আগের মতো নির্বাচন করা ইসির জন্য কঠিন হবে: বিশিষ্টজনদের মত

|

আলমগীর স্বপন:

তফসিল ঘোষিত হলেও এবার আগের মতো নির্বাচন করা কমিশনের জন্য কঠিন হবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় সমঝোতার সম্ভাবনাও দেখেন না তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বললেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুই নির্বাচন কমিশন যত সহজে ভোট করতে পেরেছে, এখনকার কমিশনের পক্ষে অত সহজ হবে না বলে আমার ধারণা। কারণ, গত ১০ বছরে নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে।

এদিকে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোটের হরতাল-অবরোধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ভয়, সংলাপের চিঠির পরও নির্বাচনের পথে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ অবস্থায় আরও কঠোর কর্মসূচি পালনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো সরাসরি মাঠে নামতে পারে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তাই নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে এ নিয়ে প্রশ্ন আছে তাদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ব্যাপারটি বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যজনক। আগামী কিছুদিন সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, আমরা এই সংঘাত-সংঘর্ষ এড়াতে পারতাম।

এ অবস্থায় নির্বাচনের আগে ও পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। সরকারবিরোধীদের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমারা কি সামনে আরও সরব হবে?

অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে, ডোনাল্ড লু যে চিঠি দিয়েছেন সে অনুযায়ী তারা কোনো সংলাপ করবে না। তারা এই চিঠির কোনো জবাবও দেবে না। কাজেই জিনিসটাকে আমরা যত সহজ মনে করছি, ততটা না। যারা আমাদের ক্রেতা রাষ্ট্র, মানে আমাদের পণ্য যারা কিনে, তারা আমাদের জিনিস কিনবে কি না, কিনলে কোন শর্তে কিনবে, বিশেষ সুবিধা বা ছাড় দেয়া হবে কি না— এগুলো ওরা নির্ধারণ করে। একপর্যায়ে হয়তো তারা ভূ-রাজনীতির স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের স্বার্থের ওপরও দারুণভাবে আঘাত আনতে পারে, আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একতরফা নির্বাচন হলে যেটা ঘটবে তা হলো সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন… ২০১৪ ও ২০১৮ এর দুইটি নির্বাচনের জন্য তাদের প্রতি আর বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না।

ঘোষিত তফসিল মেনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা রয়েছে বিএনপিসহ ১৫টির বেশি নিবন্ধিত দলের। যদিও সিইসি সব দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধানের। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তা কতটা সম্ভব, যখন পশ্চিমারাও চায় শর্তহীন সংলাপ।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দল তো সেদিকে কর্ণপাত করছে না। আশা করবো, তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। জনগণ বলেছে যে, সংলাপের একমাত্র বিকল্প সংলাপ।

অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, তারা কেউ একে অপরের সঙ্গে দেখাদেখি করতেও রাজি না। এই অবস্থায় আমি সংলাপের কোনো বাস্তব ভিত্তি দেখতে পারছি না।

এই বিশ্লেষকরা মনে করেন, সমঝোতা না হলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গভীর সংকটে পড়বে বাংলাদেশ।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply