সামারাবিক্রমার ব্যাটে অবশেষে জয়ের দেখা পেলো শ্রীলঙ্কা

|

বিশ্বকাপের চলতি আসরের শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি শ্রীলঙ্কার। টানা তিন ম্যাচ হেরে শেষ চারের সমীকরণ অনেকটাই জটিল করে ফেলেছিলো লঙ্কানরা। অবশেষে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের দেখা পেলো কুশাল মেন্ডিসের দল। মিডল অর্ডার ব্যাটার সাদিরা সামারাবিক্রমার ব্যাটে ভর করে ডাচদের হারিয়েছে ৫ উইকেটে। সামারাবিক্রমা অপরাজিত ছিলেন ৯১ রানে।

শনিবার (২১ অক্টোবর) লক্ষ্ণৌর ভারতরত্ন শ্রী অতল বিহারী বাজপেয়ী ইকানা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে মুখোমুখি হয় দু’দল। ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্স। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ডাচদের।

দুই ওপেনার বিক্রমজিৎ সিং ও ম্যাক্স ও’ডাউড ভালো শুরু পাননি। দলীয় ৭ রানেই ভেঙে যায় উদ্বোধনী জুটি। চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে কাসুন রাজিথার বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান বিক্রমজিৎ। ডাচ ওপেনার রিভিউ নিলে তা কাজে লাগেনি। ১৩ বলে ১ চারে ৪ রান করেন বিক্রমজিৎ। এরপর উইকেটে আসেন কলিন অ্যাকারমান। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৩৮ বলে ৪১ রান যোগ করেছেন ও’ডাউড-অ্যাকারমান।

দশম ওভারের শেষ বলে ও’ডাউডকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন রাজিথা। ২৭ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ রান করেন ও’ডাউড। খুব দ্রুত অ্যাকারমানকেও ফিরিয়েছেন রাজিথা। ১২ তম ওভারের শেষ বলে রাজিথাকে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসের তালুবন্দী হন অ্যাকারমান। ৩১ বলে ৫ চারে ২৯ রান করেন অ্যাকারমান। 

ও’ডাউড, অ্যাকারমানের দ্রুত বিদায়ে নেদারল্যান্ডসের স্কোর দাঁড়ায় ১২ ওভারে ৩ উইকেটে ৫৪ রান। রাজিথার পর দ্রুত ডাচদের আরও ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন দিলশান মাদুশঙ্কা। যেখানে ১৭-তম ওভারের পঞ্চম বলে মাদুশঙ্কাকে আপার কাট খেলতে গিয়ে ডিপ থার্ডম্যানে কুশল পেরেরার অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন বাস ডি লিডে। ২১ বল খেলে ডি লিডে করেন ৬ রান।

১৯-তম ওভারের চতুর্থ বলে তেজা নিদামানুরুকে এলবিডব্লু করেন মাদুশঙ্কা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর সঙ্গে সঙ্গে রানের গতিও ধীর হতে থাকে নেদারল্যান্ডসের। ১৮.৪ ওভারে ডাচদের স্কোর দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ৭১ রান। ২২ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে অধিনায়ক এডওয়ার্ডসকে বোল্ড করেন মাহিশ থিকশানা। ডাচ অধিনায়ক ১৬ বলে করেন ১৬ রান।

৯১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা নেদারল্যান্ডসের ঘুরে দাঁড়ানোর উপাখ্যান সেখান থেকেই। সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট-লোগান ভ্যান বিকের ১৩০ রানের অনবদ্য জুটি। লঙ্কান বোলারদের সকল প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়ে নেদারল্যান্ডসকে ম্যাচে ফেরান তারা। ২৩.৫ ওভারের জুটিতে রানের চাকাও ঘুরিয়েছেন সমানতালে। দু’জনের ব্যাটে ভর করে ২৬২ রানের লড়াকু সংগ্রহ পায় ডাচরা।

৮২ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলার পথে সাইব্র্যান্ড চারটি চার ও একটি ছক্কা মারেন। লোগান থামেন ৭৫ বলে ৫৯ রান করে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল এক ছয় ও এক চারে। শ্রীলঙ্কার পক্ষে রাজিথা ও মাদুশঙ্কা চারটি করে উইকেট শিকার করেন।

২৬৩ রানের জবাব দিতে নামা লঙ্কানদের প্রথম উইকেট নিতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি এডওয়ার্ডসের দলকে। দলীয় ১৮ রানেই ওপেনার কুশল পেরারাকে সাজঘরে ফেরান বাঁ-হাতি স্পিনার আরয়ান ডাট। ইনিংসের ৪ দশমিক তিন বলে ডি লিডের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পেরারা। তিনি করেন ৮ বলে চার রান। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসও ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ডাটের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরার আগে লঙ্কান অধিনায়ক করেন মাত্র ১১ রান। ৫২ রান তুলতেই ২ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।

এরপর চার নম্বরে ব্যাটে নামা সাদিরা সামারাবিক্রমার সঙ্গে জুটি গড়েন ওপেনার নিশাঙ্কা। তিনি তুলে নেন অর্ধশতক। ৫২ বলে ৫৪ রান করে মাকেরেনের বলে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন নিশাঙ্কা। তার আগে সাদিরার সাথে গড়েন মূল্যবান ৫২ রানের জুটি। নিশাঙ্কার বিদায়ের পর ক্রিজে এসে সাদিরাকে দারুণ সঙ্গ দেন চারিথ আসালাঙ্কা। দু’জনে জুটি গড়েন ৭৭ রানের। এরপর আবারও লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন আরয়ান ডাট। তার বলে ব্যক্তিগত ৪৪ রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন আসালাঙ্কা। তবে অপরপ্রান্তে খুবই সাবধানী ব্যাটিং করেন সামারাবিক্রমা।

ধনঞ্জয়া সি সিলভার সঙ্গেও গড়েন ৭৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। ডি সিলভা খেলেন ৩৭ বলে ৩০ রানের ইনিংস। ২৫৭ রানে ৫ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। শেষদিকে দুশান হেমান্তকে সঙ্গে নিয়ে ১০ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটে জয় তুলে মাঠ ছাড়েন সামারাবিক্রমা। ম্যাচ শেষে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে।

চলতি বিশ্বকাপে চার ম্যাচে এটিই শ্রীলঙ্কার প্রথম জয়। এই জয়ে দুই পয়েন্ট নিয়ে আফগানিস্তানকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের ৯ নম্বরে উঠে এসেছে লঙ্কানরা।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply