যশোরে এস এম বায়েজিদ হাসান (৩২) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (২৪ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানার অদূরে যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে মুল্লুক চাঁদের চালের আড়ত থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহত বায়েজিদ হাসান খুলনা শহরের সোনাডাঙ্গা থানাধীন বানরগাতি আল আমিন মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি বিএনপি নেতা মুল্লুক চাঁদের ঢাকা অফিসে চাকরি করতেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নৈশ প্রহরীদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে রাত ৩টার দিকে মুল্লুক চাঁদের বাড়ি সংলগ্ন চালের আড়তে যায় পুলিশ। সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। পরে জানা যায়, ওই যুবকের নাম বায়েজিদ। তিনি পেশায় একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ার) এবং মুল্লুক চাঁদের ঢাকা অফিসে কর্মরত ছিলেন। হত্যাকারীদের শনাক্তের কাজ পুলিশ।
পুলিশ ও বায়েজিদ হাসানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও তার ভাই সঞ্জয় চৌধুরীর ভবন নির্মাণের কাজ চলছে ঢাকার এক আবাসিক প্রকল্পে। প্রকৌশলী বায়েজিদ ওই ভবনের নির্মাণকাজ দেখভাল করতেন। ভবনের সরঞ্জাম কেনাকাটার পাঁচ লাখ টাকার অসংগতি ধরা পড়ার পর গা ঢাকা দেন বায়েজিদ। পরে খুলনার বাড়িতে চলে যান তিনি। সম্প্রতি ওই টাকার বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের মধ্যস্থতায় সালিসও হয়। রোববার দুপুরে রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও সঞ্জয় চৌধুরীর লোকজন খুলনার বাড়ি থেকে বায়েজিদকে যশোরে তুলে নিয়ে আসেন।
রাত চারটার দিকে পুলিশের কাছ থেকে ছেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন নিহত বায়েজিদের মা দিলরুবা বেগম। তিনি বলেন, রোববার দুপুর ১টার দিকে মুল্লুক চাঁদের কর্মচারী রাজু, রাজন, শহিদুলসহ ৫-৬ জন বায়েজিদকে খুলনার বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। তারা খুলনা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের কাছে তাকে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানায়। ছেলের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, যশোরের কেশবপুরে তারা ইফতার করেছে। সেই সময় ছেলে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে। রাত ১২টার দিকে ছেলে ফোনে জানায়, তারা তাকে আর বাঁচতে দেবে না।
রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে মুল্লুক চাঁদের চালের আড়তের নৈশপ্রহরী মোজহার হোসেন জানান, তিনি রাত ১০টার দিকে আড়তে আসেন। এ সময় ওই ছেলেটিকে আড়তের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। লেবারদের কাছে জানতে চাইলে জানান, তাকে মারধর করা হয়েছে। ঠিক হয়ে গেলে চলে যাবে। এরপর লেবাররা যে যার মতো বাড়ি চলে যান। পরে তিনি বিষয়টি ম্যানেজারকে জানালে তিনিও একই কথা বলেন। এরপর তিনি আড়তে তালা দিয়ে বাইরে এসে অবস্থান নেন। পুলিশ গেলে তিনি দরজা খুলে দেন। এ সময় তারা ওই যুবককে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং নিয়ে যায়।
এদিকে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) জুয়েল ইমরান। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বায়েজিদকে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। পাওনা টাকা নিয়ে একটি বিরোধের তথ্য আমরা পেয়েছি। তবে কী কারণে এবং কে কে এ হত্যায় জড়িত, তা শনাক্তে তদন্ত চলছে। দ্রুত হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে মুল্লুক চাঁদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তিনি পাওনা টাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কিন্তু হত্যা কে বা কারা করেছে, সে বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ছাড়া মুল্লুক চাঁদ যশোরের বাইরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন। এ ঘটনার নেপথ্যের কাহিনী খুঁজতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে বলে জানায় পুলিশ।
/এএম
Leave a reply