দেখতে দেখতে চলে এসেছে ‘মাহে রমজান’। ত্যাগ, সংযম ও শান্তির মাস। সারা বিশ্বের মুসলমানদের বছরের অন্য এগারো মাস থেকে ভিন্নভাবে কাটে এই এক মাস। পবিত্র রমজানকে উপলক্ষ্য করে একসঙ্গে ইফতার ও সেহরি করে পারিবারিক বন্ধন মজবুত করার এখনই সময়।
পরিবার যেকোনো দেশ বা সংস্কৃতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। গ্রাম বা মফস্বলে অধিকাংশ পরিবার একসঙ্গে সময় কাটাতে পারলেও শহরমুখী পরিবারগুলোতে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এখানে একক পরিবারের কালচার গড়ে উঠলেও পরিবারের কর্তা বা কর্ত্রী অনেকেই বাবা-মা, ভাই-বোনকে নিজেদের সঙ্গে রাখেন। অনেকেই আছেন, চাকরির কারণে যাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে বসে সময় কাটানো হয়ে ওঠে না। যান্ত্রিক শহর তাদের সেই অবসর দেয় না। ফলে অনেক সময় পরিবারের সদস্যের মধ্যে দেখা বা কথা হয় কম। এতে কখনও কখনও খানিকটা দূরত্ব তৈরি হয়।
রমজান মাস যেন পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আন্তরিকতা ও ভালোবাসার পয়গাম নিয়ে আসে। রোজার কারণে দৈনন্দিন হাট-বাজার ও খাবার-দাবারের পেছনে সময় কম ব্যয় হয়। পবিত্র এই মাসে তাই পরিবারকে বেশি সময় দেয়া যায়। একসঙ্গে বসে ইফতার ও সেহরি করার সুযোগ মেলে। ফলে পারিবারিক ও মানসিক বন্ধন দৃঢ় হয়। রমজান এভাবে পরিবারের সদস্যদের মাঝে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে। পারিবারিক বন্ধনের তাৎপর্যকে শক্তিশালী করে। রমজানে ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে আধ্যাত্মিকতাও পুনরুজ্জীবিত হয়।
এছাড়া, রোজার সুবাদে পরিবার সন্তানদের প্রতি মনোযোগী হওয়ার বেশি সময় পায়। ফলে সন্তানদের আচরণ ও চরিত্র গড়ে ওঠার প্রশিক্ষণে সময় দেয়া যায়। তাদেরকে ধর্মীয় ও মানবিক শিক্ষায় অভ্যস্থ করার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয়া যায়। এতে সন্তান হতে পারে একজন ভালো মানুষ, সুনাগরিক। আর এ গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য পালনে পিতা-মাতা তথা অভিভাবকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। কেননা, শিশু-কিশোরদের জন্য পরিবার হলো প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
পরিবার সম্পর্কে ইসলাম
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মজবুত সম্পর্ক গড়ার শ্রেষ্ঠ সুযোগ করে দেয় মাহে রমজান। এই পবিত্র মাসে পরিবারের সঙ্গে নবীজির আচরণ সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেন ইসলামী চিন্তাবিদ ফয়সাল বিন আলী আল বাদানী। তার গ্রন্থ ‘হাকাজা কানান নাবিয়্যু ফি রামাদান’-এ তিনি দেখিয়েছেন, রাসুল (সা.) শুধু নিজের ইবাদত নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন না, পরিবারের লোকজনকে কীভাবে ভালো মানুষ ও খোদাভীরু হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সেই চেষ্টাও জীবনভর অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি। ফলে দেখা গেছে, নবীজির সম্মানিত স্ত্রীরা পরে বড় বড় সাহাবির শিক্ষক হওয়ার মতো গৌরব অর্জন করেন।
পরিবার সম্পর্কে মহানবীর (সা.) হাদিস রয়েছে– ‘তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম সে, যে তার পরিবারের নিকট উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের নিকট তোমাদের চাইতে উত্তম। আর তোমাদের কোনো সঙ্গী মৃত্যুবরণ করলে তার সমালোচনা পরিত্যাগ করো।’ (তিরমিজি, হাদিস ৩৮৯৫)
পরিবারের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাও বলেছেন– আপনি আপনার নিকটবর্তী পরিবার-পরিজনকে সতর্ক করুন। (সূরা শুআরা, আয়াত ২১৪)
পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভাই-বোন। হৃদ্যতায় ভাই-বোনের সম্পর্কের কোনো তুলনা হয় না। তাদের মধ্যে হয় খুনসুটি, দুষ্টুমি। ঘনিষ্ঠ অভিযোগ-অনুযোগও বজায় থাকে। তবে ভাই-বোনের মধ্যেও বড়কে সম্মান ও ছোটকে স্নেহ করতে হবে। এ প্রসঙ্গেও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন– ‘সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে ছোটকে স্নেহ ও বড়কে সম্মান করে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৯)
মহানবী (সা.) স্বজনদের সম্পর্কে আরও বলেছেন– ‘যে আত্মীয়দের সঙ্গে সদ্ভাব রক্ষা করবে, আমিও তার সঙ্গে সদ্ভাব রক্ষা করব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৫০২)
/এএম
Leave a reply