জামালপুর করেসপনডেন্ট:
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্ত্রীকে তালাক দিলেন জাকির হোসেন জেকে (৪৫) নামের এক যুবক। তিনি নিজেকে চরবানী পাকুরিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক বলে দাবি করেন।
গত মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) উপজেলার চরবানীপাকুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের রান্ধুণীগাছা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এই দম্পতির ৮ বছরের ছেলে ও ৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
সাংসারিক জীবনে বনিবনা না হওয়া এবং স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে গ্রামের মসজিদের মাইকে স্ত্রীকে তালাকের ঘোষণা দেন জাকির। এর পরপরই জাকির এ বিষয় নিয়ে একটি টিকটক ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেন। পরে নানা মন্তব্যের কারণে তিনি ভিডিওটি সরিয়ে ফেলেন।
স্থানীয়রা জানায়, জাকির এর আগেও কয়েকবার তার স্ত্রীকে মৌখিক ভাবে তালাক দেয়। তবে বিষয়টি কেউ আমলে নেয়নি। এতে শেষ পর্যন্ত মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মঙ্গলবার আছরের নামাজের পর মসজিদে ঢুকে মাইকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিজের বউকে তালাক প্রদান করে সে। তবে এমন উদ্ভট কাজের জন্য জাকিরের বিচারও চেয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে এ ঘটনায় জাকিরের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী শিখা আক্তার বলেন, জাকির মসজিদের মাইকে আমাকে তালাকের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সেটি ছড়িয়ে দিয়েছে। গত ১০বছর ধরে বিয়ে হলেও নির্যাতনের শিকার হয়ে স্বামীর বাড়িতে টিকতে পারিনি একদিনও। আমাদের একটি ছেলে ও মেয়ে সন্তান রয়েছে। এ সময় যে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে তাকে তালাক দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন শিখা।
শিখা আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে জাকির আমাকে দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়াতে চেয়েছেন, সেটা না করায় আমাকে আজ এই অবস্থা করেছে। আমি এই বিচার চাইতে গেলে আমাকে আদালতেও নির্যাতন করে। জাকির আরও বিয়ে করেছে আমি তার চার নম্বর স্ত্রী। আমি এর বিচার চাই৷ কেন সমাজের কাছে আমাকে ছোটো করা হলো?
এ বিষয়ে জাকির হোসেন জেকে বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে মসজিদের মাইক দিয়ে তালাক দিয়েছি। এছাড়া তিন কেজি দুধ দিয়েও গোসল করেছি। আমার স্ত্রী ঝগড়াটে, অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও বাড়িতে এসে না থাকায় তালাক দিয়েছি। দু একদিনের মধ্যে আদালতের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ পাঠাবো।
স্থানীয় চরবানী পাকুরিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম স্বপন বলেন, আমাদের কাছে সেই নারী এসেছিলো। আমাদের চেয়ারম্যান তাকে আদালতে অথবা থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে আমরা বিষয়টি গ্রাম্য আদালতের মাধ্যমে দেখতে পারবো।
হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্কের জামালপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব আরজু আহমেদ বলেন, এটি একটি নারীর জন্য অবমাননাকর ঘটনা। সেই সাথে সমাজিক অবক্ষয় কত টুকু হয়েছে তার দৃষ্টান্ত আমরা পেলাম। আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়।
আরএইচ/এটিএম
Leave a reply