৪০ ঘণ্টা পরও পাকিস্তানে জানা গেল না ভোটের চূড়ান্ত ফল

ভোটের ফলাফল ঘিরে নানা নাটকীয়তার পর পাকিস্তানের নির্বাচনে বেশ বড় চমকই দেখিয়েছে কারাবন্দি ইমরান খানের দল তেহরিক-ই- ইনসাফ- পিটিআই। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টা পর্যন্ত পাওয়া আসনগুলোর বেসরকারি ফলাফলে ইতোমধ্যে ধরাছোঁয়ার বাইরে ইমরান খান সমর্থিত স্বতন্ত্ররা। খবর পাকিস্তানি গণমাধ্যম জিও নিউজের।

এদিকে পাকিস্তানে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সব আসনের ফলাফল ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি এখনও। বেসরকারিভাবে জানা গেছে ২৪৯টি আসনের ফলাফল। বাকি রয়েছে আর মাত্র ১৬টি আসন। তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী জয়ের বন্দরে নোঙর স্বতন্ত্রদেরই। তবে এগিয়ে থাকলেও সহজেই সরকার গঠন করতে পারছে না ইমরান সমর্থিতরা।

অন্যদিকে, ভোটে পিছিয়ে থাকলেও পাকিস্তানে জোট সরকার গড়তে ঐকমত্যে পৌঁছেছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডন নিউজের বরাতে এ তথ্য জানায গেছে।

ভোটের তথ্যে জিও নিউজ বলছে, সর্বশেষ প্রাপ্ত ২৪৯ আসনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৯৯টি আসনে। যার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকিরা দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান খানের অনুসারী।

নির্বাচনের সবশেষ আপডেট অনুযায়ী, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) জয় পেয়েছে ৭১টি আসনে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৩টি আসন। এছাড়া, মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট ১৭টি, ইস্তেগাম পাকিস্তান পার্টি ২টি, পাকিস্তান মাসহি লিগ ৩টি ও জমিয়ত উলামা-ই-ইসলাম ২টি আসনে জয় পেয়েছে। এছাড়া ঘোষিত আরও দুইটি আসনে একটি করে জয় পেয়েছে মাজলিস ওয়াহাদাত ই মুসলিমিন ও পাকিস্তানি মুসলিম লীগ (জেড)।

সাধারণ হিসেবে ১৬টি আসনের ফলাফল এখনও বাকি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নওয়াজ (পিএমএল-এন) জয় পেয়েছেন ৭১ আসনে।তবে তার দল যদি বাকি ১৬ আসনের সবগুলোতেও জেতে, তবুও ছুঁতে পারবে না স্বতন্ত্রদের। কারণ, প্রথম অবস্থানে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছে ২৮ আসনে। যদিও পিএমএল-এন বাকি ১৬ আসনের সবগুলোতেই যে জিতবে না সেটাও অনুমেয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ২৬৬টি আসনে দেশটির জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে আসন রয়েছে মোট ৩৩৬টি। ২৬৬টি আসনের বাইরে বাকিগুলো নারী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য সংরক্ষিত।

সংরক্ষিত মিলে এককভাবে সরকার গঠনে দরকার ১৭৩টি আসন। সেক্ষেত্রে নির্বাচন হওয়া আসনগুলোর মধ্যে প্রায় ১৫০ আসনের কাছাকাছি জিততে হয়। তাই দেশটির এবারের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারছে না কোনো দল।

এদিকে, ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়ার জন্য মোবাইল ফোন পরিষেবা বন্ধ করাকে দায়ী করেছে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ অবস্থায় ভোটের ফলাফলে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে পিটিআই। ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়াকে নজিরবিহীন বলে আখ্যা দিয়েছেন দলটির মুখপাত্র রউফ হাসান।

বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শেষে পিটিআই বলেছিল, তারা ১৫০টি আসনে এগিয়ে আছে। তবে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, তারা এগিয়ে থাকলেও তা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার মতো নয়।

যদিও ভোটে বেশ চমক দেখিয়েছে দলটি। আগে থেকে বিশ্লেষকরা বলছিলেন, পিটিআইয়ের ভরাডুবি হতে পারে। আর সহজে ক্ষমতায় আসতে পারে পিএমএল-এন। কিন্তু ভোটের শেষে দেখা গেলো উল্টো। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও বেশ বড় ব্যবধানেই এগিয়ে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা।

কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সেক্ষেত্রে জোট সরকার গঠিত হবে। এক্ষেত্রে পিটিআই অন্যদের সঙ্গে জোট গঠন করতে পারে। আবার পিএমএল-এন, পিপিপি ও অন্যান্য দলগুলো জোট গঠন করেও ক্ষমতায় আসতে পারে।

পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলী খান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা ১৫০টির বেশি আসন পাবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বা বিলাওয়াল ভুট্টোর দলের সঙ্গে তারা জোট করবেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি এ-ও বলেছেন, পিএমএল–এন ও পিপিপির সঙ্গে আমরা কোনো যোগাযোগ রাখছি না।

প্রসঙ্গত, এ নির্বাচনে ইমরান খানের দল সরাসরি অংশ নিতে পারেনি। দলটির সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। কারাদণ্ডিত হয়ে ইমরান খানও কারাগারে রয়েছেন। তাই তিনি ভোটে দাঁড়াতে পারেননি। তবে, জেল থেকে তিনি ভোট দিয়েছেন।

/এমএইচ