শরিফুল ইসলাম খান:
২৮ অক্টোবরের পর থেকে অনেকটাই টালমাটাল বিএনপি। বলা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এত বড় সংকটে আগে কখনও পড়েনি দলটি। এর মধ্যেই কেউ কেউ ছাড়ছেন দল। তবে তা আমলে নিচ্ছে না বিএনপি, এমন দাবি নেতাদের।
অন্যদিকে পুরানো মামলায় সাজা হচ্ছে অনেক বিএনপি নেতাদেরই। বেড়ে চলছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। জানা গেছে, ২৩ নভেম্বর একদিনেই বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে ১৭৯ নেতার।
এমন অবস্থায় বিএনপির অভিযোগ, পুলিশি অভিযান আর মামলা-হামলায় ঘর-বাড়ি ছেড়েছেন দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী। আত্মগোপনে আছেন সিনিয়র নেতারা। ফলে হাল ধরতে হচ্ছে মধ্যম সারির নেতাকর্মীদের।
যদিও এর মধ্যেই বিএনপি নেতারা নিয়মিত হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। তারা বলছেন, মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবে না। রাজপথে লড়বেন এবং দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবেন।
এদিকে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে সারাদেশে দলটির প্রায় সব জেলা কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। গাজীপুর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা মেলে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে কার্যালয়টি। ১৫ বছর ধরে সেখানে ব্যবসা করা মো. সোবহান বলেন, কখনোই এতো নিষ্প্রাণ অবস্থা দেখেননি তিনি।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি কার্যালয়েও দেখা মেলে একই অবস্থার। নেতাকর্মীদের আনাগোনা নেই। নেই কোনো ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম। জানা গেছে, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তালা ঝুলছে সেখানে।
পরিস্থিতি বদলের স্বপ্ন নিয়ে রাজধানীতে বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে এসেছিলেন অনেকেই। তবে তারা ফিরেছেন এক বুক হতাশা নিয়ে। মামলা-হামলা-গ্রেফতার আর পুলিশি অভিযানে বিধ্বস্ত-বিপর্যস্ত হয়ে গেছে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো। সব মিলিয়ে চরম সংকটময় সময় অতিক্রম করছে দলটি।
তবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলছেন, সংকট বিএনপির নয়, সংকট বাংলাদেশের। এখনও সময় আছে। যদি সংসদ ভেঙে দেয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হয় তাহলে সমস্যার সমাধান হবে।
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, সাজা দিয়ে আন্দোলন থামানে যাবে না। মিথ্যা মামলায়, মিথ্যা সাজা দিয়ে কখনোই আন্দোলনকে থামিয়ে রাখা যাবে না। সকল বাধা উপেক্ষা করে এই সরকারের বিপক্ষে গণআন্দোলন গড়ে উঠছে।
নেতাদের মুখে দৃঢ়তা থাকলেও বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে অনেকটাই হিমশিম অবস্থায় বিএনপি। ভারসাম্যহীন প্রায় সব সাংগঠনিক ইউনিট। অভিযোগ রয়েছে, নেতাদের সঙ্গে স্বাভাবিক যোগাযোগ নেই কর্মীদের। ব্যাহত হচ্ছে পারিবারিক জীবনও।
জটিলতা বাড়ছে কর্মসূচি বাস্তবায়নেও। সাংগঠনিক খরচও জোগাতে পারছে না অনেক ইউনিট। এর বাইরে আরও অভিযোগ আছে মাঠের কর্মী-সমর্থকদের। বলছেন, পদধারী অনেকেই দায়িত্ব পালন করছেন না। ঠিকমতো খোঁজখবর নিচ্ছেন না গ্রেফতার-আটকদের ব্যাপারে। অভিযানের অজুহাতে গা ঢাকা দিয়েছেন অনেক নেতা, বন্ধ রাখছেন মোবাইল ফোন, নয়তো পাল্টে ফেলেছেন আগের নম্বর। এমন নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আবার সাহস নিয়ে রাজপথে সক্রিয় আছেন অনেকে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক অবস্থা না থাকলে তো অন্য পথে যেতে হয়। আমাদের তো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আন্দোলন ছাড়া এখন আর কোনো উপায় নাই।
ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়ে গেছে ভোটের দিনক্ষণ। একইসাথে বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক সমীকরণ। লম্বা সময় আন্দোলন চালিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে মাঠের নেতাকর্মীদের। সরকারও হার্ড লাইনে। সব মিলিয়ে হতাশা বাড়ছে, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে।
এছাড়া দলছুট অনেকেই নৌকায় চেপে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। বিএনপির বহু বছরের পুরানো জোট সঙ্গীরাও বোল পাল্টে ফেলেছে। কেউ আবার দল ছেড়ে নেমে গেছে ভোটযুদ্ধে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কী আরও জটিল হলো বিএনপির জন্য?
এমন প্রশ্নের জবাবে দ্বিমত পোষণ করে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, কয়জন গেছে? দুই-একজন, এরা আগেই বহিষ্কার হয়েছে। অনেকভাবেই অনেককে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু পারেনি।
/এমএইচ/এমএন
Leave a reply