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।

এখন পর্যন্ত সংলাপের সম্ভাবনা বলতে ছাড় দিলে আলোচনায় বসতে রাজি বলে জানিয়েছে সরকার।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply