এই রুপালি গিটার ফেলে
একদিন চলে যাব দুরে, বহুদূরে
সেদিন অশ্রু তুমি রেখো
গোপন করে।….
নিজের গানের মতো করে রূপালী গিটার ফেলে চলে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতকে এগিয়ে নেয়ার অন্যতম অগ্রপথিক আইয়ুব বাচ্চু বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে অচেতন অবস্থায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
এখন অশ্রু গোপন করে রাখার চেষ্টা তার প্রিয়জন ও ভক্তদের। উপমহাদেশের অন্যতম সেরা এই গিটারিস্ট, গায়ক ও গীতিকারের অকস্মাৎ মৃত্যুতে শোকে বিহব্বল দেশের সঙ্গীতাঙ্গন। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে প্রিয় শিল্পীর অনাকাঙ্খিত প্রস্থান মর্মাহত করেছে সবাইকে।
ব্যান্ড দল এলআরবির লিড গিটারিস্ট ও ভোকাল আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার এবং প্লেব্যাক শিল্পী।
জনপ্রিয় এই ব্যান্ডশিল্পীর জন্ম ১৯৬২ সালের ১৬ আগষ্ট চট্টগ্রাম শহরে। ১৯৯১ সালে জন্ম নেওয়া ‘এলআরবি’ ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল তিনি। এর আগে তিনি প্রায় দশ বছর সোলস ব্যান্ডের সাথে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
সঙ্গীতজগতে তার যাত্রা শুরু ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে। অত্যন্ত গুণী এই শিল্পী তার শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি (AB) নামেও পরিচিত। ডাক নাম রবিন। মূলত রক ঘরানার কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক গান, ক্লাসিকাল সঙ্গীত এবং লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।
বাচ্চুর কন্ঠ দেয়া প্রথম গান “হারানো বিকেলের গল্প”। গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত রক্তগোলাপ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি তেমন একটা সাফল্য পায়নি। আইয়ুব বাচ্চুর সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ময়না (১৯৮৮) এর মাধ্যমে।
এরপর ১৯৯১ সালে বাচ্চু এল আর বি ব্যান্ড গঠন করেন। এই ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম এল আর বি প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। অ্যালবামের “শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি”, “ঘুম ভাঙ্গা শহরে”, “হকার” গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে।
পরে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম “সুখ ও তবুও” বের হয়। সুখ অ্যালবামের “সুখ, “চলো বদলে যাই”, “রূপালি গিটার”, “গতকাল রাতে” উল্লেখযোগ্য গান।
“চলো বদলে যাই” বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম কষ্ট। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অবিহিত করা হয় এটিকে। “কষ্ট কাকে বলে”, “কষ্ট পেতে ভালোবাসি”, “অবাক হৃদয়”, ও “আমিও মানুষ” এসব এই অ্যালবামের জনপ্রিয় গান।
২০০৯ সালে তার একক অ্যালবাম “বলিনি কখনো” প্রকাশিত। ২০১১ সালে এল আর বি ব্যান্ড থেকে বের করেন ব্যান্ড অ্যালবাম যুদ্ধ। এই অ্যালবামে ১০টি গান রয়েছে। ছয় বছর পর তার পরবর্তী একক অ্যালবাম জীবনের গল্প (২০১৫) বাজারে আসে। এই অ্যালবামে ১০টি গান রয়েছে। গানের কথা লিখেছেন সাজ্জাদ হোসাইন এবং সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আইয়ুব বাচ্চু নিজে।
অভিনয়ও করেছেন বাচ্চু। ২০১০ সালে ঈদের জন্য নির্মিত ট্রাফিক সিগন্যাল ও হলুদ বাতি শিরোনামের নাটকে অভিনয় করেন।
২০১২ সাল থেকেই নানা ধরনের অসুস্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ফুসফুসে পানি জমার কারণে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছিল।
আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় কয়েকটি একক অ্যালবাম হচ্ছে, ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি (২০০২), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)।
Leave a reply