যা পাথেয় করে এগিয়ে চলছি আমরা

|

শিবলী নোমান⚫

রাত ১২টার কাছাকাছি। ল্যাপটপ সবে বন্ধ হয়েছে। এবার সব গুছিয়ে বাতি নিভিয়ে বেরুবার পালা। হঠাৎ করেই মোবাইল বেজে উঠলো। স্ক্রিনে অচেনা নম্বর। সবুজ চিহ্নটায় আঙুল ছুঁইয়ে ফোন নিতেই ওপাশে উদ্বগাকূল কণ্ঠ কানে বাজলো, ‘এটা কি যমুনা টিভির নম্বর?‘ সম্মতি দিতেই ওপাশের কণ্ঠ নিজেকে সাভারের এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে গড়গড় করে বলে চললো, স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। দ্রুত ইউনিট পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে কণ্ঠটি বললো, ‘ভাই, আপনারা সব সময় সত্যিটা দেখান। এখানেও একবার আসল ঘটনাটা তুলে ধরেন, প্লিজ।’

কাজ করি রাজশাহীতে, ঘটনা সাভারের। মুশকিল হলো, তাকে যতই একথা বোঝাতে যাই, ততোই সে বলতে থাকে, আপনারা আসেন। সত্যিটা তুলে ধরেন। ফোন কেটে ঢাকায় এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বললাম। জানালাম, সোর্সের দেয়া তথ্য। পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো সেই নম্বরের ফোনে। বললো, ‘ভাই, ধন্যবাদ, সত্যিটা তুলে ধরার জন্য।’ কিন্তু নম্বরটা পেলেন কই? জানালো, গুগলে ‘যমুনা টিভির নম্বর’ লিখে সার্চ দিয়ে খুঁজে বের করেছে। যমুনা কেন? সেই রাতের জবাবটাই এবার এল একটু ভিন্নভাবে, ‘আপনাদের ওপর চোখ বন্ধ করে আস্থা রাখা যায়।’ সকালটা যেন অন্যরকম এক ভালো লাগায় ভরে উঠল।

যমুনা টেলিভিশনের ওপর মানুষের এই আস্থা সব থেকে বড় সম্পদ, মাঠে কাজ করতে গিয়ে বহুবার যার প্রমাণ পেয়েছি। পেট্রোলবোমার হোতাদের সন্ধানে বিপদসঙ্কুল সময়ে গভীর রাতে অচেনা সড়কে পথ হারিয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের সহায়তা পেয়েছি শুধুমাত্র যমুনার স্টিকার লাগানো গাড়ির কারণে। উত্তরবঙ্গের এক জেলায় জঙ্গি হামলার ঘটনাস্থল সফর করে তৎকালীন দেশের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর এক বড়কর্তা তার ব্রিফিংয়ে খোঁজ করেছেন, যমুনা টিভি কোথায়? ওদের লাগবে। পড়িমড়ি ছুটে সেখানে হাজির হবার পরে সেই ব্রিফিং শুরু হয়েছিল।

রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে কাজ করতে গিয়ে সহায়তা মিলেছে সব পক্ষেরই। কারণ, ওই একটাই, আর যাই হোক, যমুনা ‘একচোখা’ নয়। একাধিক সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে যার, সেই দুর্নীতি বা অনিয়মে অভিযুক্তকেও অনুরোধ করতে শুনেছি, অন্যরা যা করেছে করুক, যমুনা করলে সব শেষ! যমুনা সেখানে থামেনি, কথাও রাখেনি। এক বছর পর সেই একই ব্যক্তিকে দেখেছি, আরেক অনিয়মের সোর্স হয়ে যমুনার সঙ্গেই যোগাযোগ করতে।

টকশোতে অতিথি পেতে কখনওই খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। সময়-সুযোগে মিলে গেলে স্বল্প সময়ের নোটিশেই সবাই রাজি হয়েছেন, ইস্যু যতই স্পর্শকাতর হোক না কেন।

একবার রাজশাহীর এক জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা কথায় কথায় বলছিলেন, তোমাদের ‘না’ করি না কেন, জানো? ওই যে মেয়েটা আছে না, নিকোল? ও সত্যি সত্যিই কথাটা শুনতে চায় সবার কাছ থেকে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাউকে থামিয়ে দেয় না। আবার ভুল বললে কাউকে ছাড়েও না।

শেষ করি, ভারতের এক অভিজ্ঞতা দিয়ে। ক’মাস আগে ওদের আমন্ত্রণে গিয়ে এক নৈশভোজে মিলে গেলেন কেরালার এক সাংবাদিক। আমি নিজের কর্মস্থলের পরিচয় দিতেই আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলেন, আমি তোমাদের টিভির বেশ কিছু কাজ দেখেছি, দুর্দান্ত।

ভাবলাম, মালায়ালামভাষী বাংলা টিভি আর কী দেখে! হয়তো আমাকে খুশি করতে বলছে! ভুল ভাঙলো খানিক পরেই, যখন তিনি বলে উঠলেন, তোমাদের হাকিম (মোহসীন-উল হাকিম) নামের একজন রিপোর্টার আছে না? ওর সুন্দরবনের কাজগুলো আমি দেখেছি। বাংলায় এমন রিপোর্টিং আমি সত্যিই দেখিনি। গর্বে বুকটা ভরে গেল। যমুনার কাজের প্রতি মানুষের আস্থা, ভালোবাসা দেশ ছাড়িয়ে এভাবেই আরও বাইরেও ছড়িয়ে পড়ুক। টিম যমুনা তো সেই স্বপ্ন নিয়েই কাজ করে চলেছে।

/এমএমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply