সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা
প্রায় ২২ বছর পর আবারও ফিরে এলো ভারতের সংসদে হামলার সেই পুরনো আতঙ্ক। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দ্বিতীয়ার্ধে লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন নবনির্মিত সংসদ ভবনের দর্শক গ্যালারি থেকে অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের চেয়ারে লাফিয়ে পড়েন দুই যুবক। তাদের মুখে ছিল ‘স্বৈরতন্ত্র চলবে না’ এবং ‘জয় ভিম’ স্লোগান।
বড় কিছু ঘটার আগেই সংসদের নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত তাদের ধরে ফেলেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সাগর শর্মা ও মনরঞ্জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এদিন জিরো আওয়ার চলার সময় লোকসভার দর্শক আসন থেকে দু’জন প্রথমে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারপর ছুটে যেতে উদ্যত হয় স্পিকারের আসনের দিকে। একপর্যায়ে তারা নিজেদের জুতার মধ্যে লুকিয়ে রাখা ক্যানসদৃশ একটি বস্তু থেকে ধোঁয়া ছড়াতে শুরু করে।
এ ঘটনার পরপরই সংসদ সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকজন সদস্য ওই যুবককে ঘিরেও ফেলেন। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে দু’জনকে গ্রেফতার করে। এরইমধ্যে সংসদ মূলতবীও ঘোষণা করা হয়।
দুপুর ২টায় ফের অধিবেশন শুরু হলে স্পিকার ওঁম বিড়লা জানান, পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এক বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চে লাফিয়ে লাফিয়ে হামলাকারীরা হলুদ রঙের গ্যাস ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন। এই ঘটনার পরেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে এই দাবি তুলে প্রতিবাদে সরব হন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।
এদিকে ঘটনার পর একাধিক সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে একটি ভিজিটরস পাস উদ্ধার করা হয়েছে। সেটি ঘিরেও চলছে তদন্ত।
এদিনের এই ঘটনা ২২ বছর আগে সংসদে জঙ্গি হামলার স্মৃতি উসকে দেয়। সে সময় সংসদের ভেতরে-বাইরে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। রীতিমত রেড এলার্ট জারি করা হয় পার্লামেন্ট চত্বরে।
প্রসঙ্গত, আজ বুধবারই কুখ্যাত সংসদ হামলার ২২ বছর পূর্তি। ২০০১ সালে ১৩ই ডিসেম্বর আচমকাই পুরনো সংসদ ভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে সংসদ ভবন চত্বরে ঢুকে পড়ে পাঁচ সশস্ত্র জঙ্গি। নিরাপত্তা রক্ষীদের বাঁধায় সে সময় সংসদের ভেতরে ঢুকতে না পারলেও চত্বরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে তারা। সেই হামলায় মৃত্যু হয়েছিল দুই নিরাপত্তারক্ষীসহ মোট ছয় জন আধিকারিকের। পাল্টা নিরাপত্তা রক্ষীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ জঙ্গিরই। গোটা ঘটনায় আঙ্গুল উঠেছিল পাকিস্তান সমর্থিত সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন জয়শ্রী মোহাম্মদ ও লস্কর-এ তৈয়বার দিকে। পাকিস্তান সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেও এতে দুই দেশের সম্পর্কে চূড়ান্ত অবনতি হয়।
এটিএম/
Leave a reply