সরগরম ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাচনী মাঠ

|

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করলেও দল গোছানোর কাজটাও গোপনে করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের নির্যাতন-নিপীড়ন ও বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের সুযোগে ঠাকুরগাঁও-১ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। নির্বাচনে অংশ নিলেও এ আসনে মির্জা ফখরুলের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ সংখ্যালঘু ভোটার। এক লাখ ৪০ হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে (২৩ ভাগ ভোটার) কাছে টানতে না পারলে ফের আসনটি হারাতে পারেন হেভিওয়েট এ প্রার্থী।

ঠাকুরগাঁও-১ আসন মূলত আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর এ আসনে ৭ বার ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। ১৯৯১ সালে ঠাকুরগাঁও সদর আসনটিতে প্রথম নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খাদেমুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২০০১ সালে বর্তমান এমপি রমেশ চন্দ্র সেনকে হারালেও ২০০৮ ও ২০১৮ সালে রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে ফের হারেন বিএনপি মহাসচিব।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনসহ দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন আরও বেশ কয়েকজন নেতা। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়া, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ করতে দেখা যাচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিপক কুমার রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক রুবেল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট অরুণাংশু দত্ত টিটো এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম খাদেমুল ইসলামের দ্বিতীয় ছেলে সাহেদুল ইসলাম সাহেদ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮১ হাজার ৪৮৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪১ হাজার ৬৫৯ জন আর নারী ২ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৮ জন। এ আসনে ভোটকেন্দ্র ১৮৫ আর ভোটকক্ষ ১ হাজার ৭২টি।

এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরগরম ঠাকুরগাঁও-২ আসনের নির্বাচনী মাঠ। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম। ১৯৯১ সালে সিপিবি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলাম আওয়ামী লীগে যোগ দেন ১৯৯৬ সালে। দীর্ঘ ৩৫ বছর শাসন করছেন তিনি। এমপি দবিরুলের জনপ্রিয়তায় অন্য কোনো দলের প্রার্থী জয়ের মুখ দেখতে পারেনি।

এ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ তুলনামূলক এগিয়ে। তবে বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে হিন্দুদের জমি দখল, স্বজনপ্রীতি, দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করার অভিযোগ উঠেছে।

আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন দবিরুল ইসলাম। কোনো কারণে তিনি না পেলে নৌকার মাঝি হতে চান তার বড় ছেলে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সুজন। এছাড়া, হেভিওয়েট তালিকায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আলম টুলু ও সহসভাপতি প্রবীর কুমার রায়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পিতা মির্জা রুহুল আমিন ১৯৭৯ সালে এ আসনে বিজয়ী হন। গুঞ্জন আছে। মির্জা পরিবারের কেউ এবার নির্বাচন করতে পারেন। তবে ড্যাবের মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ আলম, সাধারণ সম্পাদক ড. টি এম মাহবুবর রহমান ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার মর্তুজা চৌধুরী তুলা মনোনয়ন চাইতে পারেন।

প্রধান দুই দলের বাইরে আলোচনায় আছেন জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম এবং জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুন নাহার বেগম।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭০১ জন আর নারী ১ লাখ ৫৪ হাজার ২৭৬ জন। এ আসনে ভোটকেন্দ্র ১০৪ আর ভোটকক্ষ ৭০৪টি।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনেও বইছে নির্বাচনী হাওয়া। পীরগঞ্জ, রানীশংকাইল উপজেলার রানীশংকাইল পৌরসভা, নেকমরদ, হোসেনগাঁও, লেহেম্বা, বাচোর, রাতোর ও নন্দুয়ার ইউনিয়ন নিয়ে এ আসন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনটি বগুড়া-৫ নামে পরিচিত ছিলো। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে পরিচিত ছিল দিনাজপুর-৫। ১৯৮৪ সালে আলাদা জেলা হলে আসনটি ঠাকুরগাঁও-৩ হিসেবে পরিচিতি পায়।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ভোটার ছিল ৩ লাখ ১৬৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির জাহিদুর রহমান পান ৮৮ হাজার ৫১০ ভোট। মহাজোট সমর্থিত ওয়ার্কাস পার্টির ইয়াসীন আলী নৌকা প্রতীকে পান ৩ হাজার ৮৬২ ভোট।

বিএনপি সারাদেশের নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখান করলেও দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন জাহিদুর রহমান। ২৭ এপ্রিল বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে, একই বছরের ৮ আগস্ট তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমানসহ বিএনপির ৭ জন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেন। শূন্য আসনে ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। জৌলুশবিহীন এই উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছায়া সমর্থিত জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দীন বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৯৪ হাজার ৪৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোপাল চন্দ্র রায়। একতারা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৩ শত ৯ ভোট।

ঠাকুরগাঁও-৩ সংসদীয় আসনটিতে প্রথম, দ্বিতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলেও জাতীয় রাজনীতির কৌশলগত কারণে জাতীয় পার্টি এবং ওয়ার্কাস পার্টিকে সমর্থন দেয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কী কৌশল নেয়, তার ওপর নির্ভর করছে ঠাকুরগাঁও-৩ সংসদীয় আসনে কে হবেন পরবর্তী জনপ্রতিনিধি। আসনটি কোনো দলেরই ঘাঁটি নয়, ফলে ভোটের লড়াই জমবে বলেই আশাবাদী ভোটাররা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮০ জন আর নারী ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৩ জন। এ আসনে ভোটকেন্দ্র ১২৮ আর ভোটকক্ষ ৭৩৪ টি।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply