আন্তর্জাতিক নৌপথের মধ্যে লোহিত সাগরে নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের বেশিরভাগ সৈন্যই হুথি বিদ্রোহীদের দমনে ব্যস্ত। এর ফলে সোমালিয়ান জলদস্যুরা আবারও আগের মতো দৃশ্যপটে। ভারত মহাসাগরের গালফ অব এডেনসহ বিস্তর উপকূলীয় এলাকায় তাদের ব্যপক তৎপরতা বেড়েছে।
গত ৩ মাসে সোমালিয়ান উপকূলে ১৫টির মতো জাহাজ ছিনতাই ও জিম্মি করার ঘটনা ঘটেছে, যার সর্বশেষ শিকার বাংলাদেশের জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ। ২৩ জন ক্রুসহ মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাওয়ার পথে সোমালিয়ান জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয় জাহাজটি। এর আগে, ২০১০ সালেও সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছে বাংলাদেশের ‘জাহান মণি’ জাহাজ ও এর ২৬ নাবিক ১০০ দিন আটক থাকার পর মুক্তি পায়।
বিশ্বব্যাংকের একটি হিসাব অনুযায়ী ২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সোমালিয়ান জলদস্যুদের আয় প্রায় সাড়ে চারশ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ওশেন বিয়ন্ড পাইরেসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, জলপথে দস্যুতার কারণে এক বছরে বিশ্বে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে থাকে, তার পরিমাণ ৭ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার।
প্রায় ৬ দশক হলো সোমালিয়ার জন্ম হয়েছে। দেশটির গণতান্ত্রিক অবস্থা বেশ ভঙ্গুর, সেইসাথে অর্থনীতিও। ১৯৯১ সালে সামরিক সরকার বিদায় নিলে পরের দুই দশকে দেশটি দেখেছে কেবলমাত্র যুদ্ধবিগ্রহ। দেশটিতে কার্যকরী নৌ কিংবা কোস্টগার্ড বাহিনীও ছিল না। একপর্যায়ে মাছ ধরা তাদের প্রধান পেশা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণে সেই জেলেদের ভেতর থেকেই অনেকে পা বাড়ায় অপরাধ জগতে। নিজেদের অজান্তেই তারা হয়ে ওঠে ‘জলদস্যু’।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশ সোমালিয়া উপকূলের কাছাকাছি ভারত মহাসাগরে নৌপথকে বাণিজ্যের জন্য ব্যবহার করতো, তারা সেখানে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে দিলে ২০১০-১২ সাল নাগাদ এই জলদস্যুরা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের আনাগোনা বেড়েছে। প্রায় দুদশক আগের রূপে ফিরছে এই জলদস্যুরা।
দস্যুদের আক্রমণের ধরন ও সময় অনেকটা আকস্মিক ও ঝটিকা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময় রাতে কিংবা অন্ধকার নামলেই আক্রমণ চালায় তারা। তাই জলদস্যুরা কোনো জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলে দ্রুত সময়ে সামরিক পদক্ষেপ নেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আক্রমণের সময় হিসেবে তারা রাত কিংবা ভোরের দিকটাকেই বেছে নেয়। জলদস্যুরা বড় জাহাজগুলোর কাছে পৌঁছাতে ছোট ছোট মটরযানচালিত নৌকা ব্যবহার করে। এগুলো দ্রুত গতির পাশাপাশি বড় জাহাজের রাডারে সহজে ধরা পড়ে না।
/এমএইচআর/এমএন
Leave a reply