রিয়াজ রায়হান:
প্রস্তাবিত আনসার ব্যাটালিয়ন বিল নিয়ে কড়া আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ। এটি পাস না করতে এরইমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লিখিতভাবে জানিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। জানা গেছে, এটি পাশ না করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। অপরদিকে, সংশোধিত বিলে পুলিশের সঙ্গে ক্ষমতার প্রশ্নে সাংঘর্ষিক কিছু নেই বলে মনে করেন আনসারের সাবেক কর্মকর্তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, জননিরাপত্তায় বাহিনীগুলোর মধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। তবে সেটি জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে নয়।
জননিরাপত্তা ও অন্যান্য বাহিনীর সহায়ক হিসেবে ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে গঠিত হয় আনসার ব্যাটালিয়ন। বর্তমানে এটি পরিচালিত হচ্ছে ১৯৯৫ সালের আইন দিয়ে। এতে বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
গত সোমবার ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল-২০২৩’ সংসদে উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তবে এতে আপত্তি জানান কয়েকজন সংসদ সদস্য। যদিও কণ্ঠভোটে তা বাতিল হয়ে যায়।
সংসদে বিলটি উত্থাপনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অগ্নিসন্ত্রাসের সময়, যখন বিএনপি দেশ অচল করার চেষ্টা করছিল, তখন এই আনসার বাহিনীই রাস্তাঘাট পরিষ্কার রেখেছিল। যেখানে যার প্রয়োজন, সেখানেই এই আনসার ব্যাটালিয়ন বাহিনী ভূমিকা পালন করে।
তবে এ বিলটির বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, পুলিশ ও আনসার বাহিনীকে পাশাপাশি রাখা যায়, তবে মুখোমুখি করবেন না। এই দুই বাহিনীকে সম্মুখ করলে সমূহ বিপদ হবে।
প্রস্তাবিত বিলের ৮ ধারায় বলা হয়েছে, যেকোনো অপরাধ সংগঠনকারী ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশের সোপর্দ করতে পারবে ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। একই সঙ্গে তল্লাশি, মালামাল জব্দের ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বিলে।
বিলের এই ধারা নিয়েই ঘোর আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ। এটি পাশ না করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। পুলিশ বলছে বিলটি পাশ হলে, আইনি জটিলতা যেমন তৈরি হবে, তেমনি অপরাধী আটক, জব্দ এবং তদন্তকাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।
এ নিয়ে যমুনা টেলিভিশনকে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বলেন, বিলটি নিয়ে পুলিশের মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে একটি টিম সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পুলিশের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন বলেও জানান আসাদুজ্জামান।
তবে যে ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে সেটি শুধুমাত্র ব্যাটালিয়ন আনসারের ক্ষেত্রে, অঙ্গীভূত আনসারের জন্য নয় বলে জানিয়েছেন আনসার ব্যাটালিয়নের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, এই ধারায় আনসার ব্যাটালিয়নকে যে ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে, তার আওতায় যদি তাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও পোশাক প্রদান এবং সেই সাথে তাদের স্থানীয় স্কেল পেনশন এবং বেতন দেয়া হয়, তাহলে তার আগে এই বাহিনীকে সুনির্দিষ্ট শৃঙ্খলার মধ্যে আনা দরকার। এ ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা ততোটুকুই বাড়ানো দরকার, যতটুকু বাড়ালে অন্যান্য বাহিনীর সাথে তা সাংঘর্ষিক না হয়।
এই আইনে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. হাফিজুর রহমান কার্জনের মতে, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং তার পরিধি যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে, তাতে অন্য বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট করে এই প্রক্রিয়াকে আরও মসৃণ, দক্ষ ও জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যেতেই পারে। তাতে তেমন কোনো অসুবিধার কারণ নেই বলেও মনে করেন তিনি।
অবশ্য প্রস্তাবিত বিলটি নিয়ে এখনও চিন্তাভাবনার সুযোগ আছে বলে মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এসজেড/
Leave a reply