সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা
ভারতীয় সেনা ও বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে ভারতের একাধিক স্থানে মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গে পালন করা হল
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ৫২তম মহান বিজয় দিবস। কলকাতায় দুই দিনব্যাপী নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা পালন করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা।
শুক্রবার কলকাতার ময়দানে বিজয় দিবস উপলক্ষে দৃষ্টিনন্দন সেনা মহড়ার পর শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ছিল নানা অনুষ্ঠান। বিজয় দিবসের দিন বিশেষ অতিথি হয়ে ফোর্ট উইলিয়ামে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিজন মিলিয়ে ৭১ জনের এক প্রতিনিধি দল। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার শীর্ষ কর্মকর্তারাও।
শনিবার সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের মূল ফটকের কাছে অবস্থিত বিজয় স্মারক স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন এয়ার ভাইস মার্শাল রাহুল ভাসিন, ন্যাভাল অফিসার-ইন-চার্জ (পশ্চিমবঙ্গ) পি শশী কুমার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, ভারতের সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব:) অরূপ রাহা, ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায় চৌধুরী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মো. হোসেন আলী মুর্শেদ, মুক্তিযোদ্ধা মো. মোমেন উল্লাহ পাটওয়ারী বিপি (অব:) প্রমুখ।
সবশেষে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর.পি কলিতা। এরপর সেনাবাহিনীর মাঠে আয়োজিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্বলিত একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলটি। সেদিনকার সেই স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্য দেখে অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
পরে গণমাধ্যমের কর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য এবং গণমাধ্যমের কর্মীদের উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর কীভাবে এই সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা আপনারা সকলেই জানেন। এরপর ১৪ দিন ধরে সেই সর্বাত্মক যুদ্ধ চলেছিল এবং তাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সর্বোতভাবে সহায়তা দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। এই যুদ্ধে প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। এই যুদ্ধে জয়ের ফলে কেবলমাত্র বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মই নেয়নি বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শুধু ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক যোগসূত্রই নেই, আছে মানসিক যোগসূত্রও। আর সেই কারণে আমরা বন্ধন ও বন্ধুত্ব অটুট রাখার চেষ্টা করি। একাত্তরের যুদ্ধের পর বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা মো. মোমেন উল্লাহ পাটওয়ারী বিপি (অব.) বলেন, ‘একাত্তরের যুদ্ধে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি। সেই যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিহত হয়েছেন। উভয়ের রক্ত মিশে গিয়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই যুদ্ধে ভারতের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে পরাজিত করা, আর আমাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জন করা। আমাদের মনে হয় আমরা উভয় দেশই নিজেদের জায়গা থেকে জয়লাভ করেছি।’
এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন হয় কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনেও। এ উপলক্ষে দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের শুরু হয় সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। পতাকা উত্তোলন করেন উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। পরে উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ‘মুজিব চিরঞ্জীব’ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এরপরে বাংলাদেশ গ্যালারিতে শুরু হয় বাণী পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠান। বিকেলে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
এছাড়াও যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করা হয়েছে রাজধানী নয়াদিল্লি বাংলাদেশ দূতাবাস, ত্রিপুরা ও অসমের সহকারী উপ-দূতাবাসেও।
/এআই
Leave a reply