রিমন রহমান:
সূর্যটা ঠিক স্বপ্না বেগমের মাথার ওপর। শীতের শেষে রোদের তীব্রতাও বেশ। ইটের খোয়া মাথায় নিয়ে ছুঁটছেন তিনি। এই কাজ মাসের মাত্র অর্ধেক সময় থাকে। তার আয় দিয়ে এই দ্রব্যমূল্যের বাজারে বেঁচে থাকা কঠিন।
স্বপ্না জানিয়েছেন, প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ টাকা মজুরি পান তিনি। এই টাকা দিয়েই কোনোরকমে ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে আছেন। এছাড়া উপার্জনের একটি অংশ ঘর ভাড়াতেও চলে যায়।
স্বপ্না যেন স্বল্প আয়ের মানুষের বর্তমান অবস্থার প্রতীক। তার মতোই কঠিন বাস্তবতায় স্বল্প আয়ের মানুষেরা। তিন বেলার জায়গায় বর্তমানে দুই বেলার খাবার যোগাড় করাই কষ্টসাধ্য।
নিম্ন আয়ের আরেজন বললেন, আগে যে মাছের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা ছিল, বর্তমানে তা দ্বিগুণ। গরীব মানুষের পক্ষে এত দাম দিয়ে কেনা সম্ভব?
মূলত, মূল্যস্ফীতি মানুষের জীবনধারণকে কঠিন করে তুলেছে। বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ এবং সার্বিকভাবে এই সূচকের হার প্রায় ১০ শতাংশ। তাতে দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশকে নানাভাবে তাদের দৈনন্দিন চাহিদার লাগাম টানতে হচ্ছে। দামের চাপে কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে জীবনধারণ। খাদ্যপণ্য ছাড়াও লাফিয়ে বেড়েছে সেবা ব্যয়। বলা যায়, অর্থনীতির সব সূচক রয়েছে বেসামাল অবস্থায়। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও সুফল মিলছে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান কমে যাচ্ছে। এর সাথে সাথে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর জন্য যে সকল বরাদ্দ আছে, তাতে নানা রকম সমস্যা আছে। তবে তা সত্ত্বেও এটি দেশের দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এদিকে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো তা কি যথেষ্ট? বলা হচ্ছে, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা কঠিন। তাছাড়া এক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমিয়েও সুফল মেলার সম্ভাবনা কম। তাহলে দামের উত্তাপ থেকে বাঁচতে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?
এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, আমদানি শুল্ক কমালে অভ্যন্তরীণ বাজারে এর প্রভাব খুব একটা পড়ে না। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতির খুব একটা কমানো সম্ভব নয়। কারণ আমাদের আমদানি নির্ভরতা বেশী।
কেবল মূলস্ফীতি নয়, অর্থনীতির কোনো ক্ষেত্রেই স্বস্তি নেই। প্রবৃদ্ধি কমছে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। এদিকে ব্যাংকিং খাতের অবস্থাও নড়বড়ে।
এ নিয়ে সাবেক এ অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ক্যাপিটাল মেশিনারি ব্যবহারের জন্য যে কাঁচামাল দরকার, সেগুলোতে এলসি স্যাটেলমেন্ট ও খোলা দুটোই ইনোগেটিভ। বিনিয়োগ না হলে প্রবৃদ্ধি হবে না, আবার প্রবৃদ্ধি না হলে কর্মসংস্থান হবে না। দেশের রিজার্ভ ক্রমশই কমে যাচ্ছে। এর ফলে ডলারের সাথে টাকার মানের অবমূল্যায়ন হচ্ছে।
এছাড়া, ক্রমশই দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। ঋণদাতা সংস্থাগুলোর প্রেসক্রিপশন পরিপালনও জীবনধারণকে কঠিন করে তুলেছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান বলেন, গত পনের বছরে অর্থনীতির যে উল্লম্ফন ঘটেছিল তা কন্ট্রাক্ট করেছে। তবে, আমরা পূর্ব অবস্থায় ফিরে যাব না।
/আরএইচ/এমএন
Leave a reply