‘ম্যান ইন ফাইনালের’ জন্মদিন আজ

|

ছবি: সংগৃহীত

রাকিবুল ইসলাম মিতুল:

সব ম্যাচরই একজন নেপথ্য নায়ক থাকে। যিনি সব সময় প্রদীপের আলোয় থাকেন না। আবার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতেও ভূমিকা রাখেন। তেমনই ফাইনাল ম্যাচের এক নায়ক আনহেল ডি মারিয়া। আর্জেন্টিনার কিংবা রিয়াল মাদ্রিদ ফাইনাল ম্যাচ এলেই যেন নিজেকে মেলে ধরেন এই উইঙ্গার। আর্জেন্টাইন ফুটবলের রুপকথার এই জাদুকরের ৩৬তম জন্মদিন আজ।

২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো বেইজিং অলিম্পিকের জন্য ঘোষিত আর্জেন্টিনা দলে ডাক পান ডি মারিয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ে ১-১ সমতায় খেলা শেষ হলে, ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ম্যাচের ১০৫তম মিনিটে লিওনেল মেসির পাস থেকে আর্জেন্টিনার হয়ে জয়সূচক গোল করেন তিনি। তার গোলের ফলেই ম্যাচটিতে আর্জেন্টিনা ২-১ ব্যবধানে জয় লাভ করে। আবার প্রতিযোগিতার ফাইনালে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতে আর্জেন্টিনা। সেই গোলটিও আসে ডি মারিয়ার পা থেকেই। তার গোলের সুবাদেই দ্বিতীয়বারের মতো ফুটবলে অলিম্পিক স্বর্ণপদক জেতে আর্জেন্টিনা। অলিম্পিকের পর স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলতে শুরু করেন তিনি।

এরপর আর্জেন্টিনা জাতীয় দলেও নিজের জায়গা পাকা করে নিতে শুরু করেন ডি মারিয়া। ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপের দিয়াগো ম্যারাডোনার ঘোষিত ২৩ সদস্যের দলেও জায়গা পান তিনি। সেবারে কোয়ার্টার ফাইনাল অব্দি গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। পাঁচটি ম্যাচের চারটিতেই শুরুর একাদশে ছিলেন তিনি।

২০১৪ বিশ্বকাপের দলেও যথারীতি ডাক পেলেন তিনি। বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ১৪টি ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ব্রাজিলের মাটিতে অনুষ্ঠিত ওই আসরে বিশ্বকাপের ফাইনালেও পৌঁছায় আর্জেন্টিনা। ডি মারিয়ার গোলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে গিয়েছিল দলটি। কিন্তু সেমির আগেই কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচটিতে উরুর পেশিতে চোট পেয়েছিলেন ডি মারিয়া। ফলে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটিতে স্কোয়াডেই ছিলেন না তিনি।

কিন্তু দল যখন ফাইনালে, বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার এত কাছাকাছি, তখন বেঞ্চে বসে থাকতে কিছুতেই মন সায় দিচ্ছিল না তার। ঠিক করেছিলেন, প্রয়োজনে ম্যাচের দিন পেইন কিলার নিয়ে খেলবেন তিনি। বিষয়টি জানিয়েছিলেন দলের কোচ আলেসান্দ্রো সাবেয়াকেও। ডি মারিয়া যাতে ফাইনাল খেলতে না নামেন, এমন অনুরোধ করে তাকে চিঠিও দেয় রিয়াল মাদ্রিদ। জনশ্রুতি রয়েছে, ওই চিঠি নাকি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন তিনি।

ফাইনালের দিন দেখা গেল আলেসান্দ্রো সাবেয়া একাদশে রেখেছেন এনজো পেরেজকে। তবে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে ডি মারিয়াকে রেখেছিলেন তিনি। ফাইনাল ম্যাচের সময় গড়াতে থাকে, কোচ একের পর এক বদলি করতে থাকেন। কিন্তু তিনি মাঠে নামাননি ডি মারিয়াকে। অবশ্য আনফিট ডি মারিয়াকে না নামানোই ওই সময় যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত ছিল। মারাকানার সেই ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে গেল আর্জেন্টিনা ন্যূনতম গোল ব্যবধান। বেঞ্চে বসে দলকে হারতে দেখলেন তিনি। বাকরুদ্ধ হয়ে বেঞ্চে বসে কেঁদেছিলেন মারিয়া।

এরপর ২০২১ থেকে ২০২২ সাল- এই সময়টাতেই দীর্ঘ শিরোপা খরা মিটিয়ে পুরো আর্জেন্টিনা ভেসেছিল আনন্দের মহাসাগরে। প্রথমটা শুরু কোপা আমেরিকা জয়ের মধ্য দিয়ে। কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিপক্ষে গোল করে আর্জেন্টিনাকে ২৮ বছর পর এনে দেন কোনো মেজর শিরোপা। লা ফিনালিসিমায় ইতালিকে ৩-০ গোলে হারানোর পথেও গোলের দেখা পান আক্রমণভাগের এই ফুটবলার। বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষেও ডি মারিয়া পেয়েছেন অতি গুরুত্বপূর্ণ গোলের দেখা।

২০০৮ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেক হয় ‍ডি মারিয়ার। তারপর দেশের হয়ে খেলেছেন ১২৯টি ম্যাচ। আকাশি-সাদা জার্সিতে গোল করেছেন ২৯টি। ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে অবস্থান করছেন এই তারকা মিডফিল্ডার।

আর্জেন্টিনার অনেক তারকাকেই নিয়েই মাতামাতি হয়েছে, হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হবে। ফাইনালেও মেসি, মার্টিনেজদের সামনে হয়তো লাইমলাইট পাবেন না তিনি। তবু ডি মারিয়া যেন সবার চেয়ে আলাদা। তিনি এক অদম্য যোদ্ধা, তিনি স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনিই আর্জেন্টিনার ইতিহাসের অন্যতম এক নায়ক। ভামোস আনহেল ডি মারিয়া; এক নেপথ্য নায়ক।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply