ঈগল না ট্রাক, কোনটি বেশি টেনেছে ভোটারদের?

|

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়ে রেকর্ড গড়েছেন। পূর্বের ১১ সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৩২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন জেনারেল এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে।

চব্বিশের ভোটে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজ দলের নেতাকর্মীদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দেয়। তাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হিড়িক পড়ে দলটির নেতাদের মধ্যে। ভোটে পাশ করে আসা ৬২ জনের মধ্যে বেশিরভাগ প্রার্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক যেমন ছিল, তেমনি তাদের প্রতীকও আসে আলোচনায়। প্রার্থীদের মধ্যে দেখা যায় ঈগলপ্রীতি। ১৫০ জনের বেশি প্রার্থী লড়েন ঈগল নিয়ে। এছাড়া, হেভিওয়েট অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটেযুদ্ধে বেছে নেন ঈগলকে।

এসব প্রার্থীদের মত ছিল, ঈগলকে শক্তি, সামর্থ্য ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যার টার্গেট মিস হয় না। সাধারণ মানুষের কাছে বেশি বোধগম্য হওয়ায় তারা এই প্রতীক বেছে নিয়েছেন।

৪৩৬ জন প্রার্থী এবারের ভোটে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ঈগলের পরে তাদের পছন্দের প্রতীক ছিল ট্রাক। শতাধিকের বেশি প্রার্থী ট্রাকে চড়েন ভোটের বৈতরণী পার হতে।

ভোট শেষে দেখা গেলো, প্রার্থীদের মধ্যে ঈগলপ্রীতি বেশি থাকলেও ভোটারদের মনে ছিল ভিন্ন কিছু। তাদেরকে বেশি টেনেছে ট্রাক। ঈগলে চেপে সংসদে যাচ্ছেন ২৩ জন। আর ট্রাকে চড়ে যাচ্ছেন ২৫ জন।

এছাড়া, সমানতলে চলেছে কাঁচি ও কেটলি। দুই প্রতীকে নিয়েই ১০ জন জিতেছেন। কলার ছড়ি মার্কার ৩ এবং ঢেকি প্রতীকের এক প্রার্থী জয়েরে হাসি হেসেছেন।

কোন আসনে কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন প্রতীক নিয়ে জয় পেয়েছেন:

দিনাজপুর-১: মো. জাকারিয়া (ট্রাক)

রংপুর-৫: মো. জাকির হোসেন সরকার (ট্রাক)

কুড়িগ্রাম-২: মো. হামিদুল হক খন্দকার (ট্রাক)

গাইবান্ধা-২: শাহ সারোয়ার কবীর (ট্রাক)

বগুড়া-৩: খাঁন মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ্‌ আল মেহেদী (ট্রাক)

নওগাঁ-৪: এস এম ব্রহানী সুলতান মামুদ (ট্রাক)

নওগাঁ-৬: মো. ওমর ফারুক সুমন (ট্রাক)

কুষ্টিয়া-১: মো. রেজাউল হক চোধুরী (ট্রাক)

কুষ্টিয়া-২: মো. কামারুল আরেফিন (ট্রাক)

কুষ্টিয়া-৪: আবদুর রউফ (ট্রাক)

টাঙ্গাইল-৪: আবদুল লতিফ সিদ্দিকী (ট্রাক)

শেরপুর-১: মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু (ট্রাক)

ময়মনসিংহ-১: মাহমুদুল হক সায়েম (ট্রাক)

ময়মনসিংহ-৫: মো. নজরুল ইসলাম (ট্রাক)

ময়মনসিংহ-৬: মো. আব্দুল মালেক সরকার (ট্রাক)

ময়মনসিংহ-৭: এ বি এম আনিছুজ্জামান (ট্রাক)

ময়মনসিংহ-১১: মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ (ট্রাক)

জামালপুর-৪: আবদুর রশীদ (ট্রাক)

নেত্রকোণা-৩: ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু (ট্রাক)

ঢাকা-৪: আসনে মো. আওলাদ হোসেন (ট্রাক)

ঢাকা-৫: মশিউর রহমান মোল্লা সজল (ট্রাক)

মানিকগঞ্জ-২: দেওয়ান জাহিদ আহমেদ (ট্রাক)

গাজীপুর-৫: আখতারউজ্জামান (ট্রাক)

ঢাকা-১৯: মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (ট্রাক)

কুমিল্লা-২: মো. আবদুল মজিদ (ট্রাক)

নাটোর-১: মো. আবুল কালাম (ঈগল)

ঝিনাইদহ-২: মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী (ঈগল)

যশোর-৫: মো. ইয়াকুব আলী (ঈগল)

যশোর-৬: মো. আজিজুল ইসলাম (ঈগল)

বরগুনা-১: গোলাম সরোয়ার টুকু (ঈগল)

বরিশাল-৪: পংকজ নাথ (ঈগল)

পিরোজপুর-২: মো. মহিউদ্দীন মহারাজ (ঈগল)

টাঙ্গাইল-৩: আমানুর রহমান খান রানা (ঈগল)

টাঙ্গাইল-৫: ছানোয়ার হোসেন (ঈগল)

ময়মনসিংহ-৮: মাহমুদ হাসান সুমন (ঈগল)

কিশোরগঞ্জ-২: সোহ্‌রাব উদ্দিন (ঈগল)

মানিকগঞ্জ-১: সালাউদ্দিন মাহমুদ (ঈগল)

নরসিংদী-৩: সিরাজুল ইসলাম মোল্লা (ঈগল)

ফরিদপুর-৩: আব্দুল কাদের আজাদ (ঈগল)

ফরিদপুর-৪: মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন (ঈগল)

মাদারীপুর-৩: মোসা. তাহমিনা বেগম (ঈগল)

হবিগঞ্জ-১: আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী (ঈগল)

হবিগঞ্জ-৪: সৈয়দ সায়েদুল হক (ঈগল)

কুমিল্লা-৩: জাহাঙ্গীর আলম (ঈগল)

কুমিল্লা-৪: মো. আবুল কালাম আজাদ (ঈগল)

লক্ষ্মীপুর-৪: মো. আবদুল্লাহ (ঈগল)

চট্টগ্রাম-১৫: আব্দুল মোতালেব (ঈগল)

চট্টগ্রাম-১৬: মুজিবুর রহমান (ঈগল)

নীলফামারী-৩: মো. সাদ্দাম হোসেন (পাভেল) (কাঁচি)

নীলফামারী-৪: মো. সিদ্দিকুল আলম (কাঁচি)

রাজশাহী-২: মো. শফিকুর রহমান বাদশা (কাঁচি)

মুন্সিগঞ্জ-৩: মোহাম্মদ ফয়সাল (কাঁচি)

সুনামগঞ্জ-২: জয়া সেন গুপ্তা (কাঁচি)

রংপুর-১: মো. আসাদুজ্জামান (কেটলি)

ঢাকা-১৮: মো. খসরু চৌধুরী (কেটলি)

সিলেট-৫: মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী (কেটলি)

কুমিল্লা-৫: এম এ জাহের (কেটলি)

চট্টগ্রাম-৮: আবদুচ ছালাম (কেটলি)

পিরোজপুর-৩: মো. শামীম শাহনেওয়াজ (কলার ছড়ি)

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১: এস এ কে একরামুজ্জামান (কলার ছড়ি)

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২: মো. মঈন উদ্দিন (কলার ছড়ি)

গাইবান্ধা-১: আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার (ঢেকি)

নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ৯৭১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোটে অংশ নেয় ২৮ দল। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। আর নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২। ৮৫২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে এবারের নির্বাচনে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply