নৌকা নিয়েও তীরে ভিড়তে পারলেন না যারা

|

মাহবুব আলী (বামে), স্বপন ভট্টাচার্য্য ও এনামুর রহমান (ডানে)। ছবি- ফাইল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে বেসরকারি ফলও প্রকাশিত হয়েছে। ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ হলেও ময়মনসিংহ-৩ আসনের ফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। রোববার (৭ জানুয়ারি) রাতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা এই ফল প্রকাশ করেন। এবারও নৌকা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।

তবে নৌকার এমন জয়জয়কারের মধ্যেও ডুবেছেন অনেকেই। আর বেশিরভাগই ডুবেছেন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করা নেতাদের কাছে। দিনাজপুর-১ আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকারিয়া জাকার কাছে হেরেছেন নৌকার প্রার্থী মনোরঞ্জন শীল গোপাল। রংপুর-৫ আসনে ধরাশায়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের রাশেক রহমান। তিনি হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন সরকারের কাছে।

নওগাঁ-৪ আসনে জয় পেয়েছেন ট্রাক প্রতীকের এসএম ব্রহানী সুলতান মামুদ গামা। নৌকা ডুবেছে নাহিদ মোর্শেদের। নওগাঁ-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওমর ফারুক সুমনের কাছে হেরেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হেলাল।

দলীয় প্রতীক হাতুড়ি ছেড়ে রাজশাহী-২ আসনে নৌকায় চড়েছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তবে তার নৌকা তীরে নৌঙর করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার ঢেউয়ে ডুবেছে ফজলে হোসেন বাদশার নৌকা।

নাটোর-১ আসনে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী অ্যাড. আবুল কালাম আজাদের কাছে হেরেছেন নৌকার প্রার্থী মো. শহিদুল ইসলাম বকুল। কুষ্টিয়া-১ আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী জয় পেয়েছেন। এই আসনে ভোটের লড়াইয়ে তৃতীয় হয়েছেন নৌকার প্রার্থী সরওয়ার জাহান।

দলীয় প্রতীক ছেড়ে কুষ্টিয়া-২ আসনে নৌকায় সওয়ার হয়েছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের ‘ধাক্কায়’ নৌকা থেকে পড়ে গেছেন হাসানুল হক ইনু। ফলে টানা তিনবার জয়ের পর নির্বাচনে হার মানতে হল ইনুকে।

কুষ্টিয়া-৪ আসনেও জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী। সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফের কাছে হেরেছেন নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। ঝিনাইদহ-২ আসনে জিততে পারলেন না নৌকার প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী। আসনটিতে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টচার্য যশোর-৫ আসনে এবারও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ইয়াকুব আলীর সাথে ভোটের লড়াইয়ে ‍জিততে পারলেন না এই আলোচিত প্রতিমন্ত্রী। যশোর-৬ আসনেও ডুবেছে নৌকা। আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদার ধরাশায়ী স্বতন্ত্র আজিজুল ইসলামের কাছে।

বরগুনা-১ আসনের আলোচিত-সমালোচিত এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু নৌকা পেয়েও এবার আর জিততে পারেননি। আসনটিতে জয়লাভ করেছে স্বতন্ত্রের গোলাম সরোয়ার টুকু।

দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল ফেলে এবার নৌকা চেপেছিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। পিরোজপুর-২ আসনে এই নৌকার প্রার্থীকে ডুবিয়েছেন তারই সাবেক পিএস মহিউদ্দিন মহারাজ। ঈগল প্রতীকের এই প্রার্থীর কাছে হেরেছেন মঞ্জু।

নৌকা নিয়েও জিততে পারলেন না টাঙ্গাইল-৩ আসনের কামরুল হাসান খান। এখানে শেষ হাসি ফুটেছে স্বতন্ত্রের আমানুর রহমান খান রানার মুখে। দীর্ঘদিন পর সংসদে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। টাঙ্গাইল-৪ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে মোজহারুল ইসলাম তালুকদারের নৌকা ডুবিয়েছেন আলোচিত এই রাজনীতিবিদ।

টাঙ্গাইল-৫ আসনেও জয়ের হাসি স্বতন্ত্র প্রার্থীর ‍মুখে। ছানোয়ার হোসেনের কাছে এই আসনে হেরেছেন নৌকার মামুন-অর-রশিদ। জামালপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ আবদুর রশীদের কাছে পরাজয় মানতে হয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলালকে।

নৌকা নিয়েও জিততে পারলেন না শেরপুর-১ আসনের প্রার্থী আতিউর রহমান আতিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছানুয়ার হোসেন ছানুই হেসেছেন শেষ হাসি। পা হড়কেছে ময়মনসিংহ-১ আসনের বর্তমান এমপি জুয়েল আরেংয়ের। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুল হক সায়েমের কাছে হেরেছেন এই নৌকার মাঝি। ময়মনসিংহ-৬ আসনে মোসলেম উদ্দিনকে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আব্দুল মালেক সরকার।

ময়মনসিংহ-৭ আসনেও ধরাশায়ী নৌকা। স্বতন্ত্র প্রার্থী এবিএম আনিছুজ্জামানের কাছে ভোটের লড়াইয়ে হেরেছেন নৌকার হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী। ময়মনসিংহ-১১ আসনে কাজিম উদ্দিন আহমেদ হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদের কাছে।

নেত্রকোণা-৩ আসনে নৌকা নিয়ে হেরেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক ও প্রভাবশালী নেতা অসীম কুমার উকিল। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু ট্রাক প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন এই আসনে।

কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাহহার আকন্দের নৌকা ডুবিয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন। মানিকগঞ্জ-২ আসনেও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের নৌকাকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ। মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে এবার নৌকা নিয়ে বৈতরণী পার হতে পারেননি মৃণাল কান্তি দাস। আসনটিতে জয়ের মালা পড়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল।

ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সানজিদা খানম পরাজিত হয়েছেন। বিজয়ী হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন। ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুনর রশিদ মুন্না জয় পাননি। তাকে হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মশিউর রহমান মোল্লা সজল। নৌকা ডুবেছে ঢাকা-১৯ আসনেও। এই আসনে জয় পেয়েছে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। তবে নৌকার প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এই আসনে তৃতীয় হয়েছেন।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি নৌকা নিয়েও গাজীপুর-৫ আসন থেকে এবার জিততে পারেননি। তাকে হারিয়ে এখানে বাজিমাত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামান। নরসিংদী-৩ আসনের নৌকার ফজলে রাব্বি খানকে পরাজিত করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা জয়ী।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছিল ফরিদপুর-৩ আসনে। তবে ভোটের মাঠের লড়াইয়ে হার মানতে হলো নৌকার শামীম হককে। ভোটের আগের নানা ঘটনা পাশ কাটিয়ে শেষ হাসি নিয়ে ফিরেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ।

ফরিদপুর-৪ আসনে টানা তিনবার নৌকা নিয়েও হারের মুখ দেখতে হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহকে। অপরদিকে তাকে হারিয়ে হ্যাটট্রিক জয় তুলে নিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন।

মাদারীপুর-৩ আসনে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী তাহমিনা বেগমের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। সুনামগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জয়া সেন গুপ্তর কাছে টিকতে পারেননি নৌকার চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

সিলেট-৫ আসনে নৌকার মাসুক উদ্দিন আহমদও জিতে আসতে পারেননি। তিনিও ডুবেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে। তবে হবিগঞ্জ-৪ আসনের এমপি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ‍্যাডভোকেট মো. মাহবুব আলীর ভরাডুবি হয়েছে। এই আসনে বাজিমাত করে সংসদে যাচ্ছেন আলোচিত ব্যক্তিত্ব ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ব‍্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে নৌকা ডুবেছে বদরুদ্দোজা ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের। আনন্দের হাসি নিয়ে ফিরেছেন সম্প্রতি বিএনপির বহিষ্কার হওয়া সৈয়দ একরামুজ্জামান। নৌকা ফুটো হয়েছে কুমিল্লা-২ আসনের সেলিমা আহমাদের। কুমিল্লা-৩ আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে টেক্কা দিতে পারেননি দুইবারের সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন। কুমিল্লা-৪ আসনে নৌকাডুবি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলেরও। কুমিল্লা-৫ আসনে কেটলি প্রতীকের এমএ জাহের জিতেছেন। এখানে নৌকার হাসেম খান তৃতীয় হয়েছেন।

চট্টগ্রাম-১৫ আসনের রাজত্ব শেষ হচ্ছে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর। এই সংসদ সদস্য এবারও নৌকা পেয়েছিলেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোতালেবের সঙ্গে মাঠের লড়াইয়ে পরাজিত হয়েছেন। আর ভোটের দিন শেষবেলায় প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply