উগান্ডায় ব্যবহৃত পোশাক বিক্রির বিরুদ্ধে সরকারি নিষেধাজ্ঞা

|

কাম্পালার বৃহত্তম সেকেন্ডহ্যান্ড কাপড়ের বাজার ওউইনোতে গ্রাহকদের জন্য অপেক্ষা করছেন একজন নারী বিক্রেতা। ছবি: আল জাজিরা।

উগান্ডা বিশ্বের ব্যবহৃত পোশাকের প্রায় এক অষ্টমাংশ আমদানি করে। ব্যবহৃত পোশাক বিক্রির কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার মানুষের।

বিশৃঙ্খল ও উপচেপড়া ভিড় থাকা সত্ত্বেও প্রায় তিন দশক ধরে, উগান্ডার রাজধানীতে অবস্থিতি ওউইনো সেকেন্ডহ্যান্ড মার্কেটটি অনেক মানুষের জীবনের মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাদিজা নাকিমুলির বিধবা হবার পর, ১২ সন্তান ও থাকার একটি বাড়ি তৈরি করতে মার্কেটের দোকানটিই সাহায্য করছে। কিন্তু ব্যবহৃত পোশাক বিক্রির উপর একটি সম্ভাব্য সরকারি নিষেধাজ্ঞা নাকিমুলী এবং তার মতো হাজার হাজার বিক্রেতার জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ লাইফলাইনটি ছিন্ন করার হুমকি দিচ্ছে।

হাদিজা নাকিমুলির দাবি, যদি সরকারি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয় এবং সেকেন্ডহ্যান্ড কাপড় বিক্রি বন্ধ হলে আমাদের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

ব্যবহৃত পোশাক বিক্রি করে প্রতি বছর এ খাত থেকে ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে উগান্ডা। কাম্পালা শহরের কর্তৃপক্ষের মতে, ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত মার্কেটে বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার ব্যবসায়ী রয়েছে, যাদের ৭০ শতাংশ নারী।

প্রতিদিন, শত শত গ্রাহক অস্থায়ী কাঠের স্টলগুলোতে ভিড় করেন এবং দর কষাকষি করে ব্যবহৃত পোশাক কম দামে ক্রয় করে থাকেন। এখানে, একটি সেকেন্ডহ্যান্ড পিয়েরে কার্ডিনের ব্লেজার ৪০ হাজার উগান্ডার শিলিং, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মাত্র $১১ মার্কিন ডলার। নতুন কিনতে গেলে গুনতে হবে ১০ গুন বেশি টাকা।

উগান্ডার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ডেভিড বাহাতি বলেছেন, এটা ‘মর্যাদার’ প্রশ্ন। যদি প্রস্তাবিত নিষেধাজ্ঞা আলোর মুখ দেখে তাহলে আমরা এই সেকেন্ড-হ্যান্ড কাপড়ের মার্কেটটি প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হব।

এর আগে, ২০১৬ সালে, মুসেভেনি পোশাক শিল্পের বিকাশের জন্য ব্যবহৃত পোশাক নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। তবে সেই সময়ে কাম্পালা সিটি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের উল্লেখযোগ্য বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল তৎকালীন সরকার। ফলে তখন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

ব্যবহৃত পোশাক বিক্রি করে প্রতি বছর এ খাত থেকে ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে উগান্ডা।
কাম্পালা শহরের কর্তৃপক্ষের মতে, ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত মার্কেটে বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার ব্যবসায়ী রয়েছে, যাদের ৭০ শতাংশ নারী।
ওউইনো সেকেন্ডহ্যান্ড মার্কেটের আরেকজন ব্যবসায়ী জোসেফ বারিমুগায়া বলেন, আমার স্টলে পুরুষদের পোশাক রয়েছে। ছাত্রদের পাশাপাশি ক্লায়েন্টদের তালিকায় রয়েছে মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য। যারা আমাকে তাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে জামাকাপড় সরবরাহ করার জন্য ডাকেন। সেগুলো বিক্রি করে আমার সংসার ভালই চলছে। জোসেফ বারিমুগায়া মনে করেন, এই বাণিজ্যের সাথে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। সরকারসহ সবাই এই মার্কেট থেকে সুবিধা পায়। সাথে ট্যাক্সও পায়।
উগান্ডায় সবাই সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক পরে। শুধুমাত্র কিছু লোকই নতুন জামাকাপড় কিনতে সক্ষম বলে জানান থিঙ্ক টোয়াইসের ব্যবস্থাপক অ্যালান জাভুগা।
২৭ বছর বয়সী টুইমুকেয়ে মার্কেটে পোশাক কিনতে এসে বলেন, একজন শিক্ষিকা হিসাব প্রতি মাসে আমি ৫ লক্ষ শিলিং আয় করি, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মাত্র $১৩১ মার্কিন ডলার। আমি যদি একটি নতুন পোশাক কিনতে চাই, এর মানে হল আমাকে সমস্ত বেতন পোশাকের জন্য ব্যয় করতে হবে।

উগান্ডার বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ডেভিড বাহাতির মতে, সেকেন্ড-হ্যান্ড কাপড়ের মার্কেটটি প্রতিস্থাপন একদিনে করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে চাই।
জানুয়ারিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য সরকার বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কূটনৈতিক বিবেচনাও একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। প্রাথমিকভাবে, পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায় আঞ্চলিক ব্লক একটি ঐক্যফ্রন্ট স্থাপন করেছিলো। তবে কেনিয়া, তানজানিয়া এবং উগান্ডা মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার হারানোর পর, প্রতিশোধমূলক ক্ষতির সম্ভাবনার বিষয়টি উঠে এলে জোট ভেঙে যায়।
শেষ পর্যন্ত, রুয়ান্ডা একাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২০১৬ সালে ব্যবহৃত পোশাকের ওপর কর আরোপ করে, যার ফলে আমদানিতে তীব্র হ্রাস ঘটে এবং চাহিদা মেটাতে সেকেন্ডহ্যান্ড পণ্যের চোরাচালান বৃদ্ধি পায়। দুই বছর পরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া একটি টিট-ফর-ট্যাট পদক্ষেপে রুয়ান্ডা থেকে পোশাকের জন্য শুল্ক-মুক্ত সুবিধা স্থগিত করা হয়।
ওউইনোতে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মন থেকে অনেক দূরে ভূ-রাজনীতি। দ্বিতীয় প্রজন্মের দোকানদার হ্যারিয়েট মুসোকে কিম্বাড্ডে বলেন, সরকার সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কার সাথে পরামর্শ করেছিল? এই ব্যবসা নিষিদ্ধ হলে ৩ সন্তান নিয়ে আমাকে পথে বসতে হবে।
গ্রাহকদের জন্য অপেক্ষা করার সময় একজন ব্যক্তি সেকেন্ড-হ্যান্ড কাপড় বিক্রি করছেন। (ছবি এবং প্রতিবেদন আল জাজিরা’র)

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply