গাজায় যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে কোনো নির্দেশ দেয়নি আন্তর্জাতিক আদালত। এ নিয়ে হতাশ অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দারা। হতাশ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলও। যদিও আদেশে গণহত্যা রোধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া ও মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে ইসরায়েলের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ইসরায়েল এই নির্দেশ মানবে কি না তা নিয়েও সন্দিহান অনেকেই। এদিকে, গণহত্যার মামলাকে ‘ভয়ানক’ বলে উল্লেখ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
প্রায় ৪ মাস ধরে গাজায় বর্বরতা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের নৃশংসতায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত ফিলিস্তিনি। খাবার-পানি-ওষুধের সংকট আর স্বজন হারাদের আর্তনাদে প্রতিনিয়তই ভারি হয়ে উঠছে উপত্যকার বাতাস।
নিরীহ এই মানুষগুলো আশায় বুক বেঁধেছিল- আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে বিচার হবে হানাদারদের। বন্ধ হবে নির্যাতন। তবে হামলা বন্ধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি আইসিজে’র রায়ে। গণহত্যা বন্ধে কেবল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়। যা ব্যাপকভাবে হতাশ করেছে অসহায় মানুষগুলোকে।
গাজার বাসিন্দারা বলেন, গত তিন মাস ধরে প্রতিদিন যুদ্ধবিরতির জন্য অপেক্ষা করছি। প্রতিদিন নির্বিচারে মানুষ মারা হচ্ছে। কেন আন্তর্জাতিক আদালত ইহুদিদের হত্যা চালিয়ে যেতে সময় দেবে? এ সময় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিও জানান তারা।
এদিকে, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের এই রায়ের প্রশংসা করেছেন ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ-আল-মালিকি। তিনি বলেন, আইসিজে’র রায়কে স্বাগত জানাই। বিচারকরা মানবতা ও আন্তর্জাতিক আইনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এই রায়ের বাস্তবায়ন নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সব রাষ্ট্রকে আহ্বান জানাচ্ছি।
এই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা ‘ভয়ানক’। বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সবসময়ই শ্রদ্ধা জানায় ইসরায়েল। তবে, সবার আগে দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা। জানান, যেকোনো দেশের মতোই ইসরায়েলেরও আত্নরক্ষার অধিকার রয়েছে। আত্মপক্ষ সমর্থনে যা প্রয়োজন তাই করবে ইসরায়েল।
এদিকে, এই রায়ের মধ্য দিয়ে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথ অনেকটাই খুলে গেছে বলে আশা ব্যক্ত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেডি প্যান্ডর এ বিষয়ে বলেন, লাখ লাখ মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে। কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে চুপচাপ তা দেখছে বিশ্ব। অসহায় ঐ মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতেই এই মামলা করা। পুরো বিশ্বের মনোযোগ এখন এই ইস্যুতে। দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আলোচনার এটিই উপযুক্ত সময়।
আইসিজের আদেশ পালনের ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে ইসরায়েলের। তবে তা না মানলে আদেশ বাস্তবায়নের কোনো ব্যবস্থা নেই আইসিজের। তাই এই আদেশ আদতে ইসরায়েল মানবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।
এমএইচ/এটিএম
Leave a reply