বিশ্বকাপে নিজেদের নবম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালের আরও কাছে পৌঁছে গেলো নিউজিল্যান্ড। আগে ব্যাট করতে নেমে ট্রেন্ট বোল্ট, মিচেল স্যান্টনার ও লকি ফার্গুসনের বোলিং তোপে ২০ বল বাকি থাকতেই মাত্র ১৭১ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ড্যারেল মিচেল, ডেভন কনওয়ে, রাচিন রবীন্দ্র এই ৩ জনের চল্লিশার্ধো রানের ওপর ভর করে ১৬০ বল হাতে রেখেই সহজ জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে, এই হারের ফলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার আশা অনেকটা শেষ হয়ে গেলো শ্রীলঙ্কার।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার দেয়া মাঝারি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্রার ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় নিউজিল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৮৬ রান। ৪২ বলে ৪৫ রান করা কনওয়েকে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন দুষ্মন্ত চামিরা। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রবীন্দ্রও। ৩৪ বলে ৪২ রানের দারুণ ইনিংস খেলে মাহিশ থিকসানার বলে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ক্যাচ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ইনিংস বড় করতে পারেননি উইলিয়ামসন। মার্ক চ্যাপম্যান ফিরেছেন রান আউটের ফাঁদে কাটা পড়ে।
দারুণ ব্যাটিং করে কিউইদের জয়ের পথেই রাখেন ড্যারেল মিচেল। তবে তিনিও ফিরেছেন ফিফটি মিসের হতাশা নিয়ে। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩১ বলে ৪৩ রান। এরপর দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন গ্লেন ফিলিপস ও টম ল্যাথাম। শ্রীলঙ্কার হয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। একটি করে উইকেট শিকার করেছেন মাহিশ থিকসানা ও দুষ্মন্ত চামিরা।
এদিকে, এই জয়ে ৯ ম্যাচ শেষে ১০ পয়েন্ট নিয়ে চারে আছে নিউজিল্যান্ড। সেমিফাইনালে উঠতে রানরেটেও (+০.৭৪৩) বেশ শক্ত অবস্থানে আছে তারা। তাই তাদের টপকে সেমিফাইনালে যেতে হলে নিজেদের শেষ ম্যাচে বিশাল ব্যবধানে জিততে হবে পাকিস্তান (+০.০৩৬) ও আফগানিস্তানকে (-০.৩৩৮)। অন্যদিকে বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ হেরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার স্বপ্নে বড় ধাক্কাই খেল শ্রীলঙ্কা। ৯ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের নয়ে আছে তারা।
এর আগে, টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩ রানে পাথুম নিশাঙ্কার উইকেট হারায় লঙ্কানরা। টিম সাউদির গুড লেন্থের বল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক টম লাথামের হাতে ধরা পড়লে ২ রানে ফেরেন এই ওপেনার। নিশাঙ্কা ফিরলেও ব্যাট হাতে রীতিমতো তাণ্ডব চালাতে থাকেন কুশল পেরেরা। একের পর এক বাউন্ডারি ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন লঙ্কান এই ড্যাশিং ওপেনার।
একপ্রান্তে কুশল পেরেরা তাণ্ডব চালালেও অন্যপ্রান্তে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে লঙ্কানরা। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে জোড়া উইকেট তুলে লঙ্কানদের টপ অর্ডার গুড়িয়ে দেন বোল্ট। কুশল মেন্ডিসকে ৬ ও সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফেরান ১ রানে। অন্যপ্রান্তে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ২২ বলে ফিফটি তুলে নেন পেরেরা। সেই সাথে চলতি বিশ্বকাপে দ্রুততম ফিফটির মালিকও নিজের করে নেন লঙ্কান এই বাঁহাতি ব্যাটার। তবে নবম ওভারে এসে আসালাঙ্কাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ফের লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন বোল্ট। আর পাওয়ারপ্লে’র শেষ ওভারে লকি ফার্গুসনের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে টপ এজ হয়ে সাজঘরে ফেরেন পেরেরা। ২৮ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৫১ রান করেন এই ওপেনার। ফলে মাত্র ৭০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে লঙ্কানরা।
সেখান থেকে দলকে টানেন আঞ্জোলা ম্যাথুস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ৩৪ রানের জুটি। ম্যাথুসকে ১৬ রানে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন স্যান্টনার। এরপর ১৯ রানে ধনাঞ্জয়া দি সিলভাকেও শিকার করেন স্লিপে ক্যাচ বানিয়ে। এক রানে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে হারিয়ে ১০৫ রানেই সাত উইকেটে খুইয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। একাদশে ফেরা চামিকা করুনারত্নেও এক অঙ্কে ফিরে যান।
শ্রীলঙ্কার অলআউট হওয়াটা খুব নিকটেই ছিল। রাচিন রবিন্দ্র এসে চামিরার উইকেট নিতে পারলেও অন্যপাশে মাহেশ থিকশানা গেড়ে বসেন। একের পর এক ওভার যায়, থিকশানাকে টলাতে পারেনা কিউইরা। শেষমেশ একপাশে অপরাজিতই থেকেছেন ৯১ বলে ৩ চারে ৩৮ রান করে। শেষ উইকেটে দিলশান মাদুশাঙ্কা এসে ৪৮ বলে ১৯ রান করে যোগ্য সঙ্গ দিলে তারা জুটি গড়েন ৪৩ রানের। দশম উইকেটের সে জুটিতে শ্রীলঙ্কার ইনিংস তারা টেনে নিয়ে যান ৪৬.৪ ওভারে। যাতে লঙ্কানদের লড়াইয়ের রসদ একটু হলেও বাড়ে।
/আরআইএম
Leave a reply