ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত। গাছে গাছে ফুটেছে দুরন্ত ফুল। বাতাসে ভেসে আসছে কোকিলের কুহুতান। গাছের তলে অথবা ফুটপাতে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক। মাঘ বিদায় নিয়ে হাজির হয়েছে চৈত্র। বসন্তের আগমনী দিনে যমুনা অনলাইনের বিশেষ আয়োজন ‘বাংলার বইমেলা’র মুখোমুখি হয়েছেন লেখক আনিসুল হক। তার সঙ্গে কথা বলছেন ফারহানা ন্যান্সি।
যমুনা অনলাইন: ক্যালেন্ডারের পাতায় বসন্ত এসে গেছে। আপনার মনে কি বসন্ত এসেছে?
আনিসুল হক: আমার মনে সবসময় বসন্তই থাকে। যদিও আমার প্রিয় ঋতু বসন্ত নয়, বর্ষা। বসন্তের ধুলা অপছন্দ করি। পছন্দ করি সন্ধ্যার বাতাস, কোকিলের গান, ফুটন্ত ফুল। সবচেয়ে পছন্দ করি বসন্তে মেয়েদের গায়ে বাসন্তি রঙের শাড়ি।
যমুনা অনলাইন: আমাদের উপন্যাস-কবিতায় বরাবরই বসন্ত প্রভাব রাখে। এটাকে কীভাবে দেখেন?
আনিসুল হক: আমাদের বসন্তটা কবিদের তৈরি। যেমন নীরদ সি চৌধুরী বলেছিলেন, বাঙালি আগে প্রেম করতে জানতো না, তাদের শুধু শরীর ছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস পড়ে বাঙালি ‘রোম্যান্টিক’ প্রেমটাকে শিখলো, জানলো। একইভাবে আমি বলব– বসন্ত বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ঋতু নয়। কিন্তু যেহেতু কবিরা বলেছেন, কালিদাস-রবীন্দ্রনাথ বসন্ত নিয়ে বহু গান লিখেছেন; একারণেই বসন্ত বিখ্যাত হয়েছে। বসন্ত খুব আরামের ঋতু, এরকম কিন্তু নয়।
যমুনা অনলাইন: অনেকেরই প্রিয় ঋতু বসন্ত। আপনার হয়তো খুব একটা পছন্দ নয়। তাই হয়তো এভাবে দেখছেন বসন্তকে। জানতে চাই, ভালোবাসার সঙ্গে বসন্তের কোনো যোগাযোগ আছে কিনা?
আনিসুল হক: এটাও একটা পৌরাণিক মিথ। কিউপিড তীর নিক্ষেপ করেছিল। সেই প্রেমের শর এসে আমাদের বুকে বিদ্ধ হয় বসন্তকালে। তাই আমরা বলি, বসন্ত প্রেমের ঋতু। এটাও কবিদের বানানো বলে মনে করি আমি।
যমুনা অনলাইন: কবিরা তো আসলে পাঠকদের ভালোবাসতে শেখায়। তাই না?
আনিসুল হক: একদমই। সব প্রাণীরই তো বেসিক ইন্সটিক্ট সমান। তাহলে মানুষ কেন ‘মানুষ’ হলো? রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, আমাদের দেহের উচ্চতা সাড়ে তিন হাত কিন্তু আমাদের আবাসস্থলের উচ্চতা আরও বেশি লাগে। যা প্রয়োজন, তার বাইরের কোনোকিছু করাটাই হচ্ছে সভ্যতা বা মনুষ্যত্ব। এজন্যই আমরা বসন্তের বন্দনা করি, আমরা সাজি। আর, প্রেম তো খুব ভালো একটা ব্যাপার। ভালোবাসা দিয়েই আমাদের শত্রুকে জয় করতে হবে। আঘাত করলে প্রত্যাঘাত আসবে, এটা অনস্বীকার্য।
যমুনা অনলাইন: আপনার ‘মা’ উপন্যাস নিয়ে পাঠকের (বিশেষত যারা মা) মধ্যে এক ধরনের মায়া কাজ করে। তারা ইমোশনালি কানেক্টেড হয় উপন্যাসটির সঙ্গে। এই ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন?
আনিসুল হক: এটা আমি আগে কখনও খেয়াল করিনি। আমার অনেক নারীপ্রধান উপন্যাস আছে। এর মধ্যে ‘মা’ একটি। উপন্যাসটি রচিত হয়েছে শহীদ আজাদ ও তার মায়ের গল্প অবলম্বনে। মা জানতে পারেন, ধরা পড়ার পর জেলখানায় তার ছেলে অনেক দিন ভাত খেতে পায়নি। এটা জেনে আজাদের মা প্রায় ১৪ বছর ভাত খাননি। এটা সত্য ঘটনা। তো পাঠকেরা এটা পড়েন এবং এটা দ্বারা তারা স্পৃষ্ট হন।
‘মা’ একুশ বছরের পুরোনো বই। একজন মা আমাকে বলেছিলেন, আমরা কি আমাদের সন্তানকে দেশের জন্য উৎসর্গ করতে পারব? আমি বলেছি, সবাই সবসময় সাহসী থাকে না। সময় মানুষকে সাহসী করে তোলে।
যমুনা অনলাইন: পাঠকের বই পড়ার প্রবণতা কমে এসেছে বলে শোনা যায়। আরেকটি কথা শোনা যায়– মেলায় আসা ‘দর্শনার্থী’দের মধ্যে কতোজন ‘পাঠক’?
আনিসুল হক: আমি বলি যে, অনেক মুকুল ফুটবে কিন্তু ফল হবে অল্প। এটাই পৃথিবীর নিয়ম। মেলায় সবাই আসবে কিন্তু সবাই হয়তো বই কিনবে না। বই কেনাও যায় কিন্তু সব কি পড়া সম্ভব? আমি যেমন বছরে দুইশ বই কিনি, কিন্তু পড়ি হয়তো দশটা। বাকি বইগুলো থাকে। যখন প্রয়োজন পড়ে, সেগুলো হয়তো কাজে লাগে। কাজেই পাঠক হতে প্রস্তুতির দরকার আছে বলে আমি মনে করি।
যমুনা অনলাইন: ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দিয়েছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আনিসুল হক: আপনাকেও ভালোবাসা দিবস ও বসন্তের শুভেচ্ছা। ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক বই বিনিময়’ দিবস। পাঠককে বলব, শিশুদের হাতে বই তুলে দিন। অন্তত একটি করে নতুন বই।
/এএম
Leave a reply