শিক্ষায় নতুন কারিকুলাম নিয়ে অসন্তোষ, বৈষম্য বাড়ছে অভিযোগ অভিভাবকদের

|

আল-আমিন হক অহন:

পাস-ফেল নেই, নেই গতানুগতিক পরীক্ষা। তার পরিবর্তে বছরব্যাপী রয়েছে ধারাবাহিক মূল্যায়ন। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম যেনো, আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে। এক প্রকার পরীক্ষাবিহীন এই পড়াশোনা মানতে নারাজ অভিভাবকদের একাংশ। তারা বলছেন, সরাসরি বই পড়ার চাপ না থাকায় শিক্ষার্থীরা মোবাইলসহ অন্যান্য ডিভাইসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে এই কারিকুলামের বিকল্প নেই। যেসব ত্রুটি আছে সেগুলোর সমাধান করেই এগোতে হবে।

পরীক্ষার চাপ না থাকায় পড়ার টেবিলে অনেকটাই নির্ভার ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ঐশী। এখন তার কাছে পড়াশোনা মানেই, অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক কাজ। প্রকল্পভিত্তিক শিখনচর্চা, গ্রুপ ওয়ার্ক, কুইজ, পোস্টার প্রদর্শনী, কিংবা নানা উপকরণ দিয়ে কিছু একটা বানানো।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জীবন ও জীবিকা বইয়ে শেখানো হচ্ছে নিজের কাজ নিজে করাসহ নানা দক্ষতা ও আদবকেতা। বাদ নেই রান্না শেখানোর কার্যক্রমও। আলু ভর্তা আর ডিম ভাজিও শেখানো হচ্ছে বইয়ে। এই রান্না শেখানোর বিষয় সামনে নিয়েই সম্প্রতি ফুঁসে উঠেছে অভিভাবকদের একাংশ। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভও হয়। সেই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল ঐশীও। এই শিক্ষার্থীর মতে, আলু ভর্তা আর ডিম ভাজির মতো রান্না বান্না বাড়িতে দেখেও শেখা যায়। এর জন্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন কতটুকু ছিল তা নিয়েই প্রশ্ন তার।

এই কারিকুলামের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের একাংশও। শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী আবছার উদ্দিন বলছেন, প্রথমে কারিকুলামে সৃজনশীল এনে আমাদের বোঝানো হলো, এটা ভালো। এখন সেসব বাদ দিয়ে আবার নতুন কারিকুলাম দেয়া হলো। এখন আমাদের ছেলেমেয়েদের ওপর এভাবে এক্সপেরিমেন্ট চালাতে গিয়ে তারা কি গিনিপিক হয়ে গেলো না?

শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক তাহেরা আক্তার রুপা বলছেন, নতুন কারিকুলামে এসাইনমেন্টের যেসব উপকরণ কিনতে বলা হচ্ছে তার ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য। এমনকি কসটেপ, কালার পেপারের মতো এই উপকরণ গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য দুর্লভ। এতেই শিক্ষায় বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া স্কুল থেকে যেসব খাবারের উপকরণ বানিয়ে নিয়ে যেতে বলা হয়, সেগুলো আমরা বাসা থেকেই বানিয়ে দিই, অনেকে রেস্টুরেন্ট থেকেও কিনে যাচ্ছে। এর ব্যয়ভারও বহন করতে হচ্ছে অভিভাবকদের। তাহলে নতুন এই শিক্ষা কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের বিকাশ কিসে?

নতুন কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের ডিভাইসমুখী করছে বলেও মনে করেন অনেকে। ইন্টারনেটকে শিশুদের জন্য নিরাপদ না করেই কোমলমতিদের মুঠোফোনের ব্যবহার বাড়ানোও ভাবিয়ে তুলছে তাদের। শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী আবছার উদ্দিন বলছেন, স্কুল থেকে দেয়া এসাইনমেন্টগুলো শিশুরা বাড়িতে এসে ডিভাইসের মাধ্যমে সমাধান করছে। ইউটিউব বা ইন্টারনেট থেকে নিয়ে সেগুলো স্কুলে গিয়ে প্রেজেন্ট করছে। তাই এই কারিকুলাম বাতিল করে আগের মতো পরীক্ষার নিয়ম ফিরিয়ে আনার দাবি শিক্ষা আন্দোলন সম্মিলিত অভিভাবক ফোরামের মুখপাত্র আমিরুল ইসলামের।

এদিকে, শিক্ষাবিদরা বলছেন, নতুন এই কারিকুলামে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে এই কারিকুলামের বিকল্প নেই। শিক্ষাবিদ রাশেদা কে. চৌধুরী বলছেন, আগের নিয়ম ফিরিয়ে আনলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে গাইড বইয়ের বাণিজ্য যারা করে এবং কোচিং সেন্টারগুলো। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাই বাইরের দেশগুলোর শিক্ষাক্রম অনুযায়ী তৈরি বর্তমান কারিকুলামের বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি।

রাশেদা কে. চৌধুরী মনে করেন, এসাইনমেন্ট তৈরির ব্যয় বহন করতে হবে স্কুলকেই। আর সেখানেই ব্যবহারিক কাজ শেষ করতে হবে। তেমনটি হলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষায় বৈষম্য তৈরির সুযোগ থাকবে না। নতুন শিক্ষা কারিকুলামকে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য করতে সরকারকে শিক্ষায় বাজেট বাড়ানোর তাগিদও দিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply