ক্লাসেন ঝড়ের পর বোলিং তোপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উড়ে গেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। রান পাহাড় তাড়া করতে নেমে ২২৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাটলারের দল। কোয়েৎজি-জানসেন-এনগিদির সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ইংলিশ ব্যাটাররা। তাদের আসা-যাওয়ার মিছিলে ১০০ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। তখনই বিশ্বকাপ ইতিহাসে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় হারের লজ্জার রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছিলো ইংল্যান্ডকে। যদিও সে লজ্জার হার এড়াতে পেরেছে বাটলারের দল।
নবম উইকেটে ৭০ রানে জুটি গড়েন অ্যাটকিশন-মার্ক উড। এই করতে মাত্র ৩৩টি বল মোকাবিল করে এই জুটি। কেশব মহারাজের বলে অ্যাটকিনশন বোল্ড হয়ে ফিরলে ভাঙ্গে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি। তিনি ২১ বলে ৭ চারে করেন ৩৫ রান। তবে রিস টপলি ব্যাটিংয়ে না নামায় ১৭০ রানেই থামে ইংলিশদের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করা মার্ক উড অপরাজিত থাকেন ৪৩-এ। তিনি ১৭ বল মোকাবিলায় ৫টি ছয় ও দুইটি চার মারেন।
তবে বিশ্বকাপ ইতিহাসের বড় হারের লজ্জার রেকর্ড না গড়লেও আরেকটি লজ্জার রেকর্ড গড়েছে ইংল্যান্ড। ২২৯ রানের হিসেবে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার ইংলিশদের। ইংলিশদের আগের সবচেয়ে বড় হার ছিল ২২১ রানে। গতবছর মেলবোর্নে অজিদের বিপক্ষে এই রানে হেরেছিলো ইংল্যান্ড।
এর আগে, প্রোটিয়াদের দেয়া ৪০০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরু করতে পারেননি দুই ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো এবং দাউয়িদ মালান। ইংল্যান্ড শিবিরে ইনিংসের ২ দশমিক ৩ ওভারের সময় আঘাত হানেন লুঙ্গি এনগিদি। তার বলে দলীয় ১৮ রানে ডুসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বেয়ারস্টো। ফেরার আগে ১২ বলে এক ছয় ও এক চারে করেন ১০ রান। তিন নম্বরে নামা অভিজ্ঞ ব্যাটার জো রুটও ফিরে যান দ্রুতই। তিনি মাত্র ২ রানে জানসেনের বলে মিলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
৫ দশমিক ১ বলে আবারও আঘাত হানেন জানসেন। এবার তার দ্বিতীয় শিকার ওপেনার মালান। ১১ বলে এক চারে ৬ রান করে ফেরেন এই ওপেনার। ২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কাঁপতে থাকা ইংল্যান্ডের ত্রাতা হতে পারেননি দীর্ঘদিন পর ইনজুরি কাটিয়ে একাদশে ফেরা বেন স্টোকস। রাবাদার বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্টোকস। প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে তিনি করেন মাত্র ৫ রান।
৮ দশমিক ১ বলে ৩৮ রান তুলতেই ইংল্যান্ড হারায় ৪ উইকেট। এরপর হ্যারি ব্রুকের সঙ্গে আগ্রাসী জবাব দিতে শুরু করেন অধিনায়ক বাটলার। উইকেট হারালেও রানের চাকা সচল রেখে প্রথম ১০ ওভারে ৬৭ রান তুলে নেয় দলটি। তবে এই জুটিকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেয়নি জেরাল্ড কোয়েৎজি। দলীয় ৬৭ রানে তার বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন অধিনায়ক বাটলার। যদিও তিনি রিভিউ নিয়েছিলেন। তবে আম্পায়ারস কলে তাকে ফিরতে হয়েছে ব্যক্তিগত ১৫ রানে। তিনি ৭ বলের মোকাবিলায় ২ চার ও এক ছয়ে এই রান সংগ্রহ করেন। একই ওভারে ব্রুককেও ফেরান কোয়েৎজি। ব্রুক ২৫ বলে দুই চার ও এক ছয়ে করেন ১৭ রান।
ইনিংসের ১৫ দশমিক ১ বলে তার তৃতীয় শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন আদিল রশীদ। উইলি-অ্যাটকিনশনের ব্যাটে ১০০ রান তুলতেই আবার এনগিদির দ্বিতীয় আঘাত। এবার তার শিকার হন উইলি। মাত্র ১০০ রান তুলতেই ফিরে যান ৮ ব্যাটার। এরপরই শুরু হয় অ্যাটকিনশন-উড ঝড়। তবে এই ঝড় শুধুমাত্র ব্যবধানই কমাতে পেরেছে।
এর আগে, শনিবার (২১ অক্টোবর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দু’দল। ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ফিল্ডিং নিয়ে শুরুটা দারুণ হয় ইংলিশদের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সাজঘরে পাঠান ইনফর্ম ওপেনার কুইন্টন ডি কককে। রেস টপলির বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। যদিও ডি ককের উইকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে অধিনায়ক বাটলারের দক্ষতার তারিফ করতেই হয়। আম্পায়ার জোড়ালো আবেদনে সাড়া না দিলে আত্মবিশ্বাসী বাটলার দ্রুতই রিভিউ নেন। রিভিউয়ে দেখা যায়, বল ডি ককের ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে যায়। অথচ প্রথম বলেই চার মেরে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছিলেন ডি কক।
ডি ককের বিদায়ের পরও রানের চাকা সচল ছিল প্রোটিয়াদের। আরেক ওপেনার রেজা হেনড্রিকসের সঙ্গে তিন নম্বরে নামা ডুসেন ১২১ রানের জুটি গড়েন। আদিল রশীদের বলে বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ডুসেন করেন ৬০ রান। ৬১ বলের মোকাবিলায় তিনি ৮টি চার মারেন। নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার অসুস্থতার কারণে এ ম্যাচে সুযোগ পান হেনড্রিকস। সুযোগটা কী দারুণই না কাজে লাগালেন তিনি। আগ্রাসী ব্যাটিং করা হেনড্রিকস মাত্র ১৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল নয়টি চার ও তিনটি ছ্ক্কায়।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মার্করাম এই ম্যাচে অর্ধশতকের আগেই টপলির দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন ৪২ রানে। পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংলিশ বোলারদের ওপর শুরুতেই চড়াও হন হেনরিখ ক্লাসেন। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে খেই হারায় মার্ক উড-উইলিরা। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন মার্কো জানসেন। এই জুটিতে আসে ১৫১ রান।
৬১ বলেই সেঞ্চুরি তুলে নেয়া ক্লাসেন, অ্যাটকিনশনের বলে আউট হয়ে ফেরার আগে ১০৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। মাত্র ৬৭ বলের ইনিংসটি তিনি ১২ টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজান। তবে শেষ ওভারে অ্যাটকিনশনের কামব্যাকের কারণে প্রোটিয়াদের ইনিংস আরও বড় হয়নি। ৫০তম ওভারে তিনি খরচ করেন মাত্র ৫ রান। ওই ওভারে উইকেট তুলে নেন দুইটি। অন্য পাশে শেষ পর্যন্ত জানসেন অপরাজিত থাকেন ৭৫ রানে। ৪২ বলের ইনিংসে তিনি ছয়টি ছক্কা এবং তিনটি চার মারেন।
এই জয়ের ফলে পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে উঠে এসেছে প্রোটিয়ারা। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত শুরু করা প্রোটিয়ার প্রথম দু’ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়াকে বড় ব্যবধানে হারায়। লঙ্কানদের বিপক্ষে ১০২ রানের পর অজিদের বিপক্ষে জয় পায় ১৩৪ রানে। তবে উড়তে থাকা প্রোটিয়াদের তৃতীয় ম্যাচে মাটিতে নামায় নেদারল্যান্ডস। ডাচরা ৩৮ রানে হারায় আফ্রিকাকে।
/এনকে
Leave a reply