এহসান আল কুতুবী, কক্সবাজার:
স্বপ্নের ট্রেন ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’। তবে এর টিকেট যেন সোনার হরিণ। সকাল ৮টায় অনলাইনে টিকেট ছাড়ার ২ মিনিটের মধ্যে ভোজবাজির মতো উধাও হয়ে যায় ১ হাজার ১০ টি টিকেট। মেলে না কাউন্টারেও। কিন্তু দেড়শো থেকে ২০০ টাকা বেশি দিলে ঠিকই কালোবাজারিদের কাছে পাওয়া যায় টিকেট। পর্যটন শহরে ট্রেন চালু হওয়ায় সবার মধ্যে যে স্বস্তি এসেছিলো টিকেট কালোবাজারি চক্রের কারণে তা দিন দিন উধাও হয়ে যাচ্ছে।
সংঘবদ্ধ এই চক্রের হাতে জিম্মি যাত্রী ও পর্যটকরা। জালিয়াতির নেপথ্যে রয়েছে রেল এবং ই-টিকেটিং এজেন্সির অসাধু কর্মকর্তারা। ভয়াবহ এ জালিয়াতির ঘটনায় স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছেন আদালত। এরপর আদালতের নির্দেশে তদন্তে নেমেছে র্যাব।
কালোবাজারির বিষয়ে ভুক্তভোগী এক যাত্রী বলেন, অনলাইনে সকাল ৮টা ১ মিনিটে টিকেট ছাড়ে। আমি ৮টা ২ মিনিটে দেখি সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। এগুলো কীভাবে হয়?
আরেক পর্যটক বলেন, ২-৩ মিনিটের মধ্যে টিকেট গায়েব। যেটা কোনোভাবেই সম্ভব না। এখানে কোনো একটা কারসাজি আছে। ১০ দিন আগে টিকেট বুকিং দিতে হয়। তাও সেটি পাওয়া যায় না। মানুষ কখন কোন প্রয়োজনে ভ্রমণ করবে সেটি তো এতদিন আগে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।
তবে ভুক্তভোগীদের আরও অভিযোগ, কক্সবাজারে টিকেট কালোবাজারি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে প্রকাশ্যে টিকেট বিক্রি করছে। নেপথ্যে রয়েছে- রেলওয়ের ও স্টেশনের অসাধু চক্র।
এ বিষয়ে স্থানীয় এক যাত্রী বলেন, স্টেশন ও অনলাইন কোথাও টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না। এটি সম্পূর্ণ কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে। চড়া দাম দিয়ে টিকেট নিতে হচ্ছে। আমি দ্বিগুণ দাম দিয়ে সংগ্রহ করেছি।
তবে সিন্ডিকেটের কারসাজির অভিযোগ মানতে নারাজ কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, টিকেটের সার্ভার কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়। কক্সবাজার স্টেশনে টিকেট নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। অনলাইন টিকেট কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
কালোবাজারী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য এবং যাত্রীদের হাহাকারের বিষয়টি নজরে আসায় চক্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এতে ই-টিকেটিং পোর্টাল ‘সহজ ডটকমের’এক কর্মকর্তা ও তার দুই সহযোগীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার আদালতের পিপি ফরিদুল আলম বলেন, টিকেট কালোবাজারিদের দখলে চলে আসছে। কক্সবাজারের জনগণ এতে উদ্বিগ্ন। আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ তদন্ত করবেন বলে আশা রাখছি।
২ মিনিটে কীভাবে এত টিকেট উধাও হচ্ছে এবং কারা এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এসব তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে র্যাব। তদন্তের বিষয়ে র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক এইচএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ছায়াতদন্ত শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ সকলে খুব দ্রুতই ভালো ফল পাবেন।
/এনকে
Leave a reply