দিনেশ কার্তিককে হারিয়ে দ্বিতীয় দফায় চাপে পড়েছিল ভারত। সেই চাপের মধ্যেও বুক চিতিয়ে লড়ছিলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি। এবার তারও বিষদাঁত ভেঙে দিল টাইগাররা। দুর্দান্ত অফকাটারে তাকে ফিরিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর আরো চাপ বাড়ালেন মোস্তাফিজুর রহমান। শেষ খবর পর্যন্ত ৩৮ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৭ রান করেছে ভারত। রবীন্দ্র জাদেজা ১ রান নিয়ে ব্যাট করছেন। ইতিমধ্যে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন কেদার যাদব। জাদেজাকে সঙ্গ দিচ্ছেন ভুবনেশ্বর কুমার।
এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশের দেয়া ২২৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে চড়াও হয়ে খেলেন শিখর ধাওয়ান। স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটাতে থাকেন তিনি। তবে তার এ ঝড় বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দলীয় ৩৫ রানে তাকে ফিরিয়ে টাইগারদের প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন নাজমুল ইসলাম অপু। সৌম্যর ক্যাচ বানিয়ে তাকে ফেরান তিনি। কিছুক্ষণ পর মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করে আম্বাতি রাইডুকে ফেরান মাশরাফি। তাতে ম্যাচে উত্তেজনা ফিরে আসে।
ধাওয়ানের পর খানিক ব্যবধানে ফিরে গিয়েছিলেন রাইডু। তবে থেকে গিয়েছিলেন রোহিত। দারুণ খেলছিলেন তিনি। বাজে বল পেলেই তা সীমানাছাড়া করছিলেন। এতে দুরন্ত গতিতে ছুটছিল ভারত। তাতে বাদ সাধেন রুবেল হোসেন। দলীয় ৮৩ রানে অসাধারণ এক ডেলিভেরিতে নাজমুল অপুর তালুবন্দি করে দুর্দান্ত খেলতে থাকা রোহিতকে (৪৮) ফেরান তিনি। এতে খেলায় ফেরে বাংলাদেশ।
৮৩ রানে টপঅর্ডারের ইনফর্ম ৩ ব্যাটসম্যান হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। সেখান থেকে মাহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন দিনেশ কার্তিক। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন ধোনি। হঠাৎই থামতে বাধ্য হন কার্তিক (৩৭)। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এতে ফের চাপে পড়ে ভারত।
ফাইনালি লড়াইয়ে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। গোটা টুর্নামেন্টে ওপেনিং সমস্যায় ভুগছিল টাইগাররা। তা কাটিয়ে উঠতে মেহেদী হাসান মিরাজকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে চমক দেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। এতে যেন সমাধানের পথ খুঁজে পায় বাংলাদেশ। লিটন দাস-মিরাজ মিলে এনে দেন উড়ন্ত সূচনা। উদ্বোধনী জুটিতে তারা তোলেন ১২০ রান।
মিরাজ শুধু সাপোর্ট দিয়ে যান। অন্য প্রান্তে ঝড়ো গতিতে রান তোলেন লিটন। তাদের জুটি ভাঙেন পার্টটাইমার কেদার যাদব। তাকে তুলে মারতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন মিরাজ (৩২)। এরপরই পথ হারায় বাংলাদেশ। যুজবেন্দ্র চাহালের বল ইমরুল কায়েসের প্যাডে লাগলে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। পরে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। তাতে দেখা যায়, বল বাইরে পিচ করে স্ট্যাম্পে আঘাত হানছে। তবে আম্পায়ার কল হওয়ায় সাজঘরে ফিরতে হয় বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে।
খানিক পরই কেদারের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে জাসপ্রিত বুমরাহর তালুবন্দি হয়ে ফেরেন ব্যাটিং স্তম্ভ মুশফিকুর রহিম। এরপর দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউটের শিকার হয়ে ফেরেন ইনফর্ম মোহাম্মদ মিঠুন। এতে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সেই বিপর্যয়ের মুখে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কুলদ্বীপ যাদবের বলে অযাচিত বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে বুমরাহর হাতে ধরা পড়েন তিনি।
সতীর্থদের যাওয়া-আসার মাঝে একপ্রান্ত আগলে রাখেন লিটন। শুরু থেকেই স্বভঙ্গিমায় খেলে যান তিনি। চরম বিপর্যয়ের মধ্যেই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন এ ডানহাতি ওপেনার। মাত্র ৮৭ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান। করুণ পরিস্থিতিতে লড়ে যাচ্ছিলেন লিটন। শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত আউট থামিয়ে দেয় তাকে।
সেঞ্চুরির পর হাত খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লিটন। ঠিক সেই মুহূর্তে কুলদ্বীপের বলে মাহেন্দ্র সিং ধোনির স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। ফাঁদে পড়েন বললে ভুল হবে, তাকে ট্র্যাপে ফেলা হয়। চায়নাম্যান বোলারের বলটি মিস করলেও পা দাগের মধ্যেই ছিল লিটনের। তবু রিপ্লে দেখেন আম্পায়ার। কয়েকবার জুম করে দেখার পর তাকে আউট দিয়ে দেন তৃতীয় আম্পায়ার রড টাকার। এতে থামে তার লড়াই। এর আগে ১১৭ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১২১ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন প্রতিশ্রুতিশীল ও সম্ভাবনাময়ী এ ওপেনার।
এতে বাংলাদেশের বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন কার্যত ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পরক্ষণেই কুলদ্বীপের বলে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। শেষদিকে লড়াইয়ের চেষ্টা করেন সৌম্য সরকার। আম্বাতি রাইডু ও ধোনির যৌথ প্রচেষ্টায় রানআউটে কাটা পড়লে তার লড়াইও থামে। ৪৫ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ৩৩ রান করে ফেরেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফেরার এ ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত দেড় ওভার বাকি থাকতেই ২২২ রানে গুটিয়ে যায় মাশরাফি বাহিনী। ভারতের হয়ে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন কুলদ্বীপ। ৪৫ রান খরচায় তিনি নেন ৩ উইকেট। ২ উইকেট ঝুলিতে ভরেন কেদার।
Leave a reply