‘কথায় কথায় বন্দুকের ভয় দেখাতেন স্যার’

|

কথায় কথায় বন্দুকের ভয় দেখাতেন বলে অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন লেকচারার রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে। তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারিও দিতেন তিনি।

সোমবার (৪ মার্চ) বিকেলে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ওই শিক্ষকের গুলিতে আহত হয়েছেন আরাফাত আমিন তমাল নামে তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর ওই শিক্ষককে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

গত তিন মাস ধরে ওই শিক্ষক বন্দুক নিয়ে ক্লাসে আসতেন উল্লেখ করে এক শিক্ষার্থী জানান, আজ আমাদের একটি পরীক্ষা (আইটেম) ছিল। তিনি এসে বললেন, আজ যদি কেউ একটা শব্দ মিস করো, তাহলে তাকে আমি শ্যুট করব। তার বন্দুক ব্যাগের ভেতর ছিল। ব্যাগ থেকে বন্দুক বের করে ট্রিগারে গুলি ভরার পর আমার দিকে ধরলো। আমি উত্তর দিতে পেরেছি বিধায় আমাকে ছেড়ে দেয়া হলো। তারপর ছেলেরা ঢুকলো স্যারের রুমে। যাকে গুলি করা হয়েছে, আজ সকালে ক্লাসে তাকে ‘দেখে নেয়া’র কথা বলেছিলেন স্যার। শুরু থেকে ওই শিক্ষক তমালকে টার্গেট করেছিলেন।

তমালকে কেন গুলি করা হলো, এমন প্রশ্নে ওই শিক্ষার্থী জানান, স্যার ওকে আগে থেকেই পছন্দ করতো না। পড়া জিজ্ঞেস করার পর সম্ভবত একটা উত্তর দিতে পারেনি। তখন রাগের মাথায় স্যার ওকে গুলি করে। যেহেতু বন্দুকে গুলি লোড করা ছিল, ওর পায়ে এসে গুলি লাগে। তমালের পকেটে ফোন ছিল, তাই পাশ ঘেঁষে গুলি চলে যায়। আহত শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে জানা যায়।

আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের পরীক্ষার আইটেম দেয়ার জন্য লাস্ট ব্যাচ হিসেবে আমরা ওখানে ছিলাম। হুট করে স্যার তার পিস্তলটি বের করলেন এবং সেটা তাক করলেন। এরপর স্যার ট্রিগারে চাপ দিলেন এবং বললেন, সেফটি গার্ড থাকলে এটি চলবে না। তারপর আবার সেফটি গার্ড ছেড়ে দিয়ে ট্রিগারে চাপ দেয়া মাত্রই বন্দুক থেকে গুলি বের হয় এবং সেটা লাগে আমাদের ব্যাচমেট তমালের পায়ে। গুলি যদি তমালের পায়ে না লেগে মাথায় বা অন্য কোথাও লাগতো, সে তো তৎক্ষণাৎ মারাও যেতে পারতো।

তিনি আরও জানান, প্রতিদিন ব্যাগে বন্দুক নিয়ে আসতেন মেডিসিন লেকচারার রায়হান শরীফ। সকালের লেকচার ক্লাসে ওই শিক্ষক তমালকে বলছিলেন, ‘তোকে আজ গুলি করে ফেলব। তোকে আজ দেখে নেব’। অনেক দিন ধরেই আহত শিক্ষার্থীকে হয়রানি করছিলেন বলে অভিযোগ করেন ওই শিক্ষার্থী।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র বলেন, যোগদানের পরেই রায়হান শরীফ বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করতেন। ছাত্রীদের রাতের বেলায় মেসেজ দিতেন এবং ছাত্রদের ওপেন বন্দুক রেখে হুমকি দিতেন। ‘তোরে গুলি করব’, ‘তোরে ফেল করিয়ে দেব’, এরকম হুমকি দিতেন তিনি। এর ধারাবাহিকতায় আজ পরীক্ষা চলাকালীন আমাদের জুনিয়র তমালকে গুলি করে রায়হান স্যার।

এর আগে, শিক্ষক রায়হান শরীফের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীরা একবার তাকে হল থেকে বের করে দেয় বলেও ওই শিক্ষার্থী জানান।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply