বিশ্বকাপে জয় দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ, শেষ করলো হার দিয়ে। নিজেদের নবম ও শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে তাওহিদ হৃদয়ের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে ৩০৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মিচেল মার্শের সেঞ্চুরি ও ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথের জোড়া ফিফটিতে ৩২ বল হাতে রেখেই সহজ জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। বড় ব্যবধানে হেরেও পয়েন্ট তালিকার অষ্টম স্থানেই রয়েছে টাইগাররা। সেই সাথে বেঁচে রইলো চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার স্বপ্ন।
শনিবার (১১ নভেম্বর) পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দেয়া ৩০৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে সতর্ক সূচনা করে অস্ট্রেলিয়া। যদিও বেশীক্ষণ তাদের স্থায়ী হতে দেননি টাইগার পেসার তাসকিন আহমেদ। নিজের দ্বিতীয় ওভারে মারকুটে ব্যাটার ট্রাভিস হেডকে ইনসাইড এজে বোল্ড করে বিদায় করেন তাসকিন। তার ব্যাক অব দ্যা লেন্থ ডেলিভারিটি হেডের ব্যাটে লেগে স্টাম্পে আঘাত করে। ফেরার আগে ১১ বলে ১০ রান করেন অজি এই ওপেনার।
হেড ফিরলেও দ্রুত রান তুলতে থাকেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। ক্রিজে এসেই আগ্রাসীভাবে খেলতে থাকেন মার্শ। শেখ মেহেদীর একই ওভারে তিনটি চার মারেন তিনি। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদকে একটি করে চার ছক্কা মারেন তিনি। অষ্টম ওভারেই দলীয় রান পঞ্চাশ ছাড়ায় অজিদের। ৩৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মার্শ। এরপর ৫২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পান ওয়ার্নার।
হাফ সেঞ্চুরির পর ওয়ার্নারকে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি মোস্তাফিজুর রহমান। এই টাইগার পেসারের ফুলার লেন্থ বলে মিড অনে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে। ৫৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই অজি ওপেনার। ওয়ার্নার ফেরার পরই সেঞ্চুরির দেখা পান মার্শ। ৮৭তম বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন এই অলরাউন্ডার। চলতি বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
সেঞ্চুরির পর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মার্শ। প্রতি ওভারেই চার-ছক্কা হাঁকিয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে সিঙ্গেলস-ডাবলস নিয়ে ম্যাচ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্টিভ স্মিথও। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩২তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন স্মিথ। এদিকে মার্শও ১৫০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে যান। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৭৫ রানের জুটিতে ৫.২ ওভার বাকি থাকতেই ৮ উইকেটের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত স্মিথ অপরাজিত ছিলেন ৬৪ বলে ৬৩ রান করে, মার্শ খেলেছেন ১৩২ বলে ১৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে, টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে দেখেশুনেই খেলতে থাকে দুই ওপেনার লিটন ও তানজিদ তামিম। অজিদেরকে পাওয়ারপ্লে’তে কোনো উইকেট উপহার না দিয়ে ১০ ওভারে ৬২ রান তুলে নেয় তারা। তবে বিপত্তি ঘটে ইনিংসের ১২তম ওভারে। শন অ্যাবটের শর্ট বলে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দেন তানজিদ। ফলে ৩৪ বলে ৩৬ রানে সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ইনিংস লম্বা করতে পারেননি আরেক ওপেনার লিটন দাসও। অ্যাডাম জাম্পার বলে বড় শট খেলতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ৫ চারের সহায়তায় ৪৫ বলে ৩৬ রান করেন তিনি।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ভালোই এগুচ্ছিলেন শান্ত ও হৃদয়। তবে তাদের ৬৩ রানের জুটিতে আঘাত হানে রান আউট। শন অ্যাবটের বলে এগিয়ে এসে স্কয়ার লেগে পুল খেলেন শান্ত। সেখানে ফিল্ডিংয়ে ছিলেন লাবুশানে। এক রান নিতে পারলেও দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। লাবুশেনের থ্রো’তে নিজ প্রান্তের উইকেট ভেঙে দেন উইকেটরক্ষক জশ ইংলিস। ৬ চারের মাধ্যমে ৫৭ বলে ৪৫ রান করে ফেরেন টাইগার অধিনায়ক।
ইনিংসের ৩৬তম ওভারে আবারও টাইগার শিবিরে হানা দেয় রান আউট। স্ট্রাইকে ছিলেন তাওহিদ হৃদয়। জশ হ্যাজলউডের বলটি কাভারে ঠেলেই রানের সিগন্যাল দেন তিনি। অপরপ্রান্তে থাকা মাহমুদউল্লাহও তার ডাকে সাড়া দিয়ে দৌড় দেন। তবে বল চলে গিয়েছিল আবারও লাবুশেনের হাতে। বাতাসে উড়ে ডিরেক্ট থ্রোতে উইকেট ভেঙে দেন তিনি। আউট হয়ে যান রিয়াদ। ৩ ছক্কা ও ১ চারের মাধ্যমে ২৮ বলে ৩২ রানে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
রিয়াদের আউটের পরে মাঠে নামা মুশফিকুর রহিমও ইনিংস বড় করত পারেননি। ২৪ বলে ২১ রান করে জাম্পার বলে অধিনায়ক কামিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও ঠিকই ক্রিজে টিকে ছিলেন তাওহিদ হৃদয়। তবে ইনিংসের ৪৭তম ওভারে মাকার্স স্টয়নিসের শিকার হন তিনি। ফুলটস বলে ঠিকমতো টাইমিং করতে না পারায় মিড উইকেটে দাঁড়ানো লাবুশেনের হাতে ক্যাচ হয়ে ফেরেন তিনি। ২ ছক্কা ও ৪ চারের মাধ্যমে ৭৯ বলে সর্বোচ্চ ৭৪ রান করেন তিনি।
তবে ইনিংসের শেষ ওভারে আরও দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ ওভারের প্রথম বলে অ্যাবটের বলে কামিন্সের হাতে ক্যাচ তুলে আউট হন মিরাজ। সাজঘরে ফেরার আগে ৪টি চারের মাধ্যমে ২০ বলে ২৯ রান করেন তিনি। একই ওভারের তৃতীয় বলে আবারও রান আউটের ফাঁদে পড়ে আউট হন নাসুম। তিনি করেন ১১ বলে ৭ রান। ৩ বলে ২ রান ও ১ বলে শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন শেখ মেহেদী ও তাসকিন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ দুইটি করে উইকেট শিকার করেন শন অ্যাবট ও অ্যাডাম জাম্পা। একটি উইকেট পেয়েছেন মাকার্স স্টয়নিস। বাকি তিনটি রান আউট।
Leave a reply