ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য নিয়ে হঠাৎই তোড়জোড় চলছে প্রশাসনে। মাগুরার লিচু, মধুপুরের আনারসসহ বেশকিছু পণ্য নিয়ে কাজ করছেন জেলা প্রশাসকরা। এছাড়া, আগের আবেদনগুলোরও যাচাই-বাছাই চলছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, একই পণ্যের জিআই স্বীকৃতির জন্য দুই দেশ আবেদন করলেও ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন বিষয়টির সমাধান দেবে। সেখানে আবেদনেরও প্রস্তুতি চলছে।
প্রসঙ্গত, কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর মানুষ যদি কোনো পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে তাহলে তা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এসব পণ্য তালিকাভুক্ত করতে প্রায় সব রাষ্ট্রই কম-বেশি উদ্যোগ নেয়। এ বিষয়ে এক যুগ আগে বাংলাদেশের টনক নড়ে।প্রতিবেশি ভারত জামদানি ও ইলিশকে নিজস্ব পণ্য হিসেবে ঘোষণার উদ্যোগ নিলে ২০১৩ সালে জিআই আইন পাস করে সরকার।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শামীমুল হক বলেন, ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই হচ্ছে একটি আঞ্চলিক স্বীকৃতি। এটির পর যদি ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনে কোনো আপত্তি আসে তাহলে সংস্থাটির নির্দিষ্ট বোর্ড এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে, জিআই স্বীকৃতি পেলে স্থানীয় উৎপাদকরা বিশ্ববাজারে ব্র্যান্ডিংয়ের পাশাপাশি ভালো দামও পান। এছাড়া, এসব পণ্য বাইরের কোনো দেশ আমদানি করলে তার রয়ালিটি পাবে বাংলাদেশ। তবে দেশে জিআই নিয়ে গবেষণা ও কার্যক্রম সীমাবদ্ধ হাতেগোনা কয়েকটি সংগঠনে।
বিষয়টি নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. এম আবু ইউসুফ বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জনবল, দক্ষ ব্যক্তি ও গবেষণার অভাব এ সঙ্কটের জন্য দায়ী। এছাড়া সরকার এটিকে কতটুকু গুরুত্ব সহকারে দেখছে সেবিষয়েও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
অপরদিকে, দেশে এখন পর্যন্ত ৩১টি পণ্য জিআই হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের সাথে স্বীকৃতি ভাগাভাগি করে নথিভুক্ত প্রথম পণ্য জামদানি। এরপর একে একে ইলিশ, ফজলি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালোজিরা চালসহ নানা পণ্যের জিআই ঘোষণা করা হয়। তবে, সুন্দরবনের মধু ও টাঙাইলের শাড়ি নিয়ে ভারতের সাথে জটিলতা রয়েছে। অন্যদিকে, সাদা শাপলা, কাঁঠাল, চা, পাট কিংবা সাতকড়ার মতো পণ্যের জিআই স্বীকৃতির জন্য কোনো দেশই আবেদন করেনি।
উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়িকে নিজেদের পণ্য দাবি করে দেশটি। এটির জিআই স্বত্ব প্রাপ্তির ঘোষণাও দেয় ভারত। এরপরই বাংলাদেশে এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এতে টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি এটির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বত্ব পেতে আবেদন করে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন। পরদিন টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেড মার্কস অধিদফতর।
/আরএইচ
Leave a reply