নাটকীয়তায় ঠাসা, রোমাঞ্চে ভরা এক লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ১২০ মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে ব্যবধান গড়ে দেন রেড ডেভিলদের তরুণ ফরোয়ার্ড আমাদ দিয়ালো। তাতেই এফএ কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে লিভারপুলকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠেছে এরিক টেন হাগের শিষ্যরা।
রোববার (১৭ মার্চ) নিজেদের ঘরের মাঠ ওল্ড ট্রাফোর্ডে লিভারপুলকে আতিথ্য জানায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণের পসরা সাজায় রেড ডেভিলরা। ম্যাচের ২য় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় ইউনাইটেড; কিন্তু ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়েও দুর্বল শট নিয়ে হতাশ করেন অ্যারন ওয়ান-বিসাকা। চতুর্থ মিনিটে আবারও স্বাগতিকদের আক্রমণ, এবার মার্কাস র্যাশফোর্ডের জোরালো শট ঝাঁপিয়ে ফেরান অলরেড গোলরক্ষক কুইভিন কেলেহার।
ম্যাচের ১০ম মিনিটে ম্যাকটমিনের গোলের এগিয়ে যায় ইউনাইটেড। র্যাশফোর্ডের পাস পেয়ে আলেহান্দ্রো গারনাচো কোনাকুনি শট নেন, গোলরক্ষক কেলেহার ঝাঁপিয়ে ঠেকালেও দলকে বিপদমুক্ত করতে পারেননি। তার হাতে লেগে একটু ওপরে ওঠা বল গোলমুখে ফাঁকায় পেয়ে অনায়াসে জালে পাঠান ম্যাকটমিনে। একের পর এক আক্রমণের পসরা সাজিয়ে প্রথম আধা ঘণ্টায় গোলের উদ্দেশ্যে আটটি শট নিয়ে ছয়টিই লক্ষ্যে রাখে ইউনাইটেড। সমানতালে পাল্টা আক্রমণ করছিল লিভারপুল, যদিও তেমন নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না ক্লপের শিষ্যরা।
ম্যাচের ৪৪তম মিনিটে সমতায় ফিরে লিভারপুল। আর্জেন্টাইন তারকা ম্যাক অ্যালিস্টারের শট প্রতিপক্ষের একজনের পায়ে লেগে সামান্য দিক পাল্টে ঠিকানা খুঁজে পায়। ওনানা ঝাঁপিয়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও রুখতে পারেননি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে আবারও ইউনাইটেডের জালে বল পাঠিয়ে উল্লাসে মাতে লিভারপুল। বাঁ দিক থেকে দারউইন নুনেসের কোনাকুনি জোরালো শট দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন ওনানা; কিন্তু বল চলে যায় ছয় গজ বক্সের মুখে সালাহর পায়ে। ঠাণ্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিখুঁত শটে দলকে এগিয়ে নেন মিশরের স্ট্রাইকার। ২-১ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ক্লপের শিষ্যরা।
বিরতির পর খেই হারিয়ে ফেলে ইউনাইটেড। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ২৫ মিনিটে সেভাবে আক্রমণ শাণাতে পারেনি তারা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের তিন মিনিট বাকি থাকতে চমৎকার এক গোলে ম্যাচের চিত্রপট পাল্টে দেন গাসমুস হয়লুনের বদলি নামা আন্তোনি। বক্সে জটলার মধ্যে বল পেয়ে ঘিরে থাকা প্রতিপক্ষের একাধিক খেলোয়াড়ের মধ্যে থেকে ডান পায়ের শটে সমতা টানেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে সমতা থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ম্যাচের ১০৫তম মিনিটে তরুণ ইংলিশ মিডফিল্ডার এলিয়টের গোলে আরও একবার এগিয়ে যায় লিভারপুল। তবে ১১২তম মিনিটে সমতা টেনে রেড ডেভিলদের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন র্যাশফোর্ড; ম্যাকটমিনের পাস বক্সে পেয়ে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিট পেরিয়ে শুরু হলো যোগ করা সময়। সম্ভাব্য টাইব্রেকারের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল লড়াই। আর তখনই অলরেডদের স্তব্ধ করে দিলেন আমাদ। প্রতিপক্ষের একটি কর্নার রুখে দিয়ে প্রতি-আক্রমণে ওঠে ইউনাইটেড। ক্ষিপ্র গতিতে বল পায়ে এগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন গারনাচো, এরপর তিনি বল বাড়ান পাশে আমাদকে। ঠাণ্ডা মাথায় বাঁ পায়ের শটে দলকে সেমি-ফাইনালে তোলেন কোত দি ভোয়ার ২১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
৭ গোলের থ্রিলার শেষ হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে সেমিফাইনালের ড্রও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ইউনাইটেড পেল আসরের চমক কভেন্ট্রি সিটিকে। আরেক ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি খেলবে চেলসির বিপক্ষে। শেষ চারের দুটিই ম্যাচই হবে আগামী ২০ এপ্রিল।
/আরআইএম
Leave a reply