যুক্তরাষ্ট্রের পল আলেকজান্ডার। ১৯৫২ সালে তার বয়স যখন মাত্র ৬, পোলিওতে আক্রান্ত হন তিনি। এই রোগের কারণে পলের ঘাড় থেকে পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়। এ কারণে পৃথিবীর আলো বাতাসে মুক্তভাবে শ্বাস নিতে পারছিলেন না। তবে বাঁচতে চেয়েছিলেন ‘পোলিও পল’। তাই চিকিত্সকদের পরামর্শে তাকে ধাতব সিলিন্ডারের ভেতর রাখা হয়, যেখানে বাকি জীবনটা কাটাতে হলো তার। ‘হলো’ বলা হচ্ছে– কারণ, ‘ম্যান ইন দ্য আয়রন লাং’ এখন আর ধরাধামে নেই।
গত সোমবার (১১ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস হাসপাতালে মারা যান ৭৮ বছর বয়সী পল। তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ড্যানিয়েল স্পিঙ্কস জানান, সম্প্রতি আলেকজান্ডার কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে তিনি তার মৃত্যুর কারণ জানেন না বলে জানিয়েছেন। খবর এপির।
তার ভাই ফিলিপ আলেকজান্ডার পল সম্পর্কে জানান, সে একজন ‘অবিশ্বাস্য’ রোল মডেল। এই সময়ের ভেতর পল কলেজে যান এবং একজন আইনজীবী হন। প্যালাইজড অবস্থায় নিজের স্মৃতিকথা লিখে গেছে। বইটি সে লিখেছে তার মুখে কলম রেখে। তার বইটির নাম ‘থ্রি মিনিটস ফর এ ডগ: মাই লাইফ ইন এন আয়রন লাং’। ১৫৫ পৃষ্ঠার এই বইটি লিখতে তার পাঁচ বছর লেগেছিল।
একদিন দুদিন নয়, দীর্ঘ সাত দশকের বেশি সময় ধরে ৬০০ পাউন্ড ‘লোহার ফুসফুস’-এর ভেতর কাটালেন এক ব্যক্তি। অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনা সত্য। এরই মধ্যে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন তিনি। গত মার্চে পলকে বিশ্বের দীর্ঘতম ‘আয়রন ফুসফুসের রোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় গিনেস কর্তৃপক্ষ।
১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় পোলিও প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তখন দেশটিতে ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ পোলিওতে আক্রান্ত হয়েছিল। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ছিল শিশু। সে বছরই পল পোলিওতে আক্রান্ত হন। পরে ১৯৫৫ সালে পোলিওর টিকা আসে।
পোলিওতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে শিশুকাল থেকেই ‘ম্যান ইন দ্য আয়রন লাং’কে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। শ্বাস নিতে সহায়তার জন্য পলকে ক্যাপসুল আকৃতির একটি যন্ত্রের (আয়রন লাং) ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ক্যাপসুলটি রোগীর মাথা ছাড়া পুরো শরীর ঢেকে রাখে। যন্ত্রটি পলের ক্ষেত্রে কৃত্রিম ফুসফুস হিসেবে কাজ করে। পরে উন্নত প্রযুক্তি এলেও পল এই লোহার ফুসফুস ছাড়তে নারাজ ছিলেন।
পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়ে গেলেও শিক্ষা গ্রহণে তাকে তার শারীরিক অক্ষমতা আটকাতে পারেনি। ধাতব বক্সের ভেতর বাতাস শূন্য করে সেখানে অক্সিজেন ঢুকিয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখা হতো। পলের পলকা শরীরের হয়তো মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পলদের মতো মানুষদের কখনও মৃত্যু হয় না। দশকের পর দশক পোলিও পলরা ‘অসুস্থ’ মানুষের জন্য হয়ে ওঠেন অনুপ্রেরণার দেবদূত। পল আলেকজান্ডাররা আসেন সকল চ্যালেঞ্জ জয় করতে। মানুষকে দেখিয়ে দিতে যে, কোনোকিছুই অসাধ্য নয়।
/এএম
Leave a reply