হায়দারাবাদ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড গুটিয়ে গিয়েছিলো মাত্র ২৪৬ রানে। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ভারত থামে ৪৩৬ রানে। ফলে প্রথম ইনিংসে রোহিত শর্মার ভারত এগিয়ে থাকে ১৯০ রানে। পাহাড়সম রানে পিছিয়ে থেকেও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি জিতে নিয়েছে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে অলি পোপ ও বোলিংয়ে অভিষিক্ত স্পিনার হার্টলির ঝলকে ২৮ রানে জয় পেয়েছে সফরকারীরা। নিজেদের মাঠে প্রথম ইনিংসে একশ’র ওপর লিড পেয়ে এর আগে কখনই হারেনি ভারত।
টেস্টের চতুর্থ দিন ২৩১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাট করতে নেমে সাবধানী শুরু করে ভারত। তবে দলীয় ৪২ রানে জোড়া আঘাত হানেন হার্টলি। জয়সওয়ালকে ১৫ ও শূন্য রানে শুভমান গিলকে ফেরান এই স্পিনার। দলীয় ৬৩ রানে আবারও হার্টলির আঘাত। এবার তার শিকার ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ফেরার আগে তিনি করেন ৩৯ রান।
এরপর অক্ষর প্যাটেল ও কেএল রাহুল জুটিতে লড়াই চালায় ভারত। এই জুটি খুবই সাবধানী ব্যাটিং করছিলেন। তবে ৩২ রানের এই জুটিও ভাঙেন হার্টলি। তার বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অক্ষর প্যাটেল। এরপর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেনি রাহুলও। দলীয় ১০৭ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। এতে জয়ের পাল্লা ভারি হয় ইংল্যান্ডের।
প্রথম ইনিংসের ভারতের বড় লিডের অন্যতম নায়ক জাদেজা এই ইনিংসে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন। তিনি ফিরেছেন রানআউট হয়ে। যদিও তাকে আউট করার দৃশ্যটি ছিল চোখে লেগে থাকার মতই। শুয়েপড়ে স্টোকসের সরাসরি থ্রোতে সাজঘরে ফেরেন জাদেজা। দলীয় ১১৯ রানে জাদেজার পর শ্রেয়াস আইয়ারও ফেরেন প্যাভিলিয়নে। ৭ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা ভারতের বিপক্ষে তখনই জয়োল্লাসে মাতেন স্টোকস-পোপ-রুটরা।
১৭৭ রানে ভারতের ৯ উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের বন্দরে থাকা ইংলিশদের জয়োল্লাস বিলম্বিত করেন জসপ্রিত বুমরাহ-মোহাম্মদ সিরাজ। শেষ উইকেটে এই জুটি তোলে ২৫ রান। ক্রিজে ছিলেন ৬ ওভার। তবে স্টাম্প থেকে বের হয়ে এসে হার্টলির বলে বড় শট খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে সিরাজ ফেরায় উল্লাসে মাঠে ইংল্যান্ড। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে ২০২ রানে। ইংল্যান্ড জয় ২৮ রানে। অভিষিক্ত টম হার্টলি একাই ভারতকে ধসিয়ে দিয়ে এই ইনিংসে তুলে নিয়েছেন ৭ উইকেট।
এর আগে, প্রায় দু’শো রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিলেন জ্যাক ক্রোলি ও বেন ডাকেট। নিজেদের ‘বাজবল’ স্টাইলে ব্যাটিংয়ে দারুণ সূচনা এনে দেন এই দুই ব্যাটার। তবে দলীয় ৪৫ রানে ব্যক্তিগত ৩১ করে সাজঘরে ফেরেন ক্রোলি। এরপর ডাকেট-অলি পোপ জুটিতে ১০০ ছাড়ায় ইংলিশরা। এই জুটিতে আসে ৬৮ রান। ডাকেট ফেরেন ব্যক্তিগত অর্ধশতক থেকে ৩ রান দূরে থাকতে।
এরপরই কিছুটা খেয় হারায় সফরকারীরা। জো রুট, জনি বেয়ারস্টো ও বেন স্টোকসের ব্যর্থতায় ১৬৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকে ইংলিশরা। তখনও ভারতের চেয়ে ২৭ রানে পিছিয়ে স্টোকসের দল। বড় ব্যবধানে হারের শঙ্কায় থাকা ইংলিশদের এরপরের নায়ক পোপ। ষষ্ঠ উইকেটে বেন ফোকসের সাথে গড়েন ১১২ রানের জুটি। এই জুটিতেই লিড পায় ইংল্যান্ড। ফোকস ৩৪ রানে ফিরলেও একাই লড়াই চালিয়েছেন পোপ। তুলে নেন নিজের পঞ্চম টেস্ট শতক।
সপ্তম উইকেটে রেহান আহমেদের সাথে গড়েন ৬৪ রানের কার্যকরী জুটি। যেখানে রেহানের অবদান ২৮ রান। এরপর অষ্টম উইকেটে পোপ টম হার্টলির সাথে গড়েন ৮০ রানের জুটি। তবে ব্যক্তিগত ৩৪ রানে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে বোল্ড হয়ে হার্টলি ফিরলে ভাঙে এই জুটি।
তবে এই জুটি ভাঙার পর আর সামনে এগুতে পারেনি সফরকারীরা। পেসার মার্ক উড শূন্যরানে ফেরায় অলি পোপের সামনে কেবল নিজের দ্বিতকের সুযোগই ছিল। তবে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে রিভার্স খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন এই ম্যাচের নায়ক পোপ। তাকে থামতে হয় ১৯৬ রানে। তার অনবদ্য ইনিংসে ভর করে ইংল্যান্ড সংগ্রহ করে ৪২০ রান। আর এতেই ভারতকে ২৩১ রানের লক্ষ্য দিতে পারে দলটি।
/এনকে
Leave a reply