পৃথিবীতে মহাদেশ রয়েছে ৭টি। ফুটবল কনফেডারেশন ৬টি। কারণ পেঙ্গুইনরা ফুটবল খেলে না, তাই অ্যান্টার্কটিকাতে ফুটবলের সংগঠনও নেই। তবে দর্শকদের চাহিদা বলতে একটা সময় ছিল উয়েফা এবং শুধুই উয়েফা। তাহলে অন্য অঞ্চলগুলো কী দোষ করলো? ইউরোপের টাকা বেশি নাকি সেখানকার প্রচারমাধ্যম বেশি? নাকি প্রতিযোগিতা?
দেখা যায় আফ্রিকার কেউ একজন তার নিজ মহাদেশের কনফেডারেশনের ম্যাচ দেখতো না। বাংলাদেশের কেউ বছর দুয়েক আগেও জানতো না তার দেশের ক্লাবও চ্যম্পিয়নস লিগ খেলতে পারে। এই চ্যাম্পিয়নস লিগ যে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ নয় বরং এর বাইরেও চ্যাম্পিয়নস লিগ হয় সেটিও কজন’ই বা জানতো কিংবা খোঁজ রাখতো।
ইউরোপের ফুটবল এমন এক জায়গায় চলে গিয়েছে যার রেশ থেকে কিছুটা নিজস্বতাবোধ নিয়ে জেগে আছে কনমেবল কনফেডারেরেশন। দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নস লিগ কোপা লিবার্তাদোরেসের রয়েছে আলাদা এক অবস্থান। ইউরোপের বাইরে ল্যাতিন ফুটবলকে সমীহ করা হত আগে থেকেই। বোকা জুনিয়র্স, রিভার প্লেট, সান্তোস এই ক্লাবগুলোর খেলা সরাসরি না দেখলেও হালের ডিজিটাল বিশ্বে এই ক্লাবগুলোর নাম বেশ পরিচিত। এমনকি একবার তো নিরাপত্তা ইস্যুতে কোপা লিবার্তাদোরেসের ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের খেলা হয়েছিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। রিয়াল মাদ্রিদের হোম ভেন্যুতে দক্ষিণ আমেরিকান ক্লাবের খেলায় দর্শকদের ভিড় দেখে বোঝার উপায় ছিলো না যে এটা ইউরোপের বাইরের দল।
সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্লাব বসুন্ধরা কিংস এএফসির শীর্ষ পর্যায়ের কিছু টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে। তাদের নিজস্ব মাঠও রয়েছে। যে কিশোর ছেলেটা কয়েক বছর আগে ‘এল ক্ল্যাসিকো’ দেখতো রাত জেগে কিংবা এখনও দেখে সে এখন ভাবে তার দেশের একটা ক্লাব যদি এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলে তাহলে সে হয়ত তার দেশের ক্লাবের হোম ম্যাচগুলোতে ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন কিংবা সৌদি আরবের ক্লাবগুলোর খেলাগুলো দেখতে পাবে।
একইভাবে আফ্রিকার সিএএফ চ্যাম্পিয়নস লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মিশরের ক্লাব আল আহলি, উত্তর আমেরিকার কনকাকাফের মেক্সিকান ক্লাব লিওন কিংবা সবচেয়ে ছোট এবং কম বাজেটের ওএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড সিটি এফসির গল্প ছড়িয়ে আছে সারা বিশ্বে।
বছর দুয়েক আগেও যেখানে ইউরোপের বাইরের খবর খুব একটা পাওয়া যেতো না এখন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জন্যই আরবের লিগ মানুষ ফলো করে। আরবে নেইমার কিংবা বেনজেমাদের যাত্রা শুরুর জন্য কিংবা এশিয়ান ফুটবলের প্রতি নজর রাখতে বিশ্বের দর্শকদের যিনি পরোক্ষভাবে কাজ করে গেলেন রোনালদো।
মেসি এমন একটি লিগে খেলতে গিয়েছেন যে লিগে রেলেগেশন নেই। তবুও তো মেসি খেলছেন। মেসি নামের উপর ভর করেই ‘আমেরিকান সকার’ যেটিকে তারা নিজেরাও ফুটবল বলে না সেই খেলায় চোখ রাখছেন কেউ কেউ। মেসি রোনালদো ফুটবলের সুপারস্টার বটে। কিন্ত এএফসি আর কনকাকাফক একটু হলেও ছড়িয়ে দেননি কি? ফুটবল যে উয়েফার বাইরেও আছে সেটির বিশ্বব্যাপী প্রথম ফোকাস কি তারা দুজনই করালেন না? আরবের লিগ কিংবা আমেরিকান লিগ একটি গৌণ বিষয়। মুখ্য বিষয় হলো চেলসি ফুটবল ক্লাবের সাথে মানুষ এখন ইন্টার মিয়ামি, আল নাসরকে বোঝে। এর রেশ ধরে তরুন প্রজন্ম অন্য কিছুও শিখেছে। ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবের গ্যালারিতে ভক্তদের আল্ট্রাস গ্রুপ এখন বসুন্ধরা কিংস কিংবা কলকাতার মোহনবাগানের গ্যালারিতেও দেখা যায়।
প্রযুক্তি আর মেসি-রোনালদো, ফুটবলকে আরও বৈশ্বিক করতে দুটিই অতপ্রোতভাবে জড়িত।
/এমএইচআর/আরআইএম
Leave a reply