সুশীল বাবু, মানবাধিকার কর্মীরা চুপ কেন: প্রধানমন্ত্রী

|

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সুশীল বাবু, মানবধিকার কর্মীরা চুপ কেন? এদের বিবেক বলে কি কিছু নেই? আওয়ামী লীগের পান থেকে চুন খসতে পারবে না, তাদের কণ্ঠে অনেক জোর থাকে। আর যারা সত্যিকার অপরাধী, তারা কিছু করলে তাদের কণ্ঠে স্বর থাকে না। বিড়ালের মতো একটু মিউ মিউ করলেও বুঝতাম, মিউ মিউ করছে। কিন্তু তাও করে না। এটাই হচ্ছে বাস্তব কথা।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টসের (বিএফইউজে) প্রতিনিধি সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, পুলিশ-সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি পেতে হবে। কিছু হলেই যারা একটু বিবৃতি দেয়, তারা এখন কোথায়? ফ্রান্সের রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার ৩০ জন সাংবাদিকের ওপর হামলায় চুপ কেন? আমাদের সুশীল বাবুরা কই এখন? কিছু একটা হলেই সুশীল বাবুরা চিৎকার করে উঠে। সেই সুশীলদের কাজ কি আওয়ামী লীগের দোষ খুঁজে বেড়ানো? আর আওয়ামী লীগের কেউ কিছু করলে সেটাকে বড় করে দেখানো? চোর, ডাকাত, গ্রেনেড হামলাকারী, অস্ত্র চোরাকারবারীদের কোনো অপরাধ নেই! মানবাধিকার লংঘনকারীদের অপরাধ নেই! তারা চুপ কেন?

শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতপক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম আমরাও করেছি। কিন্তু বাংলাদেশে আন্দোলনের নামে যে রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হয় এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৮ অক্টোবর বিএনপি ও অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল সমাবেশ করতে চেয়েছিল। আমরা বাধা দিই নাই। তারা কথা দিয়েছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। কিন্তু দেখা গেলো শান্তিপূর্ণ না, সেখানে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। সেখানে আমাদের কেউ ছিল না, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমার নির্দেশ ছিল একেবারে দূরত্বে থাকা…. সেখানে সাংবাদিকদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা অমানবিক। আমার মনে হয়, সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে পেটানোর ন্যাক্কারজনক ঘটনা বাংলাদেশে আর হয়নি। এটা কেন করা হলো? সে প্রশ্নের জবাব তো বিএনপিকে দিতে হবে। পুলিশের ওপর অত্যাচার, এর আগেও আমরা দেখেছি। পুলিশকে মাটিতে ফেলে পেটানো হচ্ছে, শুধু পেটানো না, বেহুঁশ হয়ে গেছে, তারপরও মারা হচ্ছে, কোপানো হচ্ছে, সমানে ডিল মারা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে আসছে, এত ইট-পাথর কোথায় পেলো? তার মানে তাদের উদ্দেশ্যটাই ছিল খুবই খারাপ।

তিনি আরও বলেন, আপনাদের মনে আছে, ২০১৩-২০১৪ সালেও তারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল নির্বাচন ঠেকাতে, কিন্তু পারেনি। নিজেরাও অংশগ্রহণ করেনি। হত্যা, গুম, খুন— তারা খুব ভালো পারে। পুলিশ হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে হামলা, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা করার মতো অমানবিক আচরণ একটা রাজনৈতিক দলের হয় না। আপনারা বোধয় ভুলে যাননি, বিএনপির আমলে প্রেস ক্লাবে পুলিশ ঢুকিয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের পেটানো হয়েছিল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডই এদের চরিত্র। পুলিশ-সাংবাদিকের ওপর যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে এর তীব্র নিন্দা জানাই। দেখলাম আমাদের কোনো কোনো পত্রিকা তাদেরকে কাভার দেয়ার চেষ্টা করে, তাদের ধিক্কার জানাই, তাদের ধিক্কার জানাই। প্রকাশ্যে দিবালোকের ঘটনা, এখন ডিজিটাল যুগ, সব দেখা যায়।

ফিলিস্তিনের হাসপাতালে ইসরায়েল যেমন হামলা করেছে, বিএনপিও তেমনিভাবে পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে, এমন শিক্ষা ইহুদীদের কাছ থেকে পেয়েছে কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বললেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে যারা বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে তাদের অধিকার নেই।

আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে মুক্ত গণমাধ্যমের দেশে পরিণত করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান আরও বলেন, দেশের মানুষের তুলনায় সংবাদপত্র অনেক বেশি, অনেক উন্নত দেশেও তা নাই । বর্তমানে আমাদের পত্রিকার সংখ্যা ৩২৪১টি। অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল রয়েছে ৩৮৭টি। বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি ৩৩টি টেলিভিশন সম্প্রচারে রয়েছে।

যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের মুখোশ উন্মোচনে এ সময় আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট্রে দশ কোটি টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণাও দেন তিনি।

বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। বিএফইউজে মহাসচিব দীপ আজাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply