খুদে ফুটবলার কমলিকার সাফল্যে অবাক এলাকাবাসী, চায় বিশ্বজয় করতে

|

বাউফল (পটুয়াখালী) করেসপনডেন্ট:

পটুয়াখালীর বাউফলের ১০ বছর বয়সী এক খুদে ফুটবলারের সাফল্যে অবাক এলাকাবাসী। এই শিশুকন্যা তার পায়ের নিপুণ জাদুতে উপজেলা, জেলা ও বিভাগের গন্ডি পেড়িয়ে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনেও। সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) লেখাপড়া করার। মনোনীত হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অনুর্ধ্ব-১৯ ও ১৬’র ট্যালেন্ট হান্ট বালিকা ফুটবলেও।

ক্ষুদে এই ফুটবলারের নাম কমলিকা সাজ্জাল। সে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের কমল সাজ্জাল ও শখী রানী দম্পতির কন্যা। উদীয়মান এই খুদে ফুটবলার উপজেলার ১০৬নং মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিতা কমল সাজ্জালের অক্লান্ত পরিশ্রমই কমলিকাকে আজ এই স্থানে নিয়ে গেছে। তার পিতা কমল সাজ্জাল স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলতেন। স্বপ্ন ছিলো জাতীয় পর্যায় ফুটবল খেলার। পারিবারিক অভাবের ফলে সঠিক প্রশিক্ষণ না পেয়ে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাই স্বপ্ন বুনেছেন মেয়েকে নিয়ে।

মেয়ের নামে গড়ে তুলেছেন ‘কমলিকা ফুটবল একাডেমি’। সেই একাডেমিতেই ছোট থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে শিশু কমলিকা সাজ্জালকে।

সবশেষ ২০২৩ সালের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে নিজ বিদ্যালয়ের বালিকা দলের পক্ষে খেলেন কমলিকা সাজ্জাল। প্রতিটি ম্যাচে দলনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে এনে দেয় কাঙ্খিত সফলতা। পর্যায়ক্রমে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন করেন নিজের দলকে।

এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের ফুটবলের ওই আসরে অংশগ্রহণ করা প্রতিটি ম্যাচেই ম্যাচসেরা হয় কমলিকা। ওই আসরে অর্ধশত গোল করে মূলত বেশি আলোচনায় আসে এই খুদে ফুটবলার। এছাড়াও পটুয়াখালী জেলার অনুর্ধ্ব-১৭ বালিকা ফুটবল দলের সহকারি অধিনায়কও কমলিকা।

এর আগে, মানিকগঞ্জ জেলার সাথে একটি ম্যাচে নিজ জেলার হয়ে চমৎকার ৫টি গোল করে বাফুফের কর্মকর্তাদের নজরে আসেন কমলিকা। এরপরে ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে বাফুফের প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই পর্বের ম্যাচে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে কমলিকা সাজ্জাল।  

অন্যদিকে বিকেএসপির বাছাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সারাদেশ থেকে নির্বাচিত ২৫ জনের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থান দখল করে নিয়েছেন কন্যা শিশু ফুটবলার কমলিকা সাজ্জাল।

কমলিকা সাজ্জালের অর্জনের ঝুলিটাও বেশ লম্বা। ১০ বছর বয়সে ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ৩৮ বার। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে হয়েছে টুর্নামেন্টর সেরা খেলোয়াড়। পেয়েছে সেরা গোলদাতা ও সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব। জাতীয় পর্যায়ে নিজ জেলার হয়ে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হয়েও পেয়েছেন ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। 

বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দেয়াই একমাত্র স্বপ্ন জানিয়ে খুদে ফুটবলার কমলিকা সাজ্জাল যমুনা নিউজকে বলেন, আমি জাতীয় দলে খেলতে চাই। সঠিক প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কৃষ্ণা রানী ও ঋতুপর্ণা চাকমার মতো বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ছড়িয়ে দিতে চায় বলেও জানায় সে। এ সময় কমলিকা তার বাবা ও ফুটবল কোচ কমল সাজ্জালের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানায়। 

মাধবপুর নিশীকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাবু জয়দেব শিকারী বলেন, কমলিকা সাজ্জাল নিশীকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংযুক্ত মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। বিভিন্ন সময়ে তার  খেলা তিনি দেখেছেন।

একজন ক্ষুদে খেলোয়াড় হিসেবে তার খেলা আসলেই মনোমুগ্ধকর জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নিজের যোগ্যতার কারণেই বাফুফে কমোলিকাকে জাতীয় পর্যায়ে খেলার জন্য মনোনীত করেছে। এই অজপাড়াগাঁয়ের কন্যা শিশু তার প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে এটা সবার জন্য গর্বের। কমলিকা ভবিষ্যতে ভালো খেলোয়াড় হয়ে সমাজ ও দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবে এমন প্রত্যাশার কথাও জানান তিনি।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply