গাজার পক্ষে যুদ্ধে জড়ানো কারা এই ‘হুতি বিদ্রোহী’?

|

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই আলোচনায় হুতি বিদ্রোহীরা। লোহিত সাগরে একের পর এক পণ্যবাহী জাহাজে হামলা চালিয়ে পুরো বিশ্বে আতঙ্ক তৈরি করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। গেলো তিন মাসে এই পথ দিয়ে চলাচলকারী জাহাজগুলোতে প্রায় ২৭ বার হামলা চালিয়েছে হুতিরা। কিন্তু কারা এই হুতি? গাজার সাথে তাদের সম্পর্কই বা কি?

গাজায় নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে প্রায় ১৪শ’ মাইল দূরের দেশ ইয়েমেন থেকেই ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় হুতিরা। লোহিত সাগরে একের পর এক জাহাজকে বানিয়েছে লক্ষ্যবস্তু। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইহুদি আগ্রাসনের প্রতিবাদে সরব গোষ্ঠিগুলোর মধ্যে অন্যতম হুতি।

ইতিহাস ঘেটে জানা গেছে, ৮০’র দশকে, সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় ইয়েমেনে ওয়াহাবি মতবাদ প্রচারের প্রতিবাদে জন্ম হুতি বিদ্রোহীদের। যাদের প্রাতিষ্ঠানিক নাম আনসারুল্লাহ। শিয়া মুসলিমদের শাখা জাইদিজমের প্রতিনিধিত্ব করা গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা হুসাইন বাদ্রেদ্দীন আল হুতি।

২০১৪ সালে ইয়েমেনের সাআদা রাজ্যের দখল নিয়ে প্রথম আলোচনায় আসে হুতিরা। সে বছরই রাজধানী সানার বিভিন্ন অংশ দখল করে নেয় গোষ্ঠীটি। নিয়ন্ত্রণ নেয় প্রেসিডেন্টের বাসভবনেরও। এর জেরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। যা রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে।

পরে, ২০২২ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে বন্ধ হয় সংঘাত। বর্তমানে রাজধানীসহ ইয়েমেনের উত্তারঞ্চলের বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ করছে হুতি বিদ্রোহীরা।

সৌদি আরবের সাথে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের জেরে শুরু থেকেই হুতিদের সমর্থন দিয়ে আসছে ইরান। তাদের সি মাইন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোনসহ নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ও কারিগরি সহায়তা দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি ইরানের প্রশিক্ষণে এখন হুতিরা নিজেরাই তৈরি করছে আধুনিক সমরাস্ত্র। যা লোহিত সাগরে বড়সড় বিপর্যয় ঘটাতে পারে বলে-শঙ্কা পশ্চিমা বিশ্বের।

শুধু কী ধর্মীয় কারণেই হুতিরা ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে? এ নিয়েও রয়েছে নানামত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়াও হতে পারে তাদের এজেন্ডা। এছাড়া আইনগত বৈধতা পেতে চাপ সৃষ্টি এবং ইয়েমেনিদের সমর্থন বাড়াতে এমন আক্রমণ বলে মনে করছেন অনেকে।

কারণ যা-ই হোক, এরই মধ্যে হুতিদের আতঙ্কে নড়েচড়ে বসেছে ইসরায়েল ও তার মিত্র দেশগুলো। লোহিত সাগরে চলাচল বন্ধ করেছে অনেক শিপিং কোম্পানি, যার প্রভাব পড়েছে বিশ্ব বাণিজ্যে। বাধ্য হয়ে তাদের মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশকে সাথে নিয়ে বহুজাতিক নৌ-টাস্কফোর্স গঠন করছে যুক্তরাষ্ট্র। এতকিছুর পরও গোষ্ঠীটিকে থামাতে না পেরে ইয়েমেনের ভূখণ্ডেই অবশেষে হামলা চালিয়েছে পশ্চিমারা।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply