সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ উইকেটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে জানিথ লিয়ানাগের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ২৩৫ রানের লড়াকু পুঁজি সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। রান তাড়ায় তানজিদ হাসান তামিমের ৮৪ ও রিশাদ হাসানের ১৮ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৫৮ বল হাতে রেখে জয় ছিনিয়ে নেয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ২০২১ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫০ ওভারের সিরিজ জিতল টাইগাররা।
সোমবার (১৮ মার্চ) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার দেয়া ২৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দেখেশুনে করেন বিজয়। তবে আরেক প্রান্তে চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি ছোটান তানজিদ হাসান। ফিল্ডিংয়ের সময় চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন সৌম্য সরকার। ইনিংস শেষে জানা গেছে কাঁধে চোট পেয়েছেন টাইগার ওপেনার। তার পরিবর্তে ওপেন করতে নামেন কনকাশন বদলি তানজিদ হাসান তামিম। সুযোগ পেয়েই সেটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন তিনি।
নবম ওভারে লাহিরু কুমারার অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি হাওয়ায় ভাসিয়ে ড্রাইভ করেন এনামুল হক। কিন্তু ত্রিশ গজ পার করতে পারলেন না। কভারে লাফিয়ে উঠে দারুণ ক্যাচ নিলেন আভিশকা ফার্নান্দো।২২ বলে ১২ রান করে সাজঘরে ফেরেন বিজয়। এনামুল হক বিজয়ের পর নাজমুল হোসেন শান্তকেও আউট করেছেন লাহিরু কুমারা। তার বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫ বলে ১ রান করে আউট হন তিনি। ৫৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর বাংলাদেশের হয়ে লড়াই চালান তাওহিদ হৃদয় ও তানজিদ তামিম। এই দু’জনের ৪৯ রানের জুটি ভাঙে হৃদয় ফিরলে। তাকেও সাজঘরে ফেরান কুমারা। শান্তকে এই পেসার করেছিলেন শর্ট বল। সেই বলেই ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ তুলে আউট হন হৃদয়। তার ৩৬ বলের ইনিংস থামে ২২ রানে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও পা দিয়েছেন কুমারার ফাঁদে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে মাহমুদউল্লাহ খোঁচা দিয়ে আউট হন ৪ বলে ১ রান করেই।
দারুণ ব্যাটিং করে সেঞ্চুরির দিকেই এগোচ্ছিলেন তানজিদ তামিম। আগের ওভারগুলোতে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ওপর চড়াও হয়েছিলেন তিনি। এবার তার হাতেই উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন এই ওপেনার। বড় শট খেলতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছে ৮১ বলে ৮৪ রানের ইনিংস। এরপর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে যোগ দেন শেষ স্বীকৃত ব্যাটার মেহেদী হাসান মিরাজ। এই দু’জনের ব্যাটে ভর করেই রানের চাকা সচল রাখে বাংলাদেশ।
এই জুটিতেই জয়ের পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। মুশফিক ও মিরাজের ৪৮ রানের জুটি ভেঙেছেন হাসারাঙ্গা। এই লেগ স্পিনারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেতে প্রমোদ মাদুশানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। পরের বলে এসেই স্লগ সুইপ করে দারুণ এক ছক্কা মারেন রিশাদ হোসেন। হাসারাঙ্গার সেই ওভার থেকে দুই ছক্কা ও এক চারে রিশাদ নেন ১৬ রান।
এই রিশাদই ঘুরিয়ে দেন ম্যাচের মোমেন্টাম, জয়ের লক্ষ্য করে দেন সহজ। হাসারাঙ্গার পরের ওভারে ৬, ৬, ৪, ৪, ৪ হাঁকিয়ে আরও ২৪ রান তুলে নেন। তাতেই লক্ষ্যের খুব পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন মুশফিক। মাত্র ১৮ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৮ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলে জয়ের অন্যতম নায়ক রিশাদ হোসেন। মুশফিকুর রহিম অপরাজিত থাকেন ৩৭ রানে।
১৮ বলে ৪৮ রানের ক্যামিও খেলে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটের জয় এনে দিয়েছেন তিনি। ৩৬ বলে ৩৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিমও। এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে টাইগাররা।
এর আগে এই ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি কুশল মেন্ডিস। তবে অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে ঠিক প্রমান করার আগেই সাজঘরে ফিরে যান দুই ওপেনার। স্কোরবোর্ডে ১৫ রান তুলতেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন পাথুম নিসাঙ্কা ও আভিশকা ফার্নান্ডো।
নতুন বলে লঙ্কানদের চোখ কপালে তোলে দেন তাসকিন আহমেদ। দুটি উইকেটই নেন এই পেসার। তবে জোড়া আঘাত থেকে লঙ্কানদের উদ্ধারের দায়িত্ব দেন কুশল মেন্ডিস ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। এই দুজনের ব্যাটে ধাক্কা সামাল দিয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করে শ্রীলঙ্কা।
তবে পাওয়ার প্লে শেষ হতে না হতেই মুস্তাফিজুর রহমানকে উইকেট দিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ১৫ বলে ১৪ রান করে ফেরেন সাদিরা। সঙ্গী হারালেও চারিথ আসালঙ্কাকে নিয়ে লড়তে থাকেন লঙ্কান অধিনায়ক।
এই জুটিতে ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় থাকলেও বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন রিশাদ হোসেন। কুশল মেন্ডিসকে ২৯ রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় করেন এই লেগ স্পিনার। ৪ উইকেট হারানো লঙ্কানদের পক্ষে এরপরের লড়াইটা ছিল বড় কঠিন।
আসালঙ্কা ও জানিথ লিয়ানাগে মিলে দলকে ১০০’র ঘরে নিয়ে যান। তবে উইকেতে থিতু হয়েও মুস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে যান আসালঙ্কা। ৩৭ রানে তিনিও ফেরেন মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে। এরপর মেহেদি হাসানকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ১৮ বলে এক রানে ফেরেন দুনিথ ভেল্লালাগে।
ব্যাটারদের এই আসা-যাওয়ার মিছিলে লড়াই চালিয়ে যান জানিথ। ৬৫ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। তবে দলীয় রান দেড়শ পার হতেই ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে বিদায় করেন মিরাজ। তবে সঙ্গী হারিয়েও যেন থেমে যাননি জানিথ। নীচের দিকের ব্যাটারদের নিয়ে স্কোরবোর্ডে রান তুলতে থাকেন এই ব্যাটার।
দলকে চোখের পলকে নিয়ে যান ২০০’র ঘরে। নিজেও হাঁটতে থাকেন সেঞ্চুরির পথে। তবে মুস্তাফিজ চোট পাওয়ায় তার বদলে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন সৌম্য সরকার। মাহেশ থিকসানাকে বিদায় করেন তিনি।
সঙ্গী হারালেও নীজের মাইলফলকের দিকে হাঁটতে থাকেন লিয়ানাগে। শেষ ওভারে তাসকিনকে কভারের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ব্যাটার। এটি তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। যদিও শেষের দিকে ২৩৫ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন এই লঙ্কান।
/আরআইএম
Leave a reply