’১৪-এ বিনাভোটে, ’১৮-তে রাত ১২টার ভোটে এমপি: সেই আশেককে আ. লীগ নেতা

|

কক্সবাজার-২ আসনে বিএনএম প্রার্থীর নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের দিন রাত ১২টায় নেয়া ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন মহেশখালীর এক আওয়ামী লীগ নেতা। একইসঙ্গে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আশেক উল্লাহ রফিকের এমপি হওয়ার কথাও বক্তব্যে তুলে ধরেন তিনি।

আশেক উল্লাহ রফিক গত দুইবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও নৌকার প্রার্থী হয়েছেন।

আর বক্তব্য দেয়া ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম আজিজুল হক। তিনি মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে এই উপজেলায় দলটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। ২০২২ সালের শেষের দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়। তাতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়।

আজিজুল হক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সিরাজুল মোস্তফার ছোট ভাই। আজিজুল হক এবারের ভোটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) প্রার্থী শরীফ বাদশার পক্ষে কাজ করছেন। তবে, নোঙ্গরের প্রচারণায় বিভিন্ন জায়গায় দেয়া বক্তব্যে তিনি তার আওয়ামী লীগ ও ভাইয়ের পরিচয় তুলে ধরছেন।

গত সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের কেরুনতলী এলাকায় দেয়া বক্তব্যে আজিজুল হক বলেন, ‌’আমি বুকে হাত দিয়ে আপনাদের সামনে কসম করে বলি, আমি বাধ্য হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিতে এসেছি। আমাদেরও ব্যাথা আছে। আপনি প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বিকাশে (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়), আপনাকে ভোট দেয়া লাগে নাই। এরপর যেবার আপনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তখন ঠিক রাতের ১২টা ১ মিনিটে আমাদের কাছে মেসেজ আসে, স্ব স্ব কেন্দ্রে আপনারা ৬০ শতাংশ ভোট নিয়ে ফেলেন। অর্থাৎ শতকরা ৬০ ভোট নিয়ে ফেলেন। তখন দিনের বেলায় আরও ৪০ শতাংশ ভোট থাকে। তবে সেই ৪০ শতাংশ ভোট যদি বিএনপির বাক্সেও চলে যায়, এরা কখনও নির্বাচিত হতে পারবে না। সেইবার রাত ১২টা ১ মিনিটে যে ভোট নেয়া হয়েছিল, সেইভাবে আপনি নির্বাচিত হয়েছেন।’

তার এই বক্তব্যের ১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কেবল এই বক্তৃতা না, আরও একাধিক বক্তব্যে আশেক উল্লাহ রফিকের উদ্দেশে তিনি এমন সুরে কথা বলেছেন। হোয়ানকে ওই বক্তব্য দেয়ার সময় আজিজুল হকের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিএনএমের প্রার্থী শরীফ বাদশা।

কেবল আজিজুল হক নন, শরীফ বাদশাও তার বিভিন্ন বক্তব্যে আশেকের উদ্দেশ্যে এ ধরনের কথা বলছেন। শরীফ বাদশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে এবার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। তিনি মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। গত নভেম্বরে তিনি বিএনএমে যোগ দেন।

আজিজুল হকের এমন বক্তব্যে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অপরদিকে নোঙ্গরের পক্ষে কাজ করায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন দুইজন।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ মুহূর্তে কক্সবাজার সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জনসভায় ওই এলাকার মানুষদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনাদের এমপি সাহেব ছোট্ট মানুষ। ওর বাবাকে আমি চিনতাম। ওর বাবা মারা গিয়েছিলেন নৌকাডুবিতে। আমি ওদের বাড়িতে এসেছিলাম। আমাদের আশেক (আশেক উল্লাহ রফিক), তাকে আমি আপনাদের হাতেই তুলেই দিলাম।’

উল্লেখ্য, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২ লাখ ৩০ হাজার ৯১ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুর রহমান আজাদ পেয়েছিলেন ১৮ হাজার ৫৮৭ ভোট। বিএনপির প্রার্থী আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ পেয়েছিলেন ১১ হাজার ৭৮৯ ভোট।

এবারের ভোটে কক্সবাজার-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী। তারা হলেন আশেক উল্লাহ রফিক (নৌকা), শরীফ বাদশা (নোঙ্গর), মোহাম্মদ খাইরুল আমিন (একতারা), মো. ইউনুস ( মিনার), মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার) ও মাহাবুবুল আলম (আম)।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply