এবারের ভোটে যে কীর্তি গড়লো স্বতন্ত্ররা

|

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। যা এখন পর্যন্ত কোনো জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে বেশিরভাগ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।

ক্ষমতাসীন দলটি চব্বিশের ভোটে নিজ দলের নেতাকর্মীদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দেয়। তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হিড়িক পড়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়ে অনেকের মুখেই হাসি ফুটেছে। সংখ্যার হিসেবে যা বেশ উল্লেখযোগ্য।

এক থেকে একাদশ সংসদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্বতন্ত্র এমপি পেয়েছিল তৃতীয় সংসদ। জেনারেল এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩২টি আসনে জয় পায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তা চব্বিশের ভোটে প্রায় দ্বিগুণ হলো। ফলে, এবারের ভোটে সর্বোচ্চ স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ের রেকর্ড হলো।

প্রথম সংসদ নির্বাচনে ৫, দ্বিতীয়তে ১৬, তৃতীয়তে ৩২, চতুর্থতে ২৫, পঞ্চমে ৩, ষষ্ঠে ১০, সপ্তমে ১, অষ্টমে ৬, নবমে ৭, দশমে ১৪ ও একাদশে ২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তা ৬২-তে দাঁড়িয়েছে।

চব্বিশের ভোটে যেসব আসনে জয় পেলেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা:

দিনাজপুর-১ আসনে মো. জাকারিয়া, নীলফামারী-৩ মো. সাদ্দাম হোসেন (পাভেল), নীলফামারী-৪ মো. সিদ্দিকুল আলম, রংপুর-১ মো. আসাদুজ্জামান, রংপুর-৫ মো. জাকির হোসেন সরকার, কুড়িগ্রাম-২ মো. হামিদুল হক খন্দকার, গাইবান্ধা-১ আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার, গাইবান্ধা-২ শাহ সারোয়ার কবীর, বগুড়া-৩ খাঁন মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ্‌ আল মেহেদী, নওগাঁ-৪ এস এম ব্রহানী সুলতান মামুদ, নওগাঁ-৬ মো. ওমর ফারুক সুমন, রাজশাহী-২ মো. শফিকুর রহমান বাদশা, নাটোর-১ মো. আবুল কালাম, কুষ্টিয়া-১ মো. রেজাউল হক চোধুরী, কুষ্টিয়া-২ মো. কামারুল আরেফিন, কুষ্টিয়া-৪ আবদুর রউফ, ঝিনাইদহ-২ মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, যশোর-৫ মো. ইয়াকুব আলী, যশোর-৬ মো. আজিজুল ইসলাম, বরগুনা-১ গোলাম সরোয়ার টুকু, বরিশাল-৪ পংকজ নাথ, পিরোজপুর-২ মো. মহিউদ্দীন মহারাজ এবং পিরোজপুর-৩-এ মো. শামীম শাহনেওয়াজ জয়ী হয়েছেন।

আরও পড়ুন: সবুজ মাঠ পেরিয়ে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায়

টাঙ্গাইল-৩-এ আমানুর রহমান খান রানা, টাঙ্গাইল-৪ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, টাঙ্গাইল-৫ ছানোয়ার হোসেন, জামালপুর-৪ আবদুর রশীদ, শেরপুর-১ মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু, ময়মনসিংহ-১ মাহমুদুল হক সায়েম, ময়মনসিংহ-৫ মো. নজরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ-৬ মো. আব্দুল মালেক সরকার, ময়মনসিংহ-৭ এ বি এম আনিছুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৮ মাহমুদ হাসান সুমন, ময়মনসিংহ-১১ মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ, নেত্রকোণা-৩ ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, কিশোরগঞ্জ-২ সোহ্‌রাব উদ্দিন, মানিকগঞ্জ-১ সালাউদ্দিন মাহমুদ, মানিকগঞ্জ-২ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ এবং মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে মোহাম্মদ ফয়সাল নির্বাচিত হয়েছেন।

ঢাকা-৪ আসনে মো. আওলাদ হোসেন, ঢাকা-৫ মশিউর রহমান মোল্লা সজল, ঢাকা-১৮ মো. খসরু চৌধুরী, ঢাকা-১৯ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, গাজীপুর-৫ আখতারউজ্জামান, নরসিংদী-৩ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, ফরিদপুর-৩ আব্দুল কাদের আজাদ, ফরিদপুর-৪ মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, মাদারীপুর-৩ মোসা. তাহমিনা বেগম, সুনামগঞ্জ-২ জয়া সেন গুপ্তা, সিলেট-৫ মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ-৪ সৈয়দ সায়েদুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ এস এ কে একরামুজ্জামান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মো. মঈন উদ্দিন, কুমিল্লা-২ মো. আবদুল মজিদ, কুমিল্লা-৩ জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা-৪ মো. আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-৫ এম এ জাহের, লক্ষ্মীপুর-৪ মো. আবদুল্লাহ, চট্টগ্রাম-৮ আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম-১৫ আব্দুল মোতালেব এবং চট্টগ্রাম-১৬ আসনে মুজিবুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন।

আরও পড়ুন: ভোটের লড়াইয়ে শুন্য পেলো যেসব দল

নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ৯৭১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তার মধ্যে ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বাকিরা ভোটে অংশ নেয়া ২৮ দলের প্রার্থী। তবে এসব প্রার্থীর মধ্যে অনেকেই ভোটের আগে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। কেউ কেউ ভোটের দিনে বর্জনের ঘোষণা দেন। শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ ভোটগ্রহণ।

৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ করা হয়। নওগাঁ-২ আসনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুতে সেখানে ভোট হয়নি। পুনরায় সেখানে তফসিল ঘোষণা করা হবে। তখন আরও প্রার্থী যুক্ত হতে পারে।

এদিকে, এক কেন্দ্রের অনিয়মে আটকে গেছে ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফল। ওই কেন্দ্র ছাড়া এই আসনের ঘোষিত ফল অনুযায়ী নিলুফার আনজুম পপি (নৌকা) ৫৩ হাজার ১৯৬ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সোমনাথ সাহা ট্রাক প্রতীকে ৫২ হাজার ২১১ ভোট পেয়েছেন। দুইজনের মধ্যে ব্যবধান হাজারের কম হওয়ায় ফল আটকে গেছে।

এবারের ভোটে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। আর নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২। ৮৫২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে এবারের ভোটে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply