নির্বাচনকে ঘিরে এখন সপ্তাহে মোটামুটি ৬ দিনই থাকছে অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি। আর এতে বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতিও। পরিবহণ, পর্যটন, খুচরা-পাইকারি ব্যবসাসহ নানা ক্ষেত্রেই পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। অর্থনীতির পরিধি বড় হওয়ার কারণে ক্ষতির ক্ষেত্রেও হয়েছে বিকেন্দ্রিকরণ। বলা হচ্ছে, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি’র আকার ধরে দিনে ক্ষতি দাঁড়াচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা। কয়েক দফায়, গেল ২০ দিনের অবরোধ-হরতালে ক্ষতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচি এড়িয়ে চলা উচিত।
সরকারি হিসেবে নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও বাজার জুড়েই হাঁসফাস অবস্থা। শুধু খাদ্যপণ্যই নয়, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। মূলত বৈশ্বিক মন্দা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকটে তৈরি হয়েছে এমন বিশৃঙ্খলা।
হরতাল এবং অবরোধের দৈনিক ক্ষতি নিয়ে ২০১৩ সালে হিসাব তুলে ধরেছিল ব্যবসায়ী সংগঠন ডিসিসিআই। তখনকার হিসেবে এমন কর্মসূচিতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে অর্থনীতির আকার বাড়ায়, বর্তমান সময়ে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে অনেকগুণ।
এনিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি সামীর সাত্তার বলেন, যুদ্ধ, মূল্যবৃদ্ধি এবং জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীরা এমনিতেই চিন্তিত। সেখানে হরতাল-অবরোধের কারণে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাটা বেড়েছে আরও।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিসের (বিআইআইএসএস) গবেষক গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীরের মতে, এখন অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হলো ৫০ হাজার কোটি টাকা। তবে সম্প্রতি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। তার মতে, বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে তৈরি পোশাক, পরিবহন, রাজস্ব, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা, পর্যটন, ব্যাংক ও আর্থিক খাত। শুক্র, শনি এবং মঙ্গলবার বাদ দিয়ে মোট ২০ দিনের এমন কর্মসূচিতে ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা।
অবশ্য অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত হওয়ার কারণে ক্ষতির তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ছে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। দেশের মূল উৎপাদন অনেক বেশি বলে ক্ষতিটা সইতে পারলেও, সেই সহনসীলতারও একটা সীমা আছে। ফলে গায়ের জোরে রাজনীতি করার প্রবণতা কমাতে হবে। তারা মুক্তবাজার অর্থনীতি চায়, গণতন্ত্র চায়, অথচ আলোচনা করবে না, এ কেমন কথা?
উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে কর্মসংস্থানও ব্যহত হবে। বিশ্বের বুকে তৈরি হবে ইমেজ সংকট।
এসজেড/
Leave a reply